অফিসে সন্ধ্যার সময় হঠাৎ করে মোবাইলে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ দেখে চমকে উঠলাম: ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, হাজি সাহেব। আমি আপনার হজ গাইড। দয়া করে একটু ফোন দিয়েন। আপনার ফ্লাইট ২১ তারিখ।’ বলে কি? সেদিন ১৫ মে। এই পাঁচ দিনে কীভাবে কী করব? তাছাড়া আমি তো শেষের দিকে যাওয়ার জন্য আবেদন করে রেখেছি। তাই অনেক মেডিকেল চেকআপসহ বেশ কিছু কাজ বাকি। গাইডকে ফোন করে বিষয়টা জানালেন। তাঁর অবশ্য কিছু করার নেই। তাঁকে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাদের সঙ্গেই তিনি যোগাযোগ করছেন।
অফিসের কাজ চুলোয় ওঠে আর কি! তবু মাথা ঠান্ডা রেখে হজ পরিচালক সাইফুল ইসলাম সাহেবকে ফোন করে বিষয়টা জানালাম। তিনি বললেন যে শর্ট প্যাকেজ সীমিত আসন থাকায় আমাদের দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাঁকে জানালাম যে ১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী। তার আগে যেতে পারব না। তিনি পরদিন সকালে সরাসরি তাঁর অফিসে যেয়ে কথা বলতে বললেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট সংশ্লিষ্ট একজন যুগ্ম-সচিব আমার বেশ পরিচিতি। তাঁকে ফোন করে অনুরোধ করলাম যে আমাদের ফ্লাইটটা বাজেটের পরে দেওয়ার জন্য তাঁর তরফ থেকে চেষ্টা করতে। তিনি আমাকে জানালেন যে যতটা সম্ভব তিনি করবেন।
পরদিন সকালে ছুটলাম আশকোনায়। এর মধ্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম সাহেবকে বিষয়টি জানিয়ে খুদে বার্তা পাঠালাম। তিনি সজ্জন মানুষ। বার্তা পেয়ে ফোন করে কথা বললেন এবং জানালেন যে জুন মাসের ২ বা ৩ তারিখের ফ্লাইটে দেওয়ার বিষয়টি দেখবেন।
হজ ক্যাম্পে গিয়ে প্রথমে পরিচালককে পেলাম না। তাই তাঁর কার্যালয়ের কর্মীরা আমার লেখা আবেদন রাখতে চাইল না। আমি আবার দোতলায় অবস্থিত বিজনেস অটোমেশনের কার্যালয়ে গেলাম। এই প্রতিষ্ঠানটি হজ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক কাজ করছে । এর প্রধান জনাব বজলুল বিশ্বাসকে বিষয়টি অবহিত করলাম। উনি বললেন যে হজ পরিচালকের দপ্তর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদনটি না এলে তাঁদের পক্ষে কিছু করা কঠিন। তবে তিনি অনুলিপিটি হাজিদের ফ্লাইট বরাদ্দের কাজে নিয়োজিত একজন কর্মীকে রেখে দিতে বললেন। তাঁকে এও বললেন যে আমাদেরটা যেন ২ বা ৩ তারিখে দেওয়া যায়, তা খেয়াল রাখতে।
জোহরের নামাজের পর হজ পরিচালক এলে তাঁর সঙ্গে সরাসরি দেখা করে আবেদনটি দিলাম। তিনি তাৎক্ষণিক তাতে লিখে দিলেন যেন আমাদের ফ্লাইট ২ বা ৩ তারিখে দেওয়া হয়। তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেড়িয়ে এলাম। আর তাঁর দপ্তরের সিল স্বাক্ষরযুক্ত আবেদনের অনুলিপিটি ছবি তুলে মতিউল ইসলাম সাহেবকে পাঠালাম। এছাড়া আমাদের ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সিনিয়র রিপোর্টার রেজাউল করিমকেও হোয়াটসঅ্যাপে ছবি পাঠিয়ে বললাম যে সচিবালয়ে অতিরিক্ত সচিবের দপ্তরে যেন একটা কপি জমা দেয়। ও ওটা প্রিন্ট করে বিকেলের আগেই জমা দিয়ে দিল। বলা যায়, জোর তদবিরই করলাম উপায়হীন হয়ে।
পরের দু’দিন একটু উৎকণ্ঠায় কাটল। আল্লাহর কাছে বাববার সাহায্য চাইতে লাগলাম। তৃতীয় দিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই যুগ্ম সচিব ভাই ফোন করে জানালেন যে আমাদের ২ তারিখের শেষ ফ্লাইটে দেওয়া হয়েছে। পরদিন আমার সহধর্মিণী কল সেন্টারে ফোন করেও একই তথ্য পেলেন। আলহামদুলিল্লাহ। যাঁরা এটা করে দিতে সহায়তা করেছেন, তাঁদের সবার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করলাম।
দুই.
২২ মে তারিখে আমাদের জন্য নির্ধারিত গাইড আক্তার হোসেন সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আমাদের যুক্ত করলেন। প্রতি ৪৪ জন সরকারি হাজির জন্য একজন সরকারি নিযুক্ত গাইড নিয়োগ করা হয়েছিল। এই গ্রুপে গাইড যাবতীয় তথ্যাদি হালনাগাদ করতে থাকেন।
এর মধ্যে আমরা ইবনে সিনা থেকে নির্ধারিত মেডিকেল টেস্টগুলো করিয়ে ফেললাম। তারপর রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে গেলাম মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা গ্রহণ করার জন্য। টিকা নেওয়ার অনলাইনে আমাদের প্রত্যেকের আলাদা মেডিকেল প্রোফাইল তৈরি হলো।
দু’দিন পর খুদে বার্তা পেয়ে নির্ধারিত ওয়েবলিংক থেকে সেগুলো নামিয়ে প্রিন্ট করে নিলাম। এদিকে আমার সহধর্মিণীর একবার বারডেমে নির্ধারিত চিকিৎসককে একবার দেখানোর প্রয়োজন ছিল। এক সন্ধ্যায় তাঁকে টেস্ট রিপোর্টসহ তাঁকে দেখিয়ে যাবতীয় পরামর্শ নিয়ে নিলাম। তারপর বারডেম থেকে বেড়িয়ে আজিজ সুপার মার্কেটে গেলাম চা খেতে। চা খেয়ে রিকশায় চেপে যখন বাসার কাছে এলাম, তখন টের পেলাম আমাদের মেডিকেল ফাইলপত্র ওই চায়ের দোকানে ফেলে এসেছি। দ্রুত মাথায় চিন্তা চলল কীভাবে ওগুলো উদ্ধার করব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের লাইব্রেরির সহকারী টিপু আমার বহুদিনের পরিচিতি। ক্যাম্পাসেই থাকে। ওকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানালাম। ও আবার কাঁটাবনের একটি দোকানে ওর পরিচিতি একজনের মাধ্যমে দ্রুত সেই চায়ের দোকান থেকে ফাইলপত্রগুলো উদ্ধার করে রাতেই বাসায় পৌঁছে দিল। আসলে হজে যাওয়ার প্রস্তুতি পর্বে যতবার কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছে, আল্লাহর তরফ থেকে তা দ্রুত সমাধানের হুকুমও হয়ে গেছে।
আসজাদুল কিবরিয়া: লেখক ও সাংবাদিক।