লিখিত চুক্তির প্রয়োজনীয়তা
আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা বিশ্বাসীদের অপরিহার্য অংশ। তবে ইসলাম একটি যুক্তিপূর্ণ ধর্ম। সে কারণে আল্লাহর নামে অযৌক্তিক কাজ করলে চলে না। কারণ আল্লাহ আমাদের বুদ্ধি–বিবেচনা দিয়ে আশরাফুল মখলুকাত হিসেবে পয়দা করেছেন। আল্লাহ ভরসা বলে স্বেচ্ছায় আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়া তো আর ইসলামের শিক্ষা নয়। ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো সচেতনতা।
পুরোনো কালে চুক্তি কেবল মুখে মুখেই হতো। ইসলাম শিক্ষা দিয়েছে, যেকোনো মেয়াদি ঋণচুক্তি করলে তা লিখে রাখতে। ঋণ বা যেকোনো ধরনের আর্থিক চুক্তি কিংবা বাকিতে কেনাবেচার বোঝাপড়া লিখে রাখা হলে পরে বহু অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতা এড়ানো সম্ভব। মুখে মুখে বলা শর্ত ও চুক্তি ভুলে যাওয়া বিচিত্র কিছু নয়। চুক্তিটি লিখিত থাকলে উভয় পক্ষের জন্যই তা নিরাপদ।
কোরআনে আছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা যখন একে অন্যের সঙ্গে ঋণসংক্রান্ত কারবার করবে, তখন তা লিখে রেখো, আর তোমাদের মধ্যে কোনো লেখক যেন ন্যায্যভাবে তা লিখে দেয়। লেখক লিখতে অস্বীকার করবে না। যেহেতু আল্লাহ তাকে শিক্ষা দিয়েছেন, সুতরাং সে যেন লেখে। আর ঋণগ্রহীতা যেন লেখার বিষয় বলে দেয় ও তার প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করে, আর কিছু যেন কম না লেখায়। কিন্তু ঋণগ্রহীতা যদি নির্বোধ বা দুর্বল হয় বা লেখার বিষয়বস্তু বলে দিতে না পারে, তবে যেন তার অভিভাবক ন্যায্যভাবে লেখার বিষয়বস্তু বলে দেয়। আর তোমাদের পছন্দমতো দুজন পুরুষকে সাক্ষী রাখবে, আর যদি দুজন পুরুষ না থাকে, তবে একজন পুরুষ ও দুজন স্ত্রীলোক। স্ত্রীলোকদের মধ্যে একজন ভুল করলে তাদের অন্যজন স্মরণ করিয়ে দেবে।
সাক্ষীদের যখন ডাকা হবে তখন যেন তারা অস্বীকার না করে। আর এ (ঋণ) কম হোক বা বেশি হোক, মেয়াদ লিখতে তোমরা বিরক্ত হয়ো না। আল্লাহর কাছে এ বেশি ন্যায্য ও প্রমাণের জন্য বেশি পাকাপোক্ত; আর তোমাদের মধ্যে যেন সন্দেহ না জাগে তার জন্য প্রশস্ত। কিন্তু তোমরা পরস্পর যে-ব্যবসার নগদ আদানপ্রদান কর তা তোমরা না লিখে রাখলে কোনো দোষ নেই। তোমরা যখন পরস্পরের মধ্যে বেচাকেনা কর তখন সাক্ষী রেখো। লেখক ও সাক্ষী যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, যদি তোমরা তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করো তবে এ হবে তোমাদের জন্য অন্যায়। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহই তো তোমাদেরকে শিক্ষা দেন। আল্লাহ সকল বিষয়ে ভালো করেই জানেন।’( সুরা বাকারা, আয়াত: ২৮২)