হ্যাজেলটন মনে করেন, ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মুহাম্মদের জীবন ও কর্মের ঐতিহাসিক গুরুত্ব এতটাই যে প্রায় কারো সঙ্গেই তা তুলনীয় নয়। তারপরও তাঁর জীবনের অনেক নাটকীয় ঘটনা এখনো সেভাবে জানা যায় না। আর তাই তাঁকে পূর্ণাঙ্গরূপে বা পরিপূর্ণভাবে জানা ও বোঝায় ঘাটতি রয়ে গেছে। হ্যাজেলটন সেই ঘাটতি পূরণের একটি জোর প্রয়াস নিয়েছেন এই বইটিতে। একেবারে প্রথম দিককার প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে প্রাপ্ত বিবরণী ব্যবহার করার পাশাপাশি ইতিহাস, রাজনীতি, ধর্ম ও মনস্ত্বত্ব বিশ্লেষণের মাধ্যমে তিনি একজন পরিপূর্ণ মানুষের জীবনচিত্র আঁকতে চেষ্টা করেছেন। দেখিয়েছেন যে ‍মুহাম্মদ (সা.) এমন একজন মানুষ যিনি আদর্শে সমুন্নত থাকার পাশাপাশি বাস্তববাদীও ছিলেন এবং যিনি সমভাবে বিচরণ করেছেন বিশ্বাস ও রাজনীতির ময়দানে।

বইটি তিনটি খণ্ডে বিন্যস্ত। প্রথম খণ্ডের শিরোনাম ‘অরফান’ বা ’এতিম।’ দ্বিতীয় খণ্ডের শিরোনাম ‘একজাইল’ বা ‘নির্বাসন’। তৃতীয় খণ্ডের শিরোনাম ‘লিডার’ বা ’নেতা’। কীভাবে একজন ক্ষমতাহীন সাধারণ মানুষ এমন এক ক্ষমতার শিখরে উঠে এলেন এবং ঊষর মরুর ছোট্ট এক জনপদের নগণ্য এক ব্যক্তি হয়ে উঠলেন অঃনিশেষ গুরুত্বের অধিকারী। হ্যাজেলটন এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন বইটিতে। সে কারণেই এই বইটি শুধু একজন সুবিশাল ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের চরিত্র চিত্রণই করেনি, বরং তাঁর রেখে যাওয়া ধর্মীয়-রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের পরম্পরা বহমান রয়েছে, তাও ‍তুলে ধরেছে।

লেখিকার নিজের ভাষায়, ‘যদি আমরা একে একটি অসাধারণ জীবন বলি তাহলেও কম বলা হবে। এটি এমন এক জীবন যা তাঁর জগতকে বৈপ্লবিকভাবে পরিবর্তন করে দিয়েছিল এবং এখনো আমাদের জীবন-জগতকে রূপায়নে ভূমিকা রাখছে। এর তাৎপর্য বুঝতে হলে তাই আমাদের তাঁকে দেখতে হবে পূর্ণাঙ্গভাবে এবং বাস্তবতা বিশুদ্ধতায়।’

হ্যাজেলটনের প্রাঞ্জল ভাষাশৈলীর সঙ্গে নাটকীয় ভঙ্গিতে কাহিনী এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দক্ষতা বইটিকে পাঠকের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলে। যারা হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর একাধিক জীবনী গ্রন্থ পড়েছেন, তাদের কাছেও বইটি কিছুটা বিস্ময়কর মনে হবে কিছু ভিন্ন ধরনের তথ্য ও বিশ্লেষণের কারণে।

 দ্য ফার্স্ট মুসলিম: দ্য স্টোরি অব মুহাম্মদ, লেইসলি হ্যাজেলটন, রিভারহেড বুকস, নিউইয়র্ক, ২০১৩