খাদিজা (রা.) কী ধরনের ব্যবসা করতেন

সাইয়িদা খাদিজা (রা.)–র জন্য জীবন সামলে নেওয়া খুব সহজ ছিল না। স্বামীর বিয়োগ–বেদনায় ক্লিষ্ট ছিল তাঁর জীবন। কঠিন সেই সময় সামলে নিতে ব্যবসায় মনোযোগী হন তিনি। জীবনের সব বিপদ-আপদ অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে সামলে নেন খাদিজা (রা.)। কোনো হতাশা থামিয়ে দিতে পারেনি তাঁকে। একাকী জীবনটা এগিয়ে নেওয়ার তাগিদেই সম্পদ বৃদ্ধি এবং ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন তিনি। বহুকাল ধরে পিতা যে ব্যবসার কাজে নিমগ্ন ছিলেন এবং স্বামী যে ব্যবসার সমৃদ্ধিতে দেশ-বিদেশে সফর করেছেন; সেই ব্যবসা এগিয়ে নিতে পূর্ণভাবে ব্যবসায় মনোযোগী হয়েছেন খাদিজা (রা.) (খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ (রা.), শাইখ আব্দুল হামিদ মাহমুদ তাহমাজ ও শাইখ ইবরাহিম মুহাম্মাদ হাসান আল জামাল, অনুবাদ: মাহমুদ সিদ্দিকী, দ্বীন পাবলিকেশন্স, পৃষ্ঠা: ৪৯-৭৭)। তখনো কি তিনি জানতেন, ব্যবসার এই পথে তাঁর স্বপ্নপুরুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে? তিনি কি আদৌ ভেবেছেন, বাণিজ্যের এই অঙ্গনে একজন মহামানবের সংস্পর্শে ধন্য হবে তাঁর ভবিষ্যৎ জীবনসংসার?

আরও পড়ুন

খাদিজা (রা.) কী ধরনের ব্যবসা করতেন, এ ব্যাপারে ইতিহাসের গ্রন্থগুলোতে স্পষ্টভাবে বিস্তারিত বিবরণ তেমন পাওয়া যায় না। তবে তাঁর ব্যবসা–সংক্রান্ত আলোচনায় যে বিষয় বারবার উল্লেখিত হয়েছে, সেটা হলো দূরদেশে বা দূরবর্তী শহর-নগরীতে তাঁর বাণিজ্য কাফেলা যেত এবং নারী হওয়ার কারণে যেহেতু তিনি কাফেলার সঙ্গে যেতে পারতেন না; এ জন্য ব্যবস্থাপক নিয়োগ করতেন। এসব বর্ণনা থেকে অনুমান করে ইতিহাসবিদেরা বলেছেন, খাদিজা (রা.)-এর মূল ব্যবসা ছিল আমদানি ও রপ্তানি। সিরিয়ার মতো দূরবর্তী বাজারে তিনি পণ্য রপ্তানি করতেন এবং তাঁর নিয়োগ করা ব্যবস্থাপকেরা মক্কার বাজারে বিক্রি করার জন্য দূরবর্তী শহর ও বাজার থেকে পণ্য কিনে আনতেন (খাদিজা আল-কুবরা: দ্য ফাস্ট মুসলিম ওম্যান ওয়াজ অ্যাকচুয়্যালি আ বিজনেস ওম্যান, সারাহ পেরেচ, মুসলিম বিজনেস ওম্যান, মিডিয়াম.কম)

আরও পড়ুন

প্রায় সব অঞ্চলেই কুরাইশের বাণিজ্য–কাফেলার যাতায়াত ছিল। এ কারণে তারা প্রত্যেক এলাকার পণ্যসামগ্রী নিয়ে আসত। নিজেদের এলাকার পণ্য অন্য এলাকায় নিয়ে গিয়ে বিক্রয় করত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আমি কি তাদের একটি নিরাপদ হারামে প্রতিষ্ঠিত করিনি, যেখানে সর্বপ্রকার ফলমূল আমদানি হয় আমার দেওয়া রিজিকস্বরূপ? কিন্তু তাদের অধিকাংশই এটা জানে না’ (সুরা কাসাস, আয়াত: ৫৭)

ইতিহাসের বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায়, সে সময়ে সাধারণত তিন ধরনের ব্যবসায়িক পণ্যের আদান-প্রদান হতো:

১. মসলা, সুগন্ধিজাতীয় দ্রব্যাদি, আতর, রেশম, কাতান, জাফরান, কাঁচা খেজুর ও মোনাক্কা প্রভৃতি।

২. স্বর্ণ, রুপা, হীরা, তামা ও লোহার পাত্র।

৩. গোশত, চামড়া, হাওদা, উল, হাতির দাঁত, ছাগল-ভেড়া ইত্যাদি।

আরব অঞ্চলে শাম থেকে সবচেয়ে বেশি আমদানি করা হতো গম, আটা, জয়তুনের তেল ও লোবনানের তৈরি সামগ্রী। রপ্তানি পণ্যসামগ্রীর মধ্যে ছিল আরবে উৎপন্ন চর্বি–জাতীয় দ্রব্যাদি, কাঁচা খেজুর, বাবলার মতো দেখতে কারাজগাছের পাতা, যা চামড়া রং করার কাজে ব্যবহার হতো, উট ও অন্যান্য প্রাণীর পশম, চামড়া, ঘি ইত্যাদি।

আরও পড়ুন

এ ছাড়া তায়েফের মোনাক্কাও রপ্তানি করা হতো। মক্কার ব্যবসায়ীরা সাধারণত এসব পণ্য শীতকালে ইয়ামান ও গ্রীষ্মকালে শামে নিয়ে যেত। এ থেকে অনুমান করা যায়, খাদিজা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মাধ্যমেও আরব অঞ্চলে যা উৎপন্ন হতো ওই সব পণ্য বিক্রির জন্য প্রেরণ করেছেন এবং শামের যেসব পণ্যের চাহিদা আরব অঞ্চলে ছিল, সেগুলো এখানে বিক্রির জন্য আমদানি করেছেন (তারীখুল মাক্কাতিল মুকাররামা, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা: ৪৩৭; মাক্কা ওয়াল মদীনা ফিল জাহেলিয়াত ওয়া আহদির রাসুলি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, পৃষ্ঠা: ১৭৫, ১৭৯)

মিরাজ রহমান: লেখক

আরও পড়ুন