রজব ও শাবান থেকে কেন রমজানের প্রস্তুতি শুরু

ছবি: পেক্সেলস

পবিত্র রমজান—মুসলিম উম্মাহর জন্য রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস। এ মাসে আল্লাহ–তাআলা বান্দাদের প্রতি অসীম দয়া বর্ষণ করেন, গুনাহ মাফ করেন এবং জান্নাতের দ্বার দউন্মুক্ত করে দেন। কিন্তু এই অফুরন্ত নেয়ামতের পূর্ণ সুফল পেতে হলে দরকার সঠিক প্রস্তুতি। আল্লাহর রাসুল (সা.) রজব মাসের চাঁদ দেখেই রমজানের জন্য দোয়া শুরু করতেন এবং শাবান মাসে সর্বাধিক নফল রোজা রাখতেন। এ থেকে বোঝা যায়, রজব ও শাবান হলো রমজানের আধ্যাত্মিক প্রস্তুতির সুবর্ণ সুযোগ।

আবু বকর বালখি (রহ.) এর সুন্দর উপমা, ‘রজব হলো বীজ বপনের মাস, শাবান সেচ দেওয়ার মাস এবং রমজান ফসল কাটার মাস।’ যদি বীজ না বপন করা হয় বা সেচ না দেওয়া হয়, তাহলে ফসল কীভাবে প্রত্যাশিত হবে? ঠিক তেমনি, রমজানের ইবাদতের পূর্ণ ফল লাভ করতে রজব থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। নফসকে নিয়ন্ত্রণে আনতে, গুনাহ থেকে দূরে থাকতে এবং ইবাদতের অভ্যাস গড়ে তুলতে এই দুই মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রাসুল (সা.) রজব মাস শুরু হলে দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবা ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা রমাদান।’ (অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবানকে বরকতময় করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।) এ দোয়া আমাদের শেখায় যে, রমজানের প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই শুরু করা উচিত।

আরও পড়ুন

রমজানের প্রস্তুতির গুরুত্বপূর্ণ ধাপ

১. নিয়ত ও ইখলাসের সংশোধন: প্রতিটি আমলের ভিত্তি হলো খালেস নিয়ত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সমস্ত আমল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১; সহিহ মুসলিম,হাদিস: ১৯০৭) রজব থেকে নিয়ত যাচাই করুন যেন সবকিছু শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়।

২. তওবা ও ইস্তিগফার: রমজানের আগে আন্তরিক তাওবা করুন। আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তওবা কর, যাতে তোমরা সফল হও।’ (সুরা নুর, আয়াত: ৩১)

রাসুল (সা.) জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত হয়েও দিনে ১০০ বার ইস্তিগফার করতেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭০৩৩)

শেষ রাতে ইস্তিগফারের অভ্যাস গড়ে তুলুন।

৩. আত্মশুদ্ধি ও নফস নিয়ন্ত্রণ: নাফসুল আম্মারা (মন্দপ্রবণ অন্তর) মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু। রজব-শাবানে নফসকে প্রশিক্ষণ দিন যাতে রমজানে ইবাদত বোঝা না হয়ে আনন্দের বিষয় হয়। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই সফলকাম হয়েছে যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করেছে।’ (সুরা শামস, আয়াত: ৯)

৪. ধর্মীয় জ্ঞানার্জন ফরজ ইবাদতের সঠিক নিয়ম জানা প্রত্যেক মুসলিমের ওপর ফরজ। রমজানের রোজা, নামাজ, কোরআন তিলাওয়াতের নিয়মাবলী শিখুন। তাজবিদসহ কোরআন শুদ্ধ করুন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক মুসলিমের ওপর ইলম অর্জন ফরজ।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২২৪)

৫. নামাজে খুশু-খুজু বাড়ানো কিয়ামতের প্রথম হিসাব নামাজের। নামাজ শুদ্ধ করুন, সময়মতো আদায় করুন এবং খুশু (অন্তরের একাগ্রতা) ও খুজু (শারীরিক স্থিরতা) অর্জনের চেষ্টা করুন।

৬. কোরআনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করা রমজান কোরআন নাজিলের মাস। রজব থেকে প্রতিদিন তিলাওয়াত, তাফসির পড়া এবং মুখস্থের অভ্যাস গড়ে তুলুন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোরআন কিয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮০৪)

আরও পড়ুন

৭. গুনাহ থেকে দূরে থাকা: ছোট-বড় সব গুনাহ থেকে বিরত থাকুন। গীবত, মিথ্যা, হিংসা পরিহার করুন এবং নেক আমল বাড়ান।

৮. নফল রোজার অভ্যাস: শাবান মাসে রাসুল (সা.) সর্বাধিক নফল রোজা রাখতেন। রজব-শাবানে আইয়্যামে বিজ (১৩, ১৪, ১৫ তারিখ) বা সোম-বৃহস্পতিবার রোজা রাখলে রমজানে অভ্যস্ত হওয়া সহজ হয়।

৯. দোয়ার তালিকা তৈরি: রমজান দোয়া কবুলের বিশেষ মাস। আগে থেকে দোয়ার লিস্ট তৈরি করুন যাতে মূল্যবান সময় নষ্ট না হয়।

১০. পারিবারিক ও সময় ব্যবস্থাপনা: পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলে প্রস্তুতি নিন। সুশৃঙ্খল রুটিন তৈরি করুন, অপ্রয়োজনীয় অনলাইন বা টিভি কমান।

১১. শারীরিক প্রস্তুতি: সুষম খাবার, পর্যাপ্ত পানি ও ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলুন যাতে রমজানে ক্লান্তি না হয়।

১২. দৈনিক আত্মমূল্যায়ন: প্রতিদিন নিজের আমল পর্যালোচনা করুন এবং ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন।

রজব মাস ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে (২০২৫ সালের ডিসেম্বরে) এবং আগামী রমজান ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে সম্ভবত শুরু হবে। এখনই প্রস্তুতি শুরু করুন। আল্লাহ–তাআলা আমাদের সবাইকে রমজানের পূর্ণ বরকত লাভের তাওফিক দিন এবং ইবাদত কবুল করুন। আমিন।

[email protected]

 ইসমত আরা : শিক্ষক, লেখক

আরও পড়ুন