অবাধ্যতার শাস্তি

মানুষ থেকে বানর

শুক্রবার হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর উম্মতদের জন্য একটা বিশেষ দিন। হজরত দাউদ (আ.)–এর উন্মতের জন্য এই দিনটি ছিল শনিবার। শনিবার তাদের মাছ ধরা ছিল নিষিদ্ধ। দিনটিতে সমুদ্রের মাছ তীরে চলে আসত। সপ্তাহের অন্য কোনো দিন এমন হতো না। মাছশিকারিরা দেখল তারা পুরো সপ্তাহে যত মাছ ধরে, শনিবারে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মাছ ধরা সম্ভব। কিন্তু শনিবারে তো মাছ ধরা নিষিদ্ধ। তাদের কেউ মাছ ধরতে দেখলে শাস্তি পেতে হবে।

মাছশিকারীরা একটি উপায় বের করল। সমুদ্রের কিনারে তারা গর্ত করে রাখল। মাছগুলো ওই গর্তে এসে আটকা পড়বে। শনিবারে তারা মাছ না ধরে পরদিন গিয়ে মাছগুলো নিয়ে আসত। কেউ তাদের আর বলতে পারবে না যে তারা শনিবারে মাছ ধরেছে। অন্যদিকে, শনিবারে মাছ ধরা থেকে বঞ্চিত থাকার ফলে যে ক্ষতি হতো, সেটা পরদিন তারা পুষিয়ে নিতে পারত।

ইহুদিরা এভাবে আল্লাহর বিধানের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছিল। তারা কূটকৌশল করেছিল। কিন্তু আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ।

আরও পড়ুন

কিছু মানুষ মাছশিকারীদের চালাকি বুঝতে পারল। তারা তাদের এমনটা করতে মানা করল। কিন্তু, মাছ শিকারিরা বেশি লাভের আশায় ওদের কথায় কান দিল না।

তৃতীয় আরেকটি দল ছিল, তারা কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে মাছ শিকার করত না। তবে মাছশিকারীদের যারা বোঝাত, তাদের জিজ্ঞেস করত, এদের বুঝিয়ে কী লাভ? এরা তো বুঝবে না। ওরা শাস্তি পাওয়ার যোগ্য হলে শাস্তি পাবে।

মাছ শিকারকে কেন্দ্র করে দাউদ (আ.)–এর সময়কার ইহুদিরা এই তিনটি দলে বিভক্ত ছিল। ১. শনিবারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা মাছশিকারিরা। ২. মাছশিকারিদের ভালো উপদেশদাতারা। ৩. যারা শনিবারে মাছ শিকার করত না, আবার যারা মাছ ধরত তাদের মানাও করত না।

এত বোঝানো সত্ত্বেও প্রথম দলটি যখন বুঝল না, তখন আল্লাহ তাদের ওপর শাস্তি পাঠালেন। আল্লাহর শাস্তি থেকে বেঁচে গেল দ্বিতীয় দলটি, যারা অসৎ কাজ করতে নিষেধ করেছিল।

আরও পড়ুন

কোরআনে আছে, ‘তাদের সমুদ্রতীরবর্তী অধিবাসীদের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করো, তারা শনিবারে সীমালঙ্ঘন করত। শনিবার—পালনের দিনে তাদের কাছে পানির ওপরে মাছ ভেসে আসত, কিন্তু যেদিন তারা শনিবার পালন করত না, সেদিন ওরা তাদের কাছে আসত না। যারা সত্য ত্যাগ করেছিল, তাদেরকে আমি এইভাবে পরীক্ষা করেছিলাম। আর যখন তাদের একদল বলেছিল, আল্লাহ্ যাদেরকে ধ্বংস করবেন বা কঠোর শাস্তি দেবেন, কেন তোমরা তাদেরকে (অনর্থক) উপদেশ দিচ্ছ? তারা বলেছিল, তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি কর্তব্যপালনের জন্য, আর হয়তো তারা তাঁকে ভয় পেলেও পেতে পারে। তাদেরকে যে উপদেশ দেওয়া হয়েছিল, তারা যখন তা ভুলে গেল, তখনো যারা খারাপ কাজ থেকে নিজেদেরকে দূরে রেখেছিল তাদেরকে আমি উদ্ধার করেছিলাম। আর যারা সীমালঙ্ঘন করে সত্য ত্যাগ করেছিল, তাদেরকে আমি কঠোর শাস্তি দিয়েছিলাম। তারা যখন নিষিদ্ধ কাজে বাড়াবাড়ি করতে লাগল, তখন আমি তাদেরকে বললাম, ঘৃণিত বানর হও। (সুরা আরাফ, আয়াত: ১৬৩–১৬৬)

আরও পড়ুন