অনাথ ও দরিদ্রের প্রতি কোমলতা সুরা দোহার শিক্ষা

সুরা দোহা অর্থ মধ্যস্থ রশ্মি। এটি পবিত্র কোরআনের ৯৩তম সুরা এবং মক্কায় অবতীর্ণ। এর ১ রুকু, ১১ আয়াত। একবার কিছুদিন ঐশী বাণী বন্ধ থাকায় মুহাম্মদ (সা.) বিমর্ষ হয়ে পড়লে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বলা হয় তাঁকে পরিত্যাগ করা হয়নি।

যে অনাথ ছিল তাকে আশ্রয়, যে ভুল পথে ছিল তাকে পথের হদিস এবং যে অভাবী ছিল তাকে অভাবমুক্ত করা হয়। পিতৃহীন ও সাহায্যপ্রার্থীর প্রতি কঠোর না হয়ে সুরাটিতে আল্লাহর অনুগ্রহ বর্ণনা করতে বলা হয়েছে।

মুহাম্মদ (সা.)–এর ওপর কিছুদিন আল কোরআন নাজিল হওয়া বন্ধ ছিল। তখন অবিশ্বাসীরা ঠাট্টা- বিদ্রূপ করতে শুরু করে বলতে লাগল, আজ কিছু নাজিল হয়নি? আসলে আল্লাহ তোমাকে পরিত্যাগ করেছেন, তোমার ওপর অখুশি হয়েছেন। এতে মুহাম্মদ (সা.) কিছুটা বিচলিত ও মর্মাহত হয়ে পড়েছিলেন। মনের কোণে হয়তো এমন চিন্তাও উঁকি দিয়েছিল যে, তাঁর কোনো ভুল হয়ে যাচ্ছে না তো? সেই সময়েই সুরা আদ দোহা নাজিল হয় মুহাম্মদ (সা.)–কে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য এবং কঠিন সময়ে আশার বাণী এবং শক্তি জোগানোর জন্য।

আরও পড়ুন

সুরা দোহার সারকথা

এ সুরার শুরুতে প্রথম আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘শপথ দিনের প্রথম প্রহরের!’ দোহা বলতে এমন একটা সময় বোঝায় যখন দিনের কর্মব্যস্ততা শুরু হয় এবং সূর্যের আলোও প্রখর নয়। দ্বিতীয় আয়াতে ‘আর শপথ রাত্রির যখন তা আচ্ছন্ন করে!’ ‘লাইল’ বলতে রাত বোঝায়। যখন তা গভীর ও নিঝুম হয়। তখন শান্তি ও বিশ্রাম নেয় মানুষ। সূর্যের আলোর উপস্থিতি দোহা ও অনুপস্থিতি লাইল এর মাধ্যমে ওহির উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

তৃতীয় আয়াতে ‘তোমার প্রতিপালক তোমাকে ছেড়ে যাননি ও তোমার ওপর তিনি অসন্তুষ্ট নন।’ আল্লাহ সরাসরি নবীকে আশ্বস্ত করেছেন যে, তিনি তাঁকে পরিত্যাগ করেননি বা তার কাজে অখুশি হয়ে বিরূপ হননি।

চতুর্থ ও পঞ্চম আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমার জন্য পরকাল ইহকালের চেয়ে ভালো। তোমার প্রতিপালক তো তোমাকে অনুগ্রহ করবেনই, আর তুমিও সন্তুষ্ট হবে।’ উত্তম ভবিষ্যৎ ও সন্তোষজনক প্রতিদান এর আগাম সুসংবাদ জানিয়ে আরও প্রফুল্ল ও উজ্জীবিত করতে চেয়েছেন তাঁর প্রিয় নবীকে।

আরও পড়ুন

ষষ্ঠ থেকে অষ্টম আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তিনি কি তোমাকে পিতৃহীন অবস্থায় পাননি, আর তোমাদের আশ্রয় দেননি? তিনি কি তোমাকে ভুল পথে পেয়ে পথের হদিস দেননি? তিনি তোমাকে কি অভাবী দেখে অভাবমুক্ত করেননি?’ আল্লাহ তাঁর নবীকে এতিম, সঠিক পথপ্রত্যাশী এবং অভাবী অবস্থায় পেয়েছেন। এরপর তাঁর অবস্থার উন্নতি সাধন করেছেন।

নবম আয়াতে বলা হয়েছে, ‘সুতরাং তুমি পিতৃহীনদের প্রতি কঠোর হয়ো না।’ এতিমদের প্রতি কঠোর না হওয়ার নির্দেশনা এসেছে।

দশম আয়াতে আছে, ‘আর যে সাহায্য চায় তাকে ভর্ৎসনা কোরো না।’ অর্থাৎ ভিক্ষাপ্রার্থীদের তিরস্কার করতে নিষেধ করা হয়েছে।

সূত্র: কোরান শরিফ: সরল বঙ্গানুবাদ, অনুবাদ: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন

আরও পড়ুন