সাহায্য করতে ফেরেশতারা নেমে এসেছিলেন
ইসলামের সোনালি সময়ের একটি ঘটনা। নবীর সাহাবিদের কাছে অনেক দূরদূরান্ত থেকে ছাত্ররা আসত শিক্ষা নিতে। অনেকে মাইলের পর মাইল ভ্রমণ করত শুধু একটি হাদিস শুনতে। অনেক সাহাবি তাঁর ছাত্রদের নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণে বের হতেন। বিশেষ করে ইসলামের প্রসিদ্ধ স্থানগুলোতে যেখানে বড় কোনো ঘটনা ঘটেছিল।
আজ যে ঘটনা বলব, সেটি মদিনার একজন আনসার সাহাবি বর্ণনা করেছেন। তাঁর নাম সাদ ইবনে রাবি (রা.)।
তিনি তাঁর কিছু ছাত্রকে নিয়ে বদরের প্রান্তরে গিয়েছিলেন। সেখানে ইসলামের প্রথম যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সাদ ইবনে রাবি (রা.) ততদিনে তাঁর দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি তাঁর ছাত্রদের উদ্দেশে বললেন, ‘এই সেই স্থান, যেখানে মুসলিমদের সাহায্য করার অন্য আকাশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ফেরেশতা নেমে এসেছিলেন। আর আমি যা বলছি, তা নিজের চোখ দিয়ে দেখেছি এবং এটা যে ঘটেছে, তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই।’
এরপর তিনি বদরের যুদ্ধের ঘটনা বর্ণনা করতে লাগলেন। ঘটনাটি সুরা আনফালেও রয়েছে।
‘যখন তোমাদের প্রতিপালক ফেরেশতাদের নির্দেশ দান করলেন, আমি সঙ্গে রয়েছি তোমাদের। সুতরাং তোমরা মুসলিমদের চিত্তকে ধীরস্থির করে রাখ।’
সাদ ইবনে রাবি (রা.) বলেন, ‘ফেরেশতারা যুদ্ধ শুরুর আগেই এসে জমা হচ্ছিলেন। তাঁরা আমাদের মতো পোশাকে আমাদের পরিচিত সাহাবিদের রূপে নেমে আসছিলেন। তাঁরা এসে বলতে লাগলেন, কোনো ভয় নেই। আল্লাহ তোমাদের সঙ্গে আছেন। এই বিশাল বাহিনী আল্লাহর সামনে কিছুই না।’
এদিকে ইবলিস শয়তানও দেখছিল কীভাবে জিব্রাইল (আ.) ও অন্য ফেরেশতারা নেমে আসছেন মুসলিমদের সাহায্য করার জন্য। শয়তান আগে থেকে মক্কার কাফিরদের প্ররোচনা দিচ্ছিল মদিনার মুসলিমদের আক্রমণ করার জন্য। সে বলেছিল, তোমাদের হাতেই মুহাম্মদ ও তাঁর বাহিনী ধ্বংস হবে।’
এরপর যখন সে ফেরেশতাদের নেমে আসতে দেখল, সে বলল, ‘আমি যা দেখছি তা তোমরা দেখছ না; আমি ভয় করি আল্লাহকে। আর আল্লাহর আজাব বড় কঠিন।’ (সুরা আনফাল, আয়াত: ৪৮)
শয়তান সুরাকা নামের এক ব্যক্তির রূপ ধারণ করে বলল, ‘হে মক্কাবাসী, আমি যা দেখছি তোমরা তা দেখছ না। আজ এই মুসলিমদের বাহিনীর সঙ্গে তোমরা পেরে উঠবে না। তোমাদের এখান থেকে দ্রুত সরে যাওয়া উচিত।’
আবু জাহেল এ কথা শুনে চিৎকার দিয়ে উঠল, ‘সুরাকার কথায় কেউ কান দেবে না, সে মিথ্যা বলছে। সে নিশ্চয়ই মুসলিমদের গুপ্তচর।’
আবু জাহেলের এই আচরণে মহানবী (সা.) বলেছিলেন, ‘আবু জাহেল হলো এই সময়ের ফেরাউন। ফেরাউন যেভাবে অলৌকিক দেখার পরও মুসা (আ.) ও হারুন (আ.)–এর বিপক্ষে কথা বলেছিল, আবু জাহেলও তা–ই করেছে।’
শেষ পর্যন্ত বদরের যুদ্ধে আবু জাহেল ও তার সঙ্গীরা নিহত হলো। মুসলিমরা অল্পসংখ্যক বাহিনী নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন।
এ ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা হলো, আল্লাহ যাদের পাশে রয়েছেন, তাদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। তাদের বিপক্ষে যত বড় শক্তিই থাকুক না কেন, তাদের বিজয় অবধারিত।
অনুবাদ: সাজিদ আল মাহমুদ