ইশরাকের নামাজ: সকালের আলোয় আল্লাহর নৈকট্য

সকালের প্রথম আলো যখন পৃথিবীকে আলোকিত করে, তখন ইশরাকের নামাজ মুমিনকে অগণিত পুণ্যের দিকে ডাকে। ইশরাকের নামাজ একটি নফল ইবাদত, যা ফজরের পর সূর্যোদয়ের কিছুক্ষণ পর পড়া হয়। এই নামাজ শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম নয়; বরং দিনের শুরুতে শান্তি, বরকত ও ইমানের নবায়নের উৎস। জীবনের ব্যস্ততার মধ্যেও এই নামাজ আল্লাহর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের একটি দারুণ সুযোগ।

আরও পড়ুন

ইশরাকের নামাজের ফজিলত

ইশরাকের নামাজের ফজিলত অপরিসীম। ওপরে উল্লিখিত হাদিসে নবীজি (সা.)–এর জন্য হজ ও ওমরাহর সওয়াবের কথা বলেছেন। এ ছাড়া এই নামাজ দিনের শুরুতে আল্লাহর রহমত ও বরকত নিয়ে আসে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইশরাকের নামাজ পড়ে, তার গুনাহ মাফ হয় এবং তার দিন বরকতময় হয়।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৭,২৫২)

আরও পড়ুন
যে ব্যক্তি ইশরাকের নামাজ পড়ে, তার গুনাহ মাফ হয় এবং তার দিন বরকতময় হয়।
মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৭,২২৫

ইশরাকের নামাজের নিয়ম

ইশরাকের নামাজ পড়ার জন্য প্রথমে ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করা উত্তম। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে পড়ে, তারপর সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর জিকিরে বসে থাকে এবং দুই রাকাত নামাজ পড়ে, তার জন্য একটি হজ ও ওমরাহর সওয়াব রয়েছে।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৫৮৬)

ইশরাকের নামাজের নিয়ম এমন—

সময়: সূর্যোদয়ের ১৫–২০ মিনিট পর থেকে দুপুরের আগপর্যন্ত। তবে সূর্যোদয়ের ঠিক পরে পড়া উত্তম।

রাকাত: সর্বনিম্ন দুই রাকাত, তবে চার বা ততোধিক রাকাতও পড়া যায়। প্রতি দুই রাকাতে সালাম ফিরিয়ে পড়তে হয়।

নিয়ত: মনে মনে নিয়ত করুন, ‘আমি দুই রাকাত ইশরাকের নফল নামাজ আল্লাহর জন্য আদায় করছি।’

পড়ার পদ্ধতি: ফরজ নামাজের মতোই পড়তে হয়। সুরা ফাতিহার পর যেকোনো সুরা পড়া যায়। তবে সুরা কাফিরুন, সুরা ইখলাস বা অন্য ছোট সুরা পড়া সুন্নাহ মেনে চলার জন্য উত্তম।

ফজরের পর মসজিদে বা ঘরে বসে জিকির, দোয়া বা কোরআন তিলাওয়াত করা। তারপর ইশরাক পড়লে পূর্ণ সওয়াব পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন
সকালের কয়েক মিনিট ইশরাকের জন্য বরাদ্দ করুন, এবং আল্লাহর নৈকট্যে জীবনকে আলোকিত করুন।

দোয়া ও জিকির

ইশরাকের নামাজের জন্য কোনো নির্দিষ্ট দোয়া হাদিসে উল্লেখ নেই। তবে নামাজের পর সাধারণ নফল দোয়া-কালাম পড়া যায়, যেমন আয়াতুল কুরসি, তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার) ও দুরুদ শরিফ।

একটি প্রচলিত দোয়া হলো: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা রিজকান তাইয়্যিবান ওয়া ইলমান নাফি‘আন ওয়া আমালান মুতাকাব্বালান।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে পবিত্র রিজিক, উপকারী ইলম ও কবুলযোগ্য আমল প্রার্থনা করি।’ এটি সাধারণ নফল নামাজের পর পড়া যায়।

ইশরাকের নামাজ মাত্র দুই রাকাত, কিন্তু এর প্রভাব সারাদিনের জন্য। সকালের কয়েক মিনিট ইশরাকের জন্য বরাদ্দ করুন, এবং আল্লাহর নৈকট্যে জীবনকে আলোকিত করুন।

আরও পড়ুন