সুরা তাগাবুনে পরম লাভক্ষতির আলোচনা

ছবি : ফ্রি পিক

সুরা তাগাবুন পবিত্র কোরআনের ৬৪ তম সুরা। এটি মদিনায় অবতীর্ণ। এতে ২ রুকু, ১৮ আয়াত। এই সুরার বিষয ন্যায় ও অন্যায় এবং লাভ ও ক্ষতি।

ইমানের লাভক্ষতি: যারা ইমান এনেছে, তারা লাভবান হবে; যারা কুফুরি করেছে, তারা লোকসানের শিকার হবে। আল্লাহ বলেন, ‘যেদিন তিনি তোমাদেরকে সমবেত করবেন, সেদিনটি হবে লাভ–লোকসান নির্ধারণের দিন। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস করে ও সৎ কাজ করে, তিনি তার পাপ মোচন করবেন ও তাকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে; যার পাদদেশে নদী বইবে, সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। এটাই মহাসাফল্য। কিন্তু যারা অবিশ্বাস করে ও আমার নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করে, তারাই জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। ফিরে যাওয়ার পক্ষে সেটা কত-না খারাপ জায়গা। (আয়াত: ৯–১০)

আনুগত্যের লাভক্ষতি: যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করেছে, তারা লাভবান হবে; আর যারা গাফিলতি ও অবহেলা করেছে, তারা লোকসানের শিকার হবে। সুরায় এসেছে, ‘তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করো। যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, জেনে রেখো, আমার রাসুলের দায়িত্ব কেবল স্পষ্টভাবে প্রচার করা। আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, সুতরাং বিশ্বাসীগণ আল্লাহর ওপর নির্ভর করুক। হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের স্ত্রী ও সন্তানসন্ততিদের মধ্যে কেউ কেউ তোমাদের শত্রু। অতএব তাদের সম্পর্কে তোমরা সতর্ক থেকো। তোমরা যদি তাদেরকে মার্জনা কর, তাদের দোষত্রুটি উপেক্ষা কর ও তাদেরকে ক্ষমা কর, তবে জেনে রেখো আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (আয়াত: ১২–১৪)

ব্যয়ে লাভক্ষতি: যারা সদকা করেছে, তারা লাভবান হবে; আর যারা সদকা করেনি, তারা লোকসানের শিকার হবে। এতে আছে, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও, তিনি তোমাদের জন্য তা বহুগুণে বাড়িয়ে দেবেন, আর তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ তো গুণগ্রাহী, সহিষ্ণু।’ (আয়াত: ১৭)

এ সুরায় ইমানের ছয়টি রুকনের আলোচনা করা হয়েছে। প্রথম চার আয়াতে আল্লাহ তাঁর সিফাতের কথা উল্লেখ করে বলছেন, ‘আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তাঁর পবিত্র মহিমা কীর্তন করে, সার্বভৌমত্ব তাঁরই। প্রশংসাও তাঁরই। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অবিশ্বাস করে ও কেউ কেউ বিশ্বাস করে। তোমরা যা কর, আল্লাহ তো তা ভালো করেই দেখেন। তিনি যথাযথভাবে আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন ও তোমাদেরকে আকৃতি দান করেছেন, তারপর তোমাদের আকৃতিকে করেছেন সুন্দর, আর প্রত্যাবর্তন তো তাঁরই কাছে। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তিনি জানেন; আর তিনি জানেন তোমরা যা গোপন কর ও তোমরা যা প্রকাশ কর; আর তিনি তো অন্তর্যামী।’ (আয়াত: ১-৪)

রাসুলদের প্রতি ইমান আনা প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের কাছে কি আগের অবিশ্বাসীদের কাহিনি পৌঁছায়নি? তারা তাদের কাজের শাস্তির স্বাদ পেয়েছিল, আর তাদের জন্য রয়েছে মারাত্মক শাস্তি।’ (আয়াত: ৫)

আসমানি কিতাবগুলোর নিয়ে বলা হয়েছে, ‘অতএব তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও যে আলো (কোরআন) আমি অবতীর্ণ করেছি তাতে বিশ্বাস স্থাপন করো। আর তোমরা যা কর আল্লাহ তার খবর রাখেন।’ (আয়াত: ৮)

ভাগ্য সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অবিশ্বাস করে ও কেউ কেউ বিশ্বাস করে। তোমরা যা কর আল্লাহ তো তা ভালো করেই দেখেন।’ (আয়াত: ২)

আল্লাহ আরও বলেছেন, ‘আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া কোনো বিপদই আসে না, আর যে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস করে, আল্লাহ তার অন্তরকে সুপথে পরিচালনা করেন। আল্লাহ তো সব বিষয়ই ভালো করে জানেন।’ (আয়াত: ১১)

অনেকের স্ত্রী-সন্তান কষ্ট দেয়, তাদের সম্পর্ক বলা হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের স্ত্রী ও সন্তানসন্ততির মধ্যে কেউ কেউ তোমাদের শত্রু। অতএব তাদের সম্পর্কে তোমরা সতর্ক থেকো। তোমরা যদি তাদেরকে মার্জনা কর, তাদের দোষত্রুটি উপেক্ষা কর ও তাদেরকে ক্ষমা কর, তবে জেনে রেখো, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততি তো তোমাদের জন্য পরীক্ষা; আর তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে রয়েছে বড় পুরস্কার।’ (আয়াত: ১৪-১৫, সুরা তাগাবুন, কোরানশরিফ: সরল বঙ্গানুবাদ, অনুবাদ: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন)