সালামের জবাব কীভাবে দেবেন

ছবি: পেক্সেলস

ইসলামে সালাম শুধু ভদ্রতা বা সামাজিক সম্ভাষণ নয়; এটি একটি ইবাদত, দোয়া এবং পারস্পরিক সম্পর্ক মজবুত করার অন্যতম মাধ্যম। সালাম দেওয়ার মতোই সালামের জবাব দেওয়াও ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান।

সালামের অর্থ ও গুরুত্ব

“আসসালামু আলাইকুম” অর্থ— তোমার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। এর মাধ্যমে একজন মুসলিম অন্য মুসলিমের জন্য শান্তি, নিরাপত্তা ও কল্যাণ কামনা করে।

কোরআনে আল্লাহ তাআলা সালামের জবাব দেওয়া সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, “আর যখন তোমাদের সালাম দেওয়া হয়, তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দিয়ে উত্তর দাও অথবা অন্তত সমপর্যায়ে জবাব দাও।” (সুরা নিসা, আয়াত: ৮৬)

এই আয়াত প্রমাণ করে—

  • সালামের জবাব দেওয়া আবশ্যক

  • উত্তমভাবে জবাব দেওয়া অধিক ফজিলতপূর্ণ

আরও পড়ুন

সালামের জবাব দেওয়ার আবশ্যকতা

ইসলামে সালামের জবাব দেওয়া ওয়াজিব। অর্থাৎ কেউ সালাম দিলে ইচ্ছাকৃতভাবে জবাব না দেওয়া গুনাহ।

যদি একজন ব্যক্তি সালাম দেয়, তাহলে—

  • নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে সালাম দিলে তার জবাব দেওয়া ব্যক্তিগতভাবে আবশ্যক

  • একাধিক ব্যক্তিকে সালাম দিলে তাদের মধ্য থেকে একজন জবাব দিলেই দায়িত্ব আদায় হয়ে যায়। (ইমাম নববী, শারহ সহিহ মুসলিম, দারুল ফিকর, বৈরুত)

সালামের জবাবের সঠিক রূপ

সালামের জবাব সালামের স্তরের ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে।

যদি কেউ বলে, আসসালামু আলাইকুম। তাহলে জবাব হবে, ওয়াআলাইকুমুস সালাম। এটি ন্যূনতম ও গ্রহণযোগ্য জবাব।

উত্তম ও পূর্ণ জবাব হলো, ওয়াআলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আর সর্বোত্তম জবাব, ওয়াআলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

রাসুল (সা.) বলেছেন, “এক ব্যক্তি এসে বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম।’ নবীজি (সা.) তার জবাব দিলেন, তারপর বললেন, দশ নেকি।

আরেকজন বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।’ তিনি বললেন, বিশ নেকি। আরেকজন বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।’ তিনি বললেন, ত্রিশ নেকি।” (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৬৮৯)

আরও পড়ুন

সালামের জবাব কখন দেওয়া যাবে না

কিছু বিশেষ অবস্থায় সালামের জবাব মুখে দেওয়া যাবে না, যেমন:

  • টয়লেট ব্যবহারের সময়

  • খুতবা শোনার সময়

  • নামাজ আদায়রত অবস্থায় (তবে নামাজ শেষে জবাব দিতে পারেন)। (ইবনে আবিদিন, রদ্দুল মুহতার, দারুল ফিকর, দামেস্ক)

অমুসলিমের সালামের জবাব

যদি কোনো অমুসলিম “আসসালামু আলাইকুম” বলে, তখন জবাব হবে: ওয়া আলাইকুম। রাসুল (সা.) বলেছেন, “যখন আহলে কিতাব তোমাদের সালাম দেয়, তখন তোমরা বলো, ওয়া আলাইকুম।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬২৫৮)

লিখিত সালামের জবাব

চিঠি, বার্তা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সালাম পেলে তার জবাব দেওয়াও একইভাবে আবশ্যক। লিখিত সালামের জবাব লিখিতভাবেই দেওয়া জরুরি নয়, বরং মৌখিকভাবেও দেওয়া।

সালামের জবাব দেওয়া ইসলামের সৌন্দর্য ও সামাজিক শিষ্টাচারের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এটি যেমন আল্লাহর নির্দেশ পালন, তেমনি মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের একটি শক্তিশালী মাধ্যম।

তাই সালাম পেলে অবহেলা না করে অন্তত সমপর্যায়ে, আর সম্ভব হলে তার চেয়েও উত্তমভাবে জবাব দেওয়াই একজন সচেতন মুসলিমের কর্তব্য।

আরও পড়ুন