কোরবানির তাৎপর্য ও ফজিলত

কোরবানির মূল তাৎপর্য হলো তাকওয়া বা ধর্মনিষ্ঠা। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘এর রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, এর গোশতও না, বরং তাঁর কাছে যা পৌঁছায়, তা হলো তোমাদের তাকওয়া।’ (সুরা হজ, আয়াত: ৩৭)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোরবানির দিন আদমসন্তান রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় আর কোনো আমল করে না। কিয়ামতের দিন জবাই করা পশু তার শিং, পশম, খুরসহ হাজির হবে। কোরবানির রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর কাছে তা কবুল হয়ে যায়। অতএব তোমরা কোরবানির মাধ্যমে নিজেকে প্রফুল্ল করো।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১,৪৯৩)

‘নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে তারাই ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠতম, যারা তার অনুসরণ করেছে এবং এই নবী (মুহাম্মদ) ও যারা ইমান এনেছে; আর আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৬৮)

জায়দ ইবনে আরকাম (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, সাহাবিরা রাসুল (সা.)-কে কোরবানির তাৎপর্য জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘তোমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ.)-এর সুন্নত।…কোরবানির পশুর প্রতিটি লোমের বিনিময়ে একটি করে নেকি রয়েছে।…প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি করে নেকি পাওয়া যাবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩,১২৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৯,৩০২)

আরও পড়ুন

জাহিলিয়া যুগের প্রথা ও ইসলাম

জাহিলিয়া যুগে প্রতিমার গায়ে বলির রক্ত মাখানো এবং মাংস দেবীর প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হতো। কোথাও কোথাও নরবলির প্রথাও ছিল। ইসলাম এই বীভৎস প্রথাগুলো বাতিল করে এবং কোরবানিকে আল্লাহর প্রতি ত্যাগ ও আনুগত্যের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ মুমিনের জানমাল ক্রয় করেছেন জান্নাতের বদলে।’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ১১১)

এর মাধ্যমে বোঝানো হয়, একজন মুমিন প্রয়োজনে নিজের জীবন পর্যন্ত আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকবে।

দুই পয়গম্বরের সম্পর্ক

হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মধ্যে গভীর আধ্যাত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে তারাই ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠতম, যারা তার অনুসরণ করেছে এবং এই নবী (মুহাম্মদ) ও যারা ইমান এনেছে; আর আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৬৮)

হজরত ইব্রাহিম (আ.) ইসলামের অনুসারীদের ‘মুসলিম’ নামকরণ করেন, ‘তিনি পূর্বে তোমাদের নামকরণ করেছিলেন ‘মুসলিম’, আর এ কিতাবেও করেছেন।’ (সুরা হজ, আয়াত: ৭৮)

আরও পড়ুন

তাঁর দোয়ার বরকতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আগমন ঘটে, ‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের মধ্য থেকে তাদের কাছে এক রাসুল প্রেরণ করো যে তোমার আয়াত তাদের কাছে আবৃত্তি করবে, তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবে এবং তাদেরকে পবিত্র করবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১২৯)

কোরবানি হলো হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর ত্যাগ ও আনুগত্যের স্মারক এবং ইসলামে তাকওয়ার প্রতীক। এটি মুসলিমদের জন্য আল্লাহর প্রতি নিষ্ঠা ও দরিদ্রদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের একটি মাধ্যম। কোরবানির মাধ্যমে মুমিন তার জীবন ও সম্পদ আল্লাহর পথে উৎসর্গ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।

আরও পড়ুন