অনেক হজ গাইডে আপনারা হজের জন্য বিভিন্ন দীর্ঘ দোয়া দেখবেন—এগুলো দেখে ঘাবড়াবেন না; ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আসলে ওমরাহ ও হজ খুবই সহজ। আমাদের শুধু সেটাই অনুসরণ করতে হবে, যা আমাদের রাসুল (সা.) দেখিয়ে দিয়ে গেছেন; তা হলো সুন্নাহ। কে, কী করল বা পড়ল এটা মুখ্য নয়—সহিহ হাদিস অনুসরণ করা এ জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এবার আসা যাক দোয়াগুলো প্রসঙ্গে। কাবা শরিফের চারদিকে ঘোরাকে বলা হয় তাওয়াফ। আর এই তাওয়াফ শেষ করতে হয় কাবাঘরের চারদিকে সাতটি চক্করের মাধ্যমে। সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে ছোটাছুটি করাকে বলা হয় সাঈ।
আপনাকে যা মুখস্থ করতে হবে, তার একটি হলো তালবিয়া ও অন্যটি তাকবির। তবে এটি শুধু মুখস্থ করলে চলবে না—এগুলোর অর্থও আপনাকে জানতে হবে। তাহলেই আপনার ভেতরে এর অনুভূতি আসবে। এই তালবিয়া ও তাকবির কী, সেটি আমরা জেনে নেব।
হজের প্রকার
তিন পদ্ধতিতে হজ পালন করা যায়।
হজে কিরান:
একটিমাত্র নিয়তে বা ইহরামে ওমরাহ ও হজ করা হয়। হজ শেষে পশু হাদি (কোরবানি) দিতে হয়।
হজে তামাত্তু:
এ প্রকারের হজ হয় দুটি নিয়তে বা ইহরামে। প্রথমে ওমরাহর নিয়ত করে ওমরাহ পালন করতে হয়। তারপর ইহরাম থেকে বের হয়ে পরবর্তী সময়ে আবার হজের নিয়ত বা ইহরামে প্রবেশ করে হজ সম্পন্ন করতে হয়। অর্থাৎ ওমরাহ ও হজের মধ্যে একটা সময়ের ব্যবধান থাকে। হজ শেষে পশু হাদি দিতে হয়।
হজে ইফরাদ:
এ প্রকারের হজে শুধুই হজ পালন করা হয়, ওমরাহ করা হয় না।
রাসুল (সা.) তাঁর জীবনে চারটি ওমরাহ আর একটিমাত্র হজ পালন করেছেন। সেই হজ ছিল কিরান পদ্ধতিতে। তবে তাঁর সাহাবিদের মধ্যে অনেকেই তাঁর সঙ্গে তামাত্তু পদ্ধতিতে হজ পালন করেছিলেন, যা রাসুল (সা.)–এর নির্দেশে হয়েছিল।
বেশির ভাগ মুসলমান ‘হজে তামাত্তু’ পদ্ধতিতে হজ পালন করে থাকেন। বলা হয়ে থাকে, সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতির হজ হলো হজে তামাত্তু। কারণ, রাসুল (সা.) তাঁর অনুসারীদের এ পদ্ধতিতে হজ পালন করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন। তিনি নিজে যেহেতু তাঁর বিদায়ী হজে কোরবানির পশু এনেছিলেন, তাই তিনি হজে কিরান পালন করেছিলেন; আর সাহাবিদের মধ্যে যাঁরা কোরবানির পশু আনেননি, তাঁদের তিনি প্রথমে ওমরাহ করার নির্দেশ দেন এবং পরবর্তী সময়ে হজ পালন করে পশু কোরবানির নির্দেশ দেন। অর্থাৎ হজে তামাত্তু পালনের নির্দেশ দেন।
আমাদের আলোচনা ও বিশ্লেষণ হজে তামাত্তু নিয়ে। হজে তামাত্তুর ক্ষেত্রে আপনি হলেন ‘মুতামাত্তি’। একজন মুতামাত্তিকে মিকাতে প্রবেশের আগেই ইহরাম ধারণ করতে হবে।
মিকাত:
মিকাত হলো কাবাঘর থেকে বিভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত পাঁচটি স্থান, যেখানে প্রবেশের আগে একজন হাজযাত্রীকে ইহরাম ধারণ করতে হয়। পাঁচটি মিকাতের চারটিই মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক নির্ধারিত আর অন্যটি ঠিক করে দেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমর ইবনে খাত্তাব (রা.)।
বাংলাদেশ থেকে মুতামাত্তিরা যদি প্রথমে মক্কায় যান, তাহলে তাঁদের জন্য মিকাত হবে ‘ইয়ালামলাম’। উড়োজাহাজ ইয়ালামলাম আসার আগেই মুতামাত্তিকে ইহরাম ধারণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সাধারণত বিমানের পাইলট মিকাত আসার আগে ঘোষণা দিয়ে থাকেন, যাতে করে হজযাত্রীরা নিয়ত করে নিতে পারেন।
আর যাঁরা প্রথমে মদিনা যাবেন, তাঁরা মদিনা থেকে মক্কায় আসার সময় ইহরাম ধারণ করে রওনা হবেন। মদিনা থেকে আসার সময় মিকাত হলো ‘জুল হুলাইফা’।