ইসলাম মানুষের জীবনকে কেবল ইবাদতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেনি; বরং দৈনন্দিন সাধারণ কাজেও শুদ্ধতা, শালীনতা ও শৃঙ্খলার শিক্ষা দিয়েছে। টয়লেট ব্যবহার, যা নিত্যপ্রয়োজনীয় ও ব্যক্তিগত একটি কাজ, সেখানেও ইসলাম নির্দিষ্ট আদব ও দোয়া নির্ধারণ করেছে।
এসব আদব মানলে যেমন আত্মিক পরিচ্ছন্নতা রক্ষা হয়, তেমনি শারীরিক সুস্থতাও নিশ্চিত হয়।
টয়লেটে প্রবেশের আগে দোয়া
টয়লেটে প্রবেশের আগে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার দোয়া পড়া সুন্নাহ। রাসুল (স.) টয়লেটে প্রবেশের আগে এই দোয়া পড়তেন—
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবায়িছ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই সব নাপাক ও ক্ষতিকর জিনিস (শয়তান ও অপবিত্রতা) থেকে।
এ দোয়ার মাধ্যমে অদৃশ্য ক্ষতি ও অশুভ প্রভাব থেকে নিরাপত্তা প্রার্থনা করা হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৪২; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৩৭৫)
টয়লেটে প্রবেশের আদব
টয়লেটে বাম পা দিয়ে প্রবেশ করা সুন্নাহ। কারণ অপবিত্র স্থানে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাম দিককে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে—এটি শিষ্টাচারের অংশ। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৬৮)
টয়লেটে প্রবেশের সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ না করা, কথা না বলা এবং অপ্রয়োজনে সময় নষ্ট না করাও আদবের অন্তর্ভুক্ত। রাসুল (স.) প্রয়োজন ছাড়া টয়লেটে কথা বলা অপছন্দ করতেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৬)
কিবলার দিকে মুখ করা সংক্রান্ত বিধান
টয়লেট করার সময় কেবলার দিকে মুখ বা পিঠ করা নিষেধ। এটি স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৯৪; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৪)
তবে ঘরের ভিতরে নির্মিত টয়লেটের ক্ষেত্রে ফিকহবিদদের মধ্যে শিথিলতা আছে; তবুও সম্মানবোধ বজায় রাখা উত্তম বলে অধিকাংশ আলেম মত দিয়েছেন। (ইবনে কুদামা, আল-মুগনি, পৃ. ১৮৭, দারুল ফিকর, দামেস্ক, ১৯৯৭)
পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা
মলমূত্র ত্যাগের পর পানি বা বৈধ উপায়ে অপবিত্রতা দূর করা আবশ্যক। রাসুল (স.) এ–ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন এবং পবিত্রতা ছাড়া নামাজ কবুল হয় না বলে জানিয়েছেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২২৩)
আধুনিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞানও দেখায়, পানি দিয়ে পরিস্কার করলে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে।
টয়লেটে থাকাকালে যা বর্জনীয়
টয়লেটে থাকা অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত, জিকির করা, কথা বলা বা ফোনে কথা বলা অনুচিত। এটি শালীনতা ও আল্লাহর নামের সম্মানের পরিপন্থী।
এছাড়া দীর্ঘ সময় বসে থাকা শারীরিকভাবে ক্ষতিকর—বিশেষত অর্শ ও মূত্রনালির সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়, যা চিকিৎসা গবেষণায় প্রমাণিত। তাই অহেতুক সেখানে বসে থাকা উচিত নয়।
টয়লেট থেকে বের হওয়ার দোয়া
টয়লেট থেকে বের হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা সুন্নাহ।
উচ্চারণ: গুফরানাকা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
রাসুল (স.) টয়লেট থেকে বের হয়ে এই সংক্ষিপ্ত দোয়াটি পড়তেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৩০)
অথবা
উচ্চারণ : গুফরানাকা আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আজহাবা আন্নিল আজা ওয়া আফানি।
অর্থ : (হে আল্লাহ!) আপনার কাছে ক্ষমা চাই। সকল প্রশংসা ওই আল্লাহর জন্য; যিনি ক্ষতি ও কষ্টকর জিনিস থেকে আমাকে মুক্তি দিয়েছেন।
টয়লেট থেকে বের হওয়ার আদব
টয়লেট থেকে বের হওয়ার সময় ডান পা আগে বের করা সুন্নাহ। পরিষ্কার স্থানে প্রবেশের ক্ষেত্রে ডান দিককে অগ্রাধিকার দেওয়া ইসলামি শিষ্টাচারের অংশ। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৬৮)
হাত ভালোভাবে ধোয়া এবং পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা ইসলামের মৌলিক শিক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা আধুনিক জনস্বাস্থ্য নীতিরও ভিত্তি।
টয়লেট ব্যবহারের আদব ও দোয়া ইসলামের সৌন্দর্যকে স্পষ্ট করে, যেখানে ইবাদত ও দৈনন্দিন জীবন একে অন্যের পরিপূরক। এসব আদব মানলে মানুষ যেমন আল্লাহর স্মরণে থাকে, তেমনি শারীরিক ও সামাজিক পরিচ্ছন্নতাও বজায় থাকে।
ছোট বলে অবহেলা নয়—ইসলামে প্রতিটি কাজই নিয়ত ও আদবের মাধ্যমে ইবাদতে রূপ নিতে পারে।