এ বছর কমেছে হজযাত্রী নিবন্ধন

পবিত্র কাবা শরিফফাইল ছবি

পবিত্র হজ পালনে এ বছর নিবন্ধনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে চার দফা। তবে সৌদি আরবের দেওয়া কোটার প্রায় ৬৩ শতাংশ এখন পর্যন্ত পূরণ হয়েছে। এ অবস্থায় মঙ্গলবার নিবন্ধনের সময়সীমা শেষ হচ্ছে।

হজ পালনে যেতে আগ্রহী কয়েকজন ও কিছু এজেন্সির মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছর ডলারের মূল্য, হজের ব্যয় ও সৌদি আরবে বাড়িভাড়া বেড়েছে। পাশাপাশি পবিত্র ওমরাহ পালনে আগ্রহ বেড়েছে মানুষের। সব মিলিয়ে হজযাত্রী নিবন্ধন কমেছে।

আরও পড়ুন

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি বছরের হজযাত্রী নিবন্ধনের শেষ সময় ৬ ফেব্রুয়ারি। পরদিন হজযাত্রীর সংখ্যা সৌদি সরকারকে জানিয়ে বাকি কোটা ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ হজযাত্রীর কোটা রয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৭৯ হাজার ৮৬২ জন। তাঁদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪ হাজার ১৬৫ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭৫ হাজার ৬৯৭ জন।
প্রাক্‌-নিবন্ধন করা ব্যক্তিদের ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ব্যাংকে বাকি টাকা জমা দিয়ে চূড়ান্ত নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। চূড়ান্ত নিবন্ধন শুরু হয় গত ১৫ নভেম্বর, যা গত ১০ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রথমে সময় বাড়ানো হয় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে আরও কয়েক দফা বাড়ানো হয়।

জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) মতিউল ইসলাম বলেন, কেউ কেউ পরে হজ পালন করবেন, এমন ইচ্ছার কারণে ওমরাহর যাত্রী বেড়েছে। পবিত্র মক্কা ও মদিনায় পুরোনো বাড়িগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। পুরোনো বাড়ির ভাড়া ছিল কম, নতুনগুলোর বেশি। মক্কার মিসফালা এলাকার সব বাড়ি ভেঙে নতুন করে করা হচ্ছে। মদিনায়ও বাঙালিপাড়াখ্যাত এলাকার সব বাড়ি ভাঙা হচ্ছে।

বাংলাদেশের জন্য হজযাত্রী কোটা ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন (২০২২ সালে করোনার কারণে ছিল ৬০ হাজার)। মাঝে দুই বছর নিবন্ধন বন্ধ ছিল। ২০১৭ ও ২০২২ সালে কোটা পূরণ হয়। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে যান ১ লাখ ২৬ হাজার ৭৯৮ জন। ২০১৯ সালে ১ লাখ ২৬ হাজার ৯২৩। আর গত বছর গেছেন ১ লাখ ২২ হাজার ৫৫৮ জন। ওই বছরও নিবন্ধনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল কয়েক দফা।

হজের খরচের পুরোটা ডলারনির্ভর আর বেশির ভাগ খরচ হয় সৌদি আরব অংশে। যেমন ২০১৯ সালে খরচ ছিল ৫ হাজার ডলার। ডলার ছিল ১০০ টাকা। এখন সেই খরচ ৬ হাজার ডলার, দাম ১২৫ টাকা।
হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদত হোসাইন

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদত হোসাইন বলেন, জাতীয় নির্বাচনের কারণে অনেকে হজ পালনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। করোনার পর ৬৫-ঊর্ধ্ব ব্যক্তিদের হজ পালনে যেতে বাধা ছিল ও করোনা-পরবর্তী সময় ওমরাহর যাত্রী বেড়ে যায়। তিনি বলেন, হজের খরচের পুরোটা ডলারনির্ভর আর বেশির ভাগ খরচ হয় সৌদি আরব অংশে। যেমন ২০১৯ সালে খরচ ছিল ৫ হাজার ডলার। ডলার ছিল ১০০ টাকা। এখন সেই খরচ ৬ হাজার ডলার, দাম ১২৫ টাকা।

জানতে চাইলে রায়হান এয়ার ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা অংশীদার মো. মাহফুজুর রহমান মজুমদার বলেন, ‘অনেকে ওমরাহ (১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকায়) করে নেওয়ায় হজ পালনে এখনই আগ্রহী হচ্ছেন না। হজযাত্রীরা হজের খরচ বেশি হওয়ায় ওমরাহর দিকে ঝুঁকেছেন। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো না।’ তিনি আরও বলেন, প্রাক্‌-নিবন্ধিত হজযাত্রীদের ৩০ শতাংশ ফোনে কথা বলার পর বলেছেন, তাঁরা এবার যেতে পারবেন না। ২০ শতাংশ নিবন্ধন বাতিলের আবেদন করেছেন।

নিজ প্রতিষ্ঠানের চিত্র তুলে ধরে মাহফুজুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত ৮১ জন চূড়ান্ত নিবন্ধন করেছেন। অথচ আরও ১৪০ জন প্রাক্‌-নিবন্ধিত রয়েছেন। বিমানভাড়া কমালে হজের খরচ কমে যেত।

অনেকে ওমরাহ (১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকায়) করে নেওয়ায় হজ পালনে এখনই আগ্রহী হচ্ছেন না। হজযাত্রীরা হজের খরচ বেশি হওয়ায় ওমরাহর দিকে ঝুঁকেছেন। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো না।
রায়হান এয়ার ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা অংশীদার মো. মাহফুজুর রহমান মজুমদার

খরচ বেড়েছে অনেক

গত বছর পবিত্র হজ পালনের খরচ অনেক বেড়ে যায়। ২০২২ সালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় তিনটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। প্যাকেজ-১-এ খরচ ছিল ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা, প্যাকেজ-২-এ ৩ লাখ ৬০ হাজার ও প্যাকেজ-৩-এ ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা। বেসরকারি প্যাকেজে ছিল ৩ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।

২০২২ সালের পর এক বছরের মাথায়ই খরচ বেড়ে যায় অনেক। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের খরচ নির্ধারণ করা হয় ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা।

বর্তমানে হজে যেতে প্রথম ধাপে ৩১ হাজার টাকা দিয়ে প্রাক্‌-নিবন্ধন করতে হয়। সারা বছরই প্রাক্‌-নিবন্ধন করা যায়। মূল নিবন্ধনের জন্য ন্যূনতম ২ লাখ ৫ হাজার টাকা জমা দিতে হয়। বাকি টাকা পরিশোধ করতে হয় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে।

এবার হজের খরচ কমিয়ে গত নভেম্বরে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। সাধারণ প্যাকেজে হজের খরচ ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা ও বিশেষ প্যাকেজে ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সাধারণ প্যাকেজ ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা ও বিশেষ প্যাকেজ ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করেছে হাব।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। ১ মার্চ হজের ভিসা ইস্যু শুরু হবে, চলবে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত। ৯ মে সৌদি আরবে হজযাত্রী যাওয়া শুরু হবে।