হিজরি নববর্ষের গুরুত্ব ও মহররম মাসের তাৎপর্য

ইসলামের বিধিবিধান হিজরি সন ও চান্দ্র তারিখের সঙ্গে সম্পর্কিত। ধর্মীয় আচার–অনুষ্ঠান, আনন্দ উৎসবসহ সব ক্ষেত্রেই মুসলিম উম্মাহ হিজরি সনের ওপর নির্ভরশীল। মানুষের প্রয়োজনে ব্যবহারোপযোগী করে আল্লাহ তাআলা সময়কে প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করেছেন। যেমন দিন, রাত, মাস, বছর ইত্যাদি। বছরকে আমরা সাল বা সন বলি। 

সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর আবর্তনের সময়কালকে সৌরবর্ষ এবং পৃথিবীর চারদিকে চাঁদের আবর্তনের সময়কালকে চান্দ্রবর্ষ বলা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর সূর্য ও চন্দ্র হিসাব নিমিত্তে।’ (সুরা-৫৫ রহমান, আয়াত: ৫) 

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর হিজরতের বছরকে ইসলামি সন গণনার প্রথম বছর ধরা হয়েছে বলে এটি হিজরি সন নামে পরিচিত। হিজরি সন চান্দ্রবর্ষ ও সৌরবর্ষ উভয় হিসেবে গণনা করা হয়। সৌরবর্ষে ৩৬৫ বা ৩৬৬ দিনে বছর হয়, চান্দ্রবর্ষ ৩৫৪ বা ৩৫৫ দিনে বছর হয়। ইসলামি পরিভাষা ও শরিয়তের ফিকহ বিধানগুলোয় বছর বলতে চান্দ্রবর্ষকেই বোঝানো হয়। 

দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.)–এর খিলাফতের সময় গোটা আরব ভূখণ্ড ইসলামি খিলাফতের অন্তর্ভুক্ত হয়। বসরার গভর্নর হজরত আবু মুসা আশআরী (রা.) একটি পত্রে খলিফা উমর (রা.)-কে জানান, খলিফা তাঁদের কাছে যেসব চিঠি পাঠাচ্ছেন, সেগুলোয় সন–তারিখের উল্লেখ নেই, এতে তাঁদের অসুবিধা হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে খলিফা উমর (রা.) একটি সন চালুর ব্যাপারে সচেষ্ট হন। ১৬ হিজরি সনের শাবান মাসে খলিফা হজরত উমর (রা.)-এর কাছে একটি দাপ্তরিক পত্রের খসড়া পেশ করা হয়, পত্রটিতে মাসের উল্লেখ ছিল কিন্তু সনের উল্লেখ ছিল না। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন খলিফা বললেন, পরবর্তী কোনো সময়ে তা কীভাবে বোঝা যাবে যে এটি কোন সনে পেশ করা হয়েছিল? অতঃপর তিনি সাহাবায়ে কিরাম ও অন্যান্য শীর্ষ পর্যায়ের জ্ঞানী-গুণীদের পরামর্শে হিজরতের ১৬ বছর পর ১০ জুমাদাল উলা মোতাবেক ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে হিজরি সন প্রবর্তনের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। হিজরতের বছর থেকে সন গণনার পরামর্শ দেন হজরত আলী (রা.)। পবিত্র মহররম মাস থেকে ইসলামি বর্ষ শুরু করার পরামর্শ প্রদান করেন হজরত উমর (রা.)। (বুখারি, আবু দাউদ; আল-ফারুক, শিবলী নোমানী)

মহররম শব্দের অর্থ সম্মানিত। ইসলামের ইতিহাসে এই মাসে এমন কতগুলো উল্লেখযোগ্য স্মৃতি বিজড়িত, যে স্মৃতিগুলোর সম্মানার্থেই এই মাসকে মহররম বা সম্মানিত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআন কারিমে রয়েছে ‘আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর নিকট মাসের সংখ্যা ১২, এর মধ্যে ৪টি মাস সম্মানিত।’ (সুরা-৯ তাওবা, আয়াত: ৩৬)

মহররম শব্দের অর্থ সম্মানিত। ইসলামের ইতিহাসে এই মাস এমন কতগুলো উল্লেখযোগ্য স্মৃতি বিজড়িত, যে স্মৃতিগুলোর সম্মানার্থেই এই মাসকে মহররম বা সম্মানিত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে

যাঁরা বিশেষভাবে এ মাসগুলোয় ইবাদত–বন্দেগি করবেন, আল্লাহ তাআলা তাঁদের বাকি আট মাস ইবাদত করার তাওফিক দান করবেন এবং যাঁরা এ চার মাস নিজেকে গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন, তাঁদের জন্য বাকি আট মাস যাবতীয় পাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকা সহজতর হবে। হাদিস শরিফে চান্দ্রবর্ষের ১২ মাসের মধ্যে মহররমকে ‘শাহরুল্লাহ’ বা ‘আল্লাহর মাস’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে উল্লিখিত ‘অতি সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ চার মাস’ বলতে জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব—এই চার মাসকেই বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে মাজহারি)। তাই হিজরি সন বা ইসলামি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহররম। 

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]