তওবা-ইস্তিগফার: গুনাহ মাফের শ্রেষ্ঠ উপায়

তওবা অর্থ ফিরে আসা; ইস্তিগফার মানে ক্ষমা প্রার্থনা করা। ‘নাস’ (মানব) মানেই ভুল, ‘ইনসান’ (মানুষ) মানে যে ভুলে যায়। প্রথম মানুষই প্রথম ভুল করেছিলেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পরম ক্ষমাশীল, অতীব করুণাময়। তিনি বান্দার ভুলত্রুটি, পাপতাপ, যাবতীয় অপরাধ ক্ষমা ও মার্জনা করেন এবং দয়া বর্ষণ করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, সম্পদহানি, প্রাণহানি ও ফসলের ক্ষতির মাধ্যমে; তুমি সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের। যারা তাদের প্রতি মুসিবত আপতিত হলে বলে, “নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাব।” তাদের প্রতি তাদের রবের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।’ (সুরা আল-বাকারা,
আয়াত: ১৫৫-১৫৭)

বান্দা ইস্তিগফার করলে আল্লাহ আজাব দূর করে দেন। কোরআন কারিমে বর্ণিত হয়েছে, ‘আপনি তাদের মাঝে থাকা অবস্থায় আল্লাহ তাদের শাস্তি দেবেন না এবং তারা ক্ষমা প্রার্থনা করলে তখনো আল্লাহ তাদের শাস্তি দেবেন না।’ (সুরা আল-আনফাল, আয়াত: ৩৩)

রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজান। এ মাসে অগণিত মানুষকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন। নবীজি (সা.) বলেন, ‘দুর্ভাগা তারা, যারা রমজান পেয়েও মাগফিরাত বা ক্ষমা লাভ করতে পারল না।’

প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘সব মানুষই অপরাধী, তাদের মধ্যে উত্তম হলো তওবাকারী।’ (তিরমিজি: ২৪৯৯; মুসনাদে আহমাদ: ১৩০৪৯; ইবনে মাজাহ: ৪২৫১) ‘যদি কেউ গুনাহ মাফের উদ্দেশ্যে ইস্তিগফার করাকে নিজের ওপর আবশ্যক করে নেয়, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে তিনটি পুরস্কার দেবেন—তার জীবনের কঠিন অবস্থা থেকে তাকে উদ্ধার করবেন, তাকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন, তাকে অচিন্তনীয় ও অকল্পনীয় স্থান থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (মুসলিম ও তিরমিজি)

দোষে-গুণে মানুষ। মানুষের মধ্যে পাপ-পুণ্য বিদ্যমান। কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর আল্লাহ তাকে (মানবসত্তায়) অপরাধপ্রবণতা ও তাকওয়া বা সতর্কতার জ্ঞান দান করলেন।’ (সুরা আশ-শামস, আয়াত: ৮) ‘আর আমি তাকে (ভালো-মন্দ, সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়) দুটি পথ দেখিয়ে দিয়েছি (যাতে সে সঠিক পথে চলতে পারে)।’ (সুরা আল-বালাদ, আয়াত: ১০)

হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত হয়েছে, ‘বান্দা যদি দৈনিক ৭০ বার অপরাধ করে এবং ৭০ বার ক্ষমা চায়, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।’ 

রাসুলুল্লাহ (সা.) দৈনিক ৭০ বারের অধিক বা ১০০ বার ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। অথচ তিনিসহ সব নবী-রাসুল (আ.) ছিলেন মাসুম বা সম্পূর্ণ নিষ্পাপ। কারণ, তওবা ও ইস্তিগফার স্বতন্ত্র ইবাদত। এতে আল্লাহ বেশি খুশি হন।

তওবা ও ইস্তিগফারের জন্য কোরআন মাজিদে ও হাদিস শরিফে বহু দোয়া রয়েছে। এর মধ্যে শ্রেষ্ঠ দোয়াটিকে বলা হয় ‘সাইয়িদুল ইস্তিগফার’ বা ক্ষমার শ্রেষ্ঠ আবেদন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যদি কেউ সকাল-সন্ধ্যায় বিশ্বাসের সঙ্গে “সাইয়িদুল ইস্তিগফার” পাঠ করে, সে যদি ওই দিন রাত্রে বা দিবসে ইন্তেকাল করে, তাহলে সে জান্নাতি হবে।’

সাইয়িদুল ইস্তিগফার

‘আল্লাহুম্মা আন্তা রাব্বি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা; খালাকতানি ওয়া আনা আবদুকা, ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাস্তাতাতু। আউজু বিকা মিন শাররি মা সনা’তু, আবুউ লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়া, ওয়া আবুউ বিজাম্বি। ফাগফির লি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আন্তা।’

(অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমার রব, আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আপনিই আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনারই বান্দা। আমি আপনার প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের ওপর আছি আমার সাধ্য অনুযায়ী। আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই আমার কৃত অপরাধের অনিষ্ট থেকে। আমি স্বীকার করছি আমার প্রতি আপনার নিয়ামত এবং স্বীকার করছি আমার গুনাহ। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না।) (সহিহ বুখারি: ৬৩২৩; সহিহ মুসলিম) 

রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজান। এ মাসে অগণিত মানুষকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন। নবীজি (সা.) বলেন, ‘দুর্ভাগা তারা, যারা রমজান পেয়েও মাগফিরাত বা ক্ষমা লাভ করতে পারল না।’ (সহিহ বুখারি)

মহান আল্লাহ তাআলার একটি গুণ হচ্ছে ক্ষমা করা। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তিনি (আল্লাহ) গুনাহ ক্ষমাকারী।’ (সুরা গাফির, আয়াত: ৩) ‘জেনে রেখো, তিনি পরাক্রমশালী পরম ক্ষমাশীল।’ (সুরা আজ-জুমার, আয়াত: ৫) ‘হে নবী! আপনি আমার বান্দাদের বলে দিন, আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।’ (সুরা আল-হিজর, আয়াত: ৪৯)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]