মহানবী (সা.)-এর কথা বলার ভঙ্গি

কথা মানুষের ব্যক্তিত্ব প্রকাশের সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ। কখনো কথাই কোনো মানুষের পূর্ণ ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করে। নবীজির (সা.) চলাফেরার ধরন ও অন্যান্য প্রকৃতির বাকভঙ্গিমাও ছিল স্মরণীয়। নবীজির (সা.) একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ছিলো মানুষের সামনে বক্তব্য দিয়ে কোনো বিষয়কে স্পষ্ট করে তোলা।

আল্লাহ বলেন, এবং আপনার প্রতি এই স্মারক (অর্থাৎ কুরআন) অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি মানুষের সামনে তা স্পষ্ট করে দেন, যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে, এবং যাতে তারা গভীরভাবে চিন্তা করে। (সুরা নাহল, আয়াত: ৪৪)

 যেভাবে তিনি কথা বলতেন

নবীজি (সা.) কথা বলতেন সুস্পষ্টভাবে ও সবিস্তারে। শ্রোতামাত্রই তার কথা বুঝতে পারত। আয়েশা (রা.) বলেন, তিনি এমনভাবে কথা বলতেন যে, কেউ গুণতে চাইলে গুণতে পারত। (বুখারি, হাদিস: ৩,৫৬৮)

হাদিসে আছে, ‘তোমরা যত দ্রুত কথা বলো, তিনি তত দ্রুত বলতেন না। তিনি কথা বলতেন থেমে থেমে। প্রত্যেক শ্রোতা তাঁর কথা বুঝতে পারত।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩,৬৩৯)

আনাস (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) একটি কথা তিনবার পুনরাবৃত্তি করতেন, যেন তা বুঝে নেওয়া যায়। (বুখারি, হাদিস: ৯৫)

আরও পড়ুন

যেভাবে তিনি উপদেশ দিতেন

সাহাবীদের নবীজি (সা.) কখনো কখনো উপদেশ দিতেন বটে, কিন্তু অতিরঞ্জন করতেন না। তাঁর উপদেশ ছিল অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী, সহমর্মী ও বিবেক–জাগানিয়া। ইবনে মাসউদ (রা.) বলেছেন, নবীজি (সা.) মাঝেমধ্যে আমাদের উপদেশ দিতেন, যেন আমরা বিরক্ত না হই। (বুখারি, হাদিস: ৬৮)

ইরবাজ ইবনে সারিয়া রা. বলেন, একদিন নবীজি (সা.) আমাদের নামাজ পড়ালেন। তারপর আমাদের দিকে ফিরে প্রভাবপূর্ণ উপদেশ দিলেন। আমাদের চোখ অশ্রুসিক্ত হলো, অন্তর ভীত হয়ে উঠল। (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৬০৭)

তাঁর উপদেশের ধরন বর্ণনা করে হামযা (রা.) বলেন, তিনি এমনভাবে আমাদের কাছে জান্নাত-জাহান্নামের কথা আলোচনা করতেন, যেন সেসব আমরা চোখের সামনে…। (মুসলিম, হাদিস: ২৭৫০)

আরও পড়ুন

যেভাবে তিনি ভাষণ দিতেন

দুর্যোগকালে অধিকাংশ সময় নবীজি (সা.) সাহাবিদের সমবেত করে ভাষণ দিতেন। নবীজি (সা.) ছিলেন একজন অপূর্ব বাগ্মী বক্তা। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) যখন ভাষণ দিতেন, তখন তাঁর চোখ লাল হয়ে যেত, আওয়াজ উচ্চকিত হতো এবং তাঁর রাগ তীব্র হতো। মনে হতো যেন কোনো সৈন্যদলকে সতর্ককারী বলছে, শত্রু তোমাদের ওপর সকালে বা সন্ধ্যায় ঝাঁপিয়ে পড়বে। (মুসলিম, হাদিস: ৮৬৭)

ইবনে ওমর (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) বলছিলেন, আল্লাহ–তাআলা কেয়ামতের দিন আকাশমণ্ডলি গুটিয়ে নেবেন। এরপর ডান হাতে একে ধরবেন আর বলবেন, আমিই মালিক। কোথায় অহঙ্কারীরা? কোথায় দাম্ভিকেরা? এরপর জমিনকে বাম হাতে গুটিয়ে নেবেন আর বলবেন, কোথায় অহংকারীরা? কোথায় দাম্ভিকেরা? ইবনে ওমর (রা.) বলেন, দেখলাম, ভাষণের প্রচণ্ডতায় মিম্বর নিচ থেকে দুলছে। এমনকি আমি ভাবছি, মিম্বরটি কি নবীজিকে নিয়ে পড়ে যাবে? (বুখারি, হাদিস: ৭৩১২)

নোমান ইবনে বাশীর (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) ভাষণে বললেন, আমি তোমাদের জাহান্নামের ভয় দেখাচ্ছি...। (এত জোরে বললেন যে,) কেউ বাজারে থাকলেও সেখান থেকে এ আওয়াজ শুনতে পেতো। এমনকি তার কাঁধ থেকে চাদরটি পায়ের গোড়ায় পড়ে গেলো। (আহমাদ ও মাজমাউয যাওয়ায়েদ)

বিদায় হজের ভাষণের সময় একটি চাদর তার বাহুর নিচ থেকে কাঁধের ওপরে পেঁচানো ছিল। উম্মে মাহাসান বলেন, তখন আমি দেখলাম, তাঁর বাহুর মাংসপেশি কাঁপছে। (তিরমিজি, হাদিস: ১৭০৬)

আরও পড়ুন