কোরআনে বর্ণিত নারী ও পুরুষের নাম

কোরআন মানবজাতির জন্য সর্বশেষ ও পূর্ণাঙ্গ আসমানি গ্রন্থ। এখানে ইমান, আমল, নৈতিকতা, ইতিহাস ও শিক্ষা—সব কিছুর সমাহার রয়েছে। কোরআনে অনেক ব্যক্তির কাহিনি বর্ণিত হয়েছে, তবে প্রত্যেকের নাম উল্লেখ করা হয়নি। আল্লাহ প্রজ্ঞার কারণে কিছু নাম উন্মোচন করেছেন, আবার অনেকের নাম গোপন রেখেছেন। এ প্রবন্ধে কোরআনে বর্ণিত সব নারী ও পুরুষের নাম, তাদের ভূমিকা তুলে ধরা হলো।

পুরুষদের নাম কোরআনে

নবী-রাসুলগণ: কোরআনে ২৫ জন নবীর নাম এসেছে।

১. আদম (আ.) – প্রথম মানব ও নবী (সুরা বাকারা, আয়াত: ৩১)।

২. নুহ (আ.) – নূহের নৌকার কাহিনি প্রসিদ্ধ (সুরা আ‘রাফ, আয়াত: ৫৯)।

৩. হুদ (আ.) – ‘আদ জাতির কাছে পাঠানো নবী (সুরা হুদ, আয়াত: ৫০)।
৪. সালিহ (আ.) – সামুদ জাতির কাছে প্রেরিত (সুরা হুদ, আয়াত: ৬১)।
৫. ইবরাহিম (আ.) – খলিলুল্লাহ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১২৪)।

৬. লুত (আ.) – সমকামী জাতির কাছে পাঠানো নবী (সুরা হুদ, আয়াত: ৭০)।

৭. ইসমাঈল (আ.) – ইবরাহিম (আ.)-এর পুত্র (সুরা মারইয়াম, আয়াত: ৫৪)।

৮. ইসহাক (আ.) – ইবরাহিম (আ.)-এর সন্তান (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৩৩)।

৯. ইয়াকুব (আ.) – ইসহাকের পুত্র, ইসরাইল নামেও পরিচিত (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৩৩)।

১০. ইউসুফ (আ.) – তাঁর কাহিনি একটি পূর্ণ সূরায় (সুরা ইউসুফ, আয়াত: ৪)।

১১. শু‘আইব (আ.) – মাদইয়ানের কাছে পাঠানো নবী (সুরা আ‘রাফ, আয়াত: ৮৫)।

১২. আইয়ুব (আ.) – ধৈর্যশীলতার প্রতীক (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৮৩)।

১৩. ধুলকিফল (আ.) – নেককার এক নবী (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৮৫)।

১৪. মূসা (আ.) – কোরআনে সর্বাধিকবার উল্লেখিত (সুরা কাসাস, আয়াত: ৩)।

১৫. হারুন (আ.) – মূসার ভাই ও সহকারী নবী (সুরা মারইয়াম, আয়াত: ৫৩)।

১৬. দাউদ (আ.) – রাজা ও নবী (সুরা সাবা, আয়াত: ১০)।

১৭. সুলায়মান (আ.) – দাউদের পুত্র, শক্তিশালী রাজা (সুরা নামল, আয়াত: ১৫)।
১৮. ইলিয়াস (আ.) – বনি ইসরাইলের কাছে পাঠানো নবী (সুরা আস-সাফফাত, আয়াত: ১২৩)।

১৯. আল ইয়াসা (আ.) – ইলিয়াসের পরবর্তী নবী (সুরা আন‘আম, আয়াত: ৮৬)।

২০. যাকারিয়া (আ.) – মরিয়মের অভিভাবক (সুরা মারইয়াম, আয়াত: ২)।

২১. ইয়াহইয়া (আ.) – যাকারিয়ার পুত্র (সুরা মারইয়াম, আয়াত: ৭)।

২২. ইসা (আ.) – মরিয়মের পুত্র (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৪৫)।

২৩. ইদরিস (আ.) – উচ্চ মর্যাদাপ্রাপ্ত নবী (সুরা মারইয়াম, আয়াত: ৫৬)।

২৪. ইউনুস (আ.) – মাছের পেটের কাহিনি (সুরা আস-সাফফাত, আয়াত: ১৩৯)।

২৫. মুহাম্মাদ (সা.) – সর্বশেষ রাসুল (সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ২)।

আরও পড়ুন

অন্যান্য পুরুষ চরিত্র

১. ফিরআউন – মূসার বিরোধী রাজা (সুরা কাসাস, আয়াত: ৩)।
২. হামান – ফিরআউনের মন্ত্রী (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ৩৯)।
৩. কারুন – ধন-সম্পদের অহংকারী (সুরা কাসাস, আয়াত: ৭৬)।
৪. আবু লাহাব – রাসুল (সা.)–এর চাচা, ইসলামবিরোধী (সুরা আল-লাহাব, আয়াত: ১)।
৫. তালুত – ইসরাইলের রাজা (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৪৭)।
৬. জালুত – তালুতের প্রতিপক্ষ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫১)।
৭. আজিজ – মিসরের কোষাগারপতি (ইউসুফের কাহিনি) (সুরা ইউসুফ, আয়াত: ২১)।
৮. সামিরি – বনি ইসরাইলকে বিভ্রান্তকারী (সুরা ত্ব-হা, আয়াত: ৮৫)।
৯. আজার – ইবরাহিমের পিতা (সুরা আন‘আম, আয়াত: ৭৪)।
১০. আবু বকর (রা.)-এর নাম সরাসরি নেই, তবে ইঙ্গিত রয়েছে (সুরা আত-তাওবা, আয়াত: ৪০)।
১১. জায়েদ ইবনে হারিসা (রা.) – একমাত্র সাহাবি, যার নাম এসেছে (সুরা আহযাব, আয়াত: ৩৭)।

নারীদের নাম কোরআনে

মরিয়ম: নারীদের মধ্যে একমাত্র নাম মরিয়ম (আ.) এসেছে। তাঁর জীবনের কাহিনি সুরা মারয়ামে বিস্তারিত রয়েছে (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৪২; সুরা মরিয়ম, আয়াত: ১৬)।

এ ছাড়াও কোরআনে নামবিহীন নারী চরিত্র রয়েছে অনেক। যেমন:

১. নুহ (আ.)-এর স্ত্রী – অবিশ্বাসীর প্রতীক (সুরা আত-তাহরীম, আয়াত: ১০)।
২. লুত (আ.)-এর স্ত্রী – অবিশ্বাসী নারী (সুরা আত-তাহরীম, আয়াত: ১০)।
৩. ফিরআউনের স্ত্রী আসিয়া – ইমানদার নারী (সুরা আত-তাহরীম, আয়াত: ১১)।
৪. আজিজের স্ত্রী জুলেখা, ইউসুফ (আ.)–এর প্রতি যিনি আসক্ত হয়েছিলেন। তার নাম এসেছে তাফসিরে, কোরআনে নয়।

আরও পড়ুন

৫. শেবা রাণী (বিলকিস) – সূরা নামল-এ বর্ণিত, নাম কেবল তাফসিরে (সুরা নামল, আয়াত: ২৩–৪৪)।
৬. মুসা (আ.)-এর মা (সুরা কাসাস, আয়াত: ৭)।
৭. মূসা (আ.)-এর বোন (সুরা কাসাস, আয়াত: ১১)।

৮. মূসা (আ.)-এর শ্বাশুড়ি (সুরা কাসাস, আয়াত: ২৩–২৫)।
৯. রাসুল (সা.)-এর স্ত্রীগণ (উম্মাহাতুল মু’মিনীন) (সুরা আহযাব, আয়াত: ৬, ৩৩)।

কেন নারীদের নাম কম এসেছে?

মুফাসসির তাহির ইবনে আশুর বলেন, নারীর সম্মান ও গোপনীয়তা রক্ষার জন্য নামের পরিবর্তে চরিত্র ও কাহিনিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে মরিয়ম (আ.)-এর নাম আলাদা করে উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে তাঁর মর্যাদা স্পষ্ট হয় (আত-তাহরীর ওয়াত-তানওয়ীর, ভলিউম ১, পৃ. ৪৭৮, দার আত-তুরুক নাশির, তিউনিস, ১৯৮৪)।

সারকথা

কোরআনে ২৫ জন নবীর নাম, কয়েকজন ব্যক্তিত্ব (যেমন ফিরআউন, হামান, কারুন, আবু লাহাব) এবং একজন সাহাবির নাম (জায়েদ ইবনে হারিসা রা.) স্পষ্টভাবে উল্লেখিত। নারীদের মধ্যে কেবল মরিয়ম (আ.)-এর নাম এসেছে। এ থেকে বোঝা যায়—আল্লাহ তাআলা ব্যক্তির নাম নয়, বরং তাঁর ইমান, চরিত্র ও কর্মকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।

আরও পড়ুন