দাবদাহে বৃষ্টির জন্য দোয়া ও ইসতিসকার নামাজ

ইসতিসকা শব্দের অর্থ পানি প্রার্থনা করা বা বৃষ্টির জন্য দোয়া করা। যখন অনাবৃষ্টির কারণে দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে; নদী-খাল-জলাশয় শুকিয়ে যায়; মাঠে ফসলের ক্ষতি হয়; গাছপালা, উদ্ভিদ ও তৃণলতা জীর্ণ হয়ে যায়, জীবজন্তু ও পশুপাখির কষ্টের সীমা থাকে না; এমন বিপর্যয় থেকে রেহাই পেতে তখন আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হয়। অতীত গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে আকুতিভরে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা জানানোকে ইসতিসকা বলা হয়। এই নামাজকে ইসতিসকার নামাজ বলে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা সবর ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৩) 

সময় ও স্থান: সূর্যোদয়ের পর ২৩ মিনিটের মতো সময় অতিবাহিত হলে ইসতিসকার নামাজ পড়া যায়। উন্মুক্ত প্রান্তরে আদায় করা সুন্নত। প্রয়োজনে মসজিদেও পড়া যায়।

পদ্ধতি: অজু-গোসল করে পুরুষেরা, শিশুরা ও বৃদ্ধরা গরিবানা পোশাকে হেঁটে অবনত মাথায় খোলা মাঠে একত্র হবেন। সম্ভব হলে গৃহপালিত পশুও সঙ্গে নিতে পারেন। ময়দানে যাওয়ার আগে কিছু দানখয়রাত করবেন। দায়দেনা ও ঋণ পরিশোধ করবেন। সবাই খাঁটি অন্তরে তওবা করবেন। 

ইমাম-মুসল্লি সবাই জামাকাপড় উল্টিয়ে পরিধান করবেন। আজান ও ইকামত ছাড়া, ইমাম বা পরহেজগার মুরব্বির ইমামতিতে নামাজ আদায় করবেন। প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমার পর সাতবার তাকবির দিতে হবে; আর দ্বিতীয় রাকাতের রুকুর আগে পাঁচবার তাকবির দিতে হবে। প্রত্যেক তকবিরের সময় হাত ওঠাবে এবং তাকবিরগুলোর মাঝখানে সামান্য বিরতি নিয়ে আল্লাহর প্রশংসা এবং রাসুল (সা.)-এর ওপর দরুদ শরিফ পড়তে হবে। 

অনেকের মতে, এই তাকবিরগুলোর প্রয়োজন নেই। কিরাত উচ্চ স্বরে পড়তে হবে। নামাজের পরে ইমাম সমভূমিতে দাঁড়িয়ে পরপর দুটি খুতবা দেবেন। খুতবায় বেশি বেশি ইস্তিগফার ও কোরআনের তওবা-ইস্তিগফার ও মাগফিরাতের আয়াত তিলাওয়াত করা বাঞ্ছনীয়। 

খুতবার পর ইমাম কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে দুই হাত উল্টো করে সর্বোচ্চ ওপরে উত্তোলন করে বৃষ্টির জন্য কান্নাভরে করুণ স্বরে দোয়া করবেন। দোয়ায় কোরআন করিম ও হাদিস শরিফে বর্ণিত মাছনুন দোয়াগুলো বেশি পড়া উত্তম। মোনাজাতে ইসতিসকার খাছ দোয়াগুলো পড়া মুস্তাহাব। (সূত্র: আল হিদায়া, ই. ফা. বা.; আল ফিকহ আলা মাজাহিবিল আরবাআহ, হিছনুল মুসলিম) 

ইসতিসকার দোয়া: আল্লাহুম্মাছকিনা গায়ছান মুগিছান মারিয়ান মারি ‘আন, নাফিআন, গায়রা দার্র, ‘আজিলান গায়রা আজিল। আল্লাহুম্মা আগিছনা, আল্লাহুম্মা আগিছনা, আল্লাহুম্মা আগিছনা। আল্লাহুম্মাছকি ইবাদাকা ওয়া বাহায়িমাকা ওয়ানশুর রহমাতাকা ওয়া আহয়ি বালাদাকাল মায়্যত। আমিন! বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন! অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি দয়াপরবশ হয়ে অতিশিগগির আমাদের রহমতের বৃষ্টি দান করুন, যা আমাদের উপকারে আসে এবং যা আমাদের ক্ষতির কারণ না হয়। অতিদ্রুত; বিলম্বে নয়। হে আল্লাহ! বৃষ্টি দিন, হে আল্লাহ! বৃষ্টি দিন, হে আল্লাহ! বৃষ্টি দিন। হে আল্লাহ! আপনার বান্দাদের পানি দিন, পশু-প্রাণীগুলোকে পানি দিন, আপনার রহমত প্রসারিত করুন, মৃত ভূমিকে সজীব করে দিন। হে সকল দয়াময়ের শ্রেষ্ঠ দয়ালু, আপনি আমাদের দোয়া কবুল করুন।’ (আবু দাউদ) 

পরপর তিন দিন এই আমল করা মুস্তাহাব। ইসতিসকার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পর অথবা ইসতিসকার নামাজ একদিন আদায় করার পর যদি বৃষ্টি হয়; তবু তিন দিন এই আমল করা মুস্তাহাব। ইসতিসকার দিনে রোজা রাখা মুস্তাহাব। এই নামাজ জামাত ছাড়াও আদায় করা যায়। এই নামাজ জামাত ছাড়া আদায় করলে খুতবার প্রয়োজন নেই। নারীরাও গৃহে বা বাসাবাড়িতে ইসতিসকার নামাজ একা একা আদায় করতে পারেন। (দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম, ই. ফা. বা.)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]