নামাজ ইসলামের অন্যতম প্রধান ইবাদত এবং এটি বিশুদ্ধভাবে আদায়ের জন্য কিছু স্থানগত ও সময়গত বিধি-নিষেধ রয়েছে। কবর সংলগ্ন মসজিদে নামাজ আদায় করা এবং ওয়াক্তের মধ্যে নামাজ আদায় নিয়ে ফিকহশাস্ত্রের গভীরে আলোচনা রয়েছে।
কবর বিশিষ্ট মসজিদে নামাজের হুকুম
কবর সংলগ্ন মসজিদে নামাজ আদায় করা নিয়ে উম্মাহর আলেমদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। এই মতপার্থক্যের মূল ভিত্তি হলো রাসুল (সা.)-এর কঠোর নিষেধাজ্ঞা সংবলিত হাদিসসমূহ।
রাসুল (সা.) কবরের পাশে বা কবরকে কেন্দ্র করে ইবাদত করতে কঠিনভাবে নিষেধ করেছেন। কারণ হলো, শির্ক বা আল্লাহর সঙ্গে অংশীদারিত্বের পথ বন্ধ করা।
প্রথম নিষেধাজ্ঞা: বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন: “আল্লাহ ইয়াহুদিদের উপর অভিসম্পাত করুন, তারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৩৫; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৫৩২)
দ্বিতীয় নিষেধাজ্ঞা: মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, মৃত্যুর পাঁচ দিন আগে রাসুল (সা.) বলেছেন: “তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা তাদের নবী ও সৎকর্মশীলদের কবরকে মসজিদ বানিয়ে নিত। সাবধান! তোমরা কবরকে মসজিদ বানাবে না। আমি তোমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করছি।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৫৩২)
তৃতীয় নিষেধাজ্ঞা: বুখারি ও ইবনে মাজাহ ছাড়া অন্য হাদিস গ্রন্থসমূহে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন: “তোমরা কবরের দিকে ফিরে নামাজ আদায় করো না এবং তার উপর বসো না।” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৩২২৮; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৭০)
ফুকাহাদের মতপার্থক্য ও কারণ
আলেমগণ এই নিষেধাজ্ঞাগুলোর কারণ এবং এর প্রয়োগের ক্ষেত্রে ভিন্নমত পোষণ করেছেন:
তিন ইমাম (মালেক, আবু হানিফা, শাফেঈ) বলেছেন, নামাজ সহিহ, মাকরুহ নয়। তবে কবর যদি মুসল্লির সামনে থাকে, তবে মাকরুহ, কিন্তু নামাজ সহিহ হবে। তাঁদের মতে, কবরের পাশে নামাজ আদায় নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ হলো নাপাককি বা অপবিত্রতা, যা কবরে থাকতে পারে। যেহেতু নাপাকির বিষয়টি নিশ্চিত নয়, তাই নামাজ বাতিল হবে না।
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল বলেন, কবর সংলগ্ন মসজিদে নামাজ আদায় করা হারাম। তাঁর মতে, নিষেধাজ্ঞার মূল কারণ হলো মুশরিকদের সঙ্গে সাদৃশ্য পরিহার করা। কারণ, ইয়াহুদি ও খ্রিষ্টানরা তাদের পূজনীয়দের কবরকে ইবাদতের স্থানে পরিণত করত।
এই মতকে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া ও তাঁর শিষ্য ইবনুল কাইয়্যিম সমর্থন করেছেন। এই মতে, কবর মসজিদে থাকার কারণে সেখানে নামাজ আদায় করা উচিত নয়। (মাজমু আল-ফাতাওয়া, ২২/২৭২, মাকতাবাতুল উবাইকান, রিয়াদ, ১৯৯৮)
অতএব, যদি আপনি অতীতে এ ধরনের মসজিদে নামাজ আদায় করে থাকেন, ইনশাআল্লাহ তা সমস্যাযুক্ত হবে না। তবে ভবিষ্যতের জন্য কবর নেই এমন মসজিদে নামাজ আদায় করাই আপনার জন্য কর্তব্য।