শিরক প্রতিরোধে মহানবী (সা.)-এর ৭ নির্দেশনা

তাওহিদ ইসলামের মূল ভিত্তি এবং ইমানের প্রাণ। এটি আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস ও তাঁর ইবাদতে অটল থাকার নিশ্চয়তা। অন্যদিকে শিরক মানবজাতির জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ বিপদ, যা সকল আমলকে ধূলিকণার মতো মূল্যহীন করে দেয়।

শিরক করা কবিরা গুনাহ বা মহাপাপ, যা একজন ধর্মভীরু বা তাহাজ্জুদগুজার বান্দার সারাজীবনের আমলকেও নষ্ট করে দিতে পারে।

তাওহিদ সংরক্ষণ করা এবং শিরক থেকে মুক্ত থাকা দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার চাবিকাঠি। রাসুল (সা.) তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তাওহিদ প্রতিষ্ঠা এবং শিরকের পথ বন্ধ করতে। তাঁর নির্দেশনাগুলো আজও আমাদের জন্য পথপ্রদর্শক।

নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরিক করাকে ক্ষমা করেন না, তবে এর নিম্ন পর্যায়ের গুনাহ তিনি যার জন্য ইচ্ছা করেন, ক্ষমা করেন।
সুরা নিসা, আয়াত: ৪৮, ১১৬

তাওহিদ ও শিরকের গুরুত্ব

আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরিক করাকে ক্ষমা করেন না, তবে এর নিম্ন পর্যায়ের গুনাহ তিনি যার জন্য ইচ্ছা করেন, ক্ষমা করেন।” (সুরা নিসা, আয়াত: ৪৮, ১১৬)

রাসুল (সা.) বলেছেন, “শিরকের চেয়ে বড় গুনাহ আর নেই।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৮৬১)

তাওহিদের সংরক্ষণ মানে শুধু “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” মুখে বলা নয়, বরং শিরকের সকল রূপ থেকে দূরে থাকা এবং আল্লাহর ইবাদতে একনিষ্ঠ থাকা।

আরও পড়ুন

শিরক প্রতিরোধে রাসুলের নির্দেশনা

রাসুল (সা.) তাওহিদ সংরক্ষণ ও শিরক প্রতিরোধে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। তাঁর কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা নিম্নরূপ:

১. ইসলামের ব্যাপারে অতিরঞ্জন নিষেধ: রাসুল (সা.) ইসলামের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি বা অতিরঞ্জন নিষেধ করেছেন, কারণ এটি শিরকের সূচনার কারণ। তিনি বলেছেন, “ইসলামের ব্যাপারে অতিরঞ্জন থেকে সাবধান। কারণ পূর্ববর্তী জাতিদের ধ্বংসের কারণ ছিল অতিরঞ্জন।” (সুনান নাসায়ি, হাদিস: ৩০৫৭)

২. কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ নিষেধ: রাসুল (সা.) কবরের পাশে বা উপরে মসজিদ নির্মাণ এবং কবর পাকা বা চুনকাম করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, “আল্লাহ ইহুদি ও নাসারাদের ওপর অভিসম্পাত করেছেন, যারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ বানিয়েছে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৩৫)

এটি কবর-পূজার দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রথম ধাপ।

৩. কবরের কাছে নামাজ নিষেধ: তিনি কবরের কাছে নামাজ পড়া থেকে সতর্ক করেছেন, যাতে মৃতদের উদ্দেশে ইবাদত না হয়। তিনি বলেছেন, “কবরস্থানে নামাজ পড়ো না।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৭২)

৪. কবরে উৎসব করা নিষেধ: রাসুল (সা.) নিজের কবর বারবার জেয়ারত, নিয়মিত দোয়া বা নৈকট্যের আশায় জমায়েত নিষিদ্ধ করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমার কবরকে উৎসবের স্থান বানিয়ো না।” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ২০৪২)

৫. কাফেরদের অনুকরণ নিষেধ: তিনি কাফেরদের সংস্কৃতি বা আচরণের অনুকরণের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাথে সাদৃশ্য করে, সে তাদেরই একজন।” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৪০৩১)

মুসলিম পরিচয় তাওহিদের আলোয় উদ্ভাসিত হওয়া উচিত।

আরও পড়ুন
রাসুল (সা.) তাঁর উম্মতকে শিরকের ছায়া থেকে দূরে রাখতে সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। তাওহিদ মানে শুধু “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলা নয়, বরং শিরকের সকল রূপ থেকে মুক্ত থাকা।

৬. ছবি অঙ্কন বা মূর্তি নির্মাণ নিষেধ: রাসুল (সা.) জীবিত বা মৃত কারও সম্মানে ছবি অঙ্কন, মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণ নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, “যারা প্রাণীর ছবি অঙ্কন করে, কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দেওয়া হবে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৯৫১)

শিরকের সূচনা প্রিয়জনের মূর্তি পূজা থেকেই হয়েছিল।

৭ . শরিয়তবহির্ভূত বরকত কামনা নিষেধ: রাসুল (সা.) শরিয়তবহির্ভূত পদ্ধতিতে বরকত কামনা নিষিদ্ধ করেছেন। তিনি বলেছেন, “বরকত একমাত্র আল্লাহই দান করেন।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭১)

এমনকি তিনি এমন কথা বলতেও নিষেধ করেছেন যা তাওহিদের মর্যাদার বিরুদ্ধে যায়। তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনে বিশ্বাস করে, সে যেন ভালো কথা বলে, নতুবা চুপ থাকে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬০১৮)

রাসুল (সা.) তাঁর উম্মতকে শিরকের ছায়া থেকে দূরে রাখতে এবং তাওহিদ সংরক্ষণে সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। তাওহিদের সংরক্ষণ মানে শুধু “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলা নয়, বরং শিরকের সকল রূপ থেকে মুক্ত থাকা।

উপর্যুক্ত নির্দেশনাগুলো মেনে চললে আমরা শিরক থেকে নিরাপদ থাকতে পারব। মহান আল্লাহ আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত তাওহিদের পথে অটল থাকার তৌফিক দান করুন।

আরও পড়ুন