দেয়ালে তায়াম্মুম করার নিয়ম

ছবি: পেক্সেলস

তায়াম্মুম শব্দটি এসেছে আরবি ‘তায়াম্মা’ থেকে, যার অর্থ ‘উদ্দেশ্য করা’ বা ‘মনোনিবেশ করা’। ইসলামি পরিভাষায়, তায়াম্মুম হল, পানি না পাওয়া বা ব্যবহার করতে অক্ষম হলে, বিশুদ্ধ মাটি বা তার সমতুল্য কিছু দিয়ে প্রতীকীভাবে পবিত্রতা অর্জনের প্রক্রিয়া।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমরা যদি অসুস্থ হও, বা সফরে থাকো, অথবা তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসে, কিংবা তোমরা নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক করো এবং পানি না পাও, তবে বিশুদ্ধ মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করো; তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত মুছে নাও।” (সুরা নিসা, আয়াত: ৪৩)

কেন তায়াম্মুম করা হয়

তায়াম্মুম করার অনুমতি কেবল বিশেষ পরিস্থিতিতে দেওয়া হয়েছে, যেমন:

১. পানি না পাওয়া বা খুব দূরে থাকা

২. পানি থাকলেও ব্যবহার করলে অসুস্থতা বা ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা

৩. খুব ঠান্ডা আবহাওয়া, যেখানে পানি ব্যবহার বিপজ্জনক

৪. অসুস্থ বা অক্ষম ব্যক্তি, যিনি পানি ব্যবহার করতে পারেন না

এই তায়াম্মুম আল্লাহর রহমত ও ইসলামের বাস্তবতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ।

আরও পড়ুন

তায়াম্মুমের জন্য কী ধরনের বস্তু প্রযোজ্য

তায়াম্মুমের জন্য মূলত “সাইদুন তয়্যিব” বা বিশুদ্ধ মাটির প্রয়োজন। তবে ইসলামি ফিকহ অনুযায়ী মাটি ছাড়াও এমন সব বস্তু ব্যবহার করা যায়, যেগুলোর গায়ে ধূলা বা মাটির কণা থাকে।

তাই দেয়াল, ইট, পাথর, মাটি, কাঁচা মেঝে বা মাটির তৈরি দেয়াল—এসবের ওপর তায়াম্মুম করা জায়েজ, যদি সেখানে ধূলা বা মাটির গুণ থাকে। ইমাম নববী (রহ.) বলেন, “যদি দেয়ালে বা পাথরে ধূলা থাকে, তাহলে তা দিয়ে তায়াম্মুম করা বৈধ।” (আল-মাজমু’, ইমাম নববী, ২/২১১, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৯৯৬ খ্রি.)

দেয়ালে তায়াম্মুম করার ধাপে ধাপে নিয়ম

তায়াম্মুম করার পদ্ধতি সহজ, তবে নিয়ত ও সুন্নাহ মেনে করলে এটি নামাজ ও ইবাদতের জন্য ওজুর বিকল্প হয়ে যায়।

১. নিয়ত করা: মনে মনে নিয়ত করবে, “আমি পবিত্রতা লাভের উদ্দেশ্যে তায়াম্মুম করছি, যাতে নামাজ আদায় করতে পারি।”

২. দেয়ালে বা ধূলাযুক্ত জায়গায় হাত দেওয়া:

দুই হাত একসাথে দেয়ালে বা ধূলাযুক্ত স্থানে একবার আঘাত করতে হবে।

৩. মুখ মুছে ফেলা: দুই হাতের তালু দিয়ে মুখমণ্ডল ভালোভাবে মুছে নেবে।

৪. আবার একইভাবে দেয়ালে হাত লাগিয়ে কনুই পর্যন্ত মুছে ফেলা। এ-সময় ডান হাত দিয়ে বাম হাত ও বাম হাত দিয়ে ডান হাত কনুই পর্যন্ত মুছে ফেলবে।

এভাবেই তায়াম্মুম সম্পন্ন হবে। রাসুল (স.) বলেছেন, “বিশুদ্ধ মাটি মুসলমানের জন্য ওজুর বিকল্প; যতক্ষণ না সে পানি পায়।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৩৫; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৩৬৮)

আরও পড়ুন

দেয়ালে তায়াম্মুমের বৈধতা নিয়ে আলেমদের মত

হানাফি ও শাফেয়ি মত অনুযায়ী: দেয়ালে ধূলা থাকলে তায়াম্মুম করা যাবে; কিন্তু যদি দেয়াল একদম চকচকে বা ধূলাবিহীন হয়, তখন তা বৈধ নয়।

  • মালিকি মত অনুযায়ী: মাটি, পাথর, ইট—যে কোনো প্রাকৃতিক উপাদানই বৈধ, ধূলা থাকা আবশ্যক নয়।

  • হাম্বলি মত অনুযায়ী: দেয়াল যদি প্রাকৃতিক পদার্থ দিয়ে তৈরি হয়, তবে ধূলা না থাকলেও তায়াম্মুম করা যাবে। (ইবন কুদামা, আল-মুগনি, ১/২৬১, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, ২০০৪ খ্রি.)

তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ

তায়াম্মুম ওজুর মতোই ভঙ্গ হয় নিম্নলিখিত কারণে:

১. নামাজের আগে পানি পেয়ে গেলে

২. ওজু ভঙ্গ হওয়ার মতো কিছু ঘটলে (যেমন: ঘুম, পায়খানা, বাতাস নির্গমন)

তায়াম্মুমের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য

তায়াম্মুম শুধু শারীরিক বিকল্প নয়, বরং এটি মানুষকে শেখায় “পবিত্রতা মানে মনোভাবের বিশুদ্ধতা”। পানি না থাকলেও আল্লাহ বান্দাকে ইবাদতের অনুমতি দেন—এটি দয়ারই প্রতীক। ইসলাম কঠোর নয়, বরং সহজ ও মানবিক।

দেয়ালে তায়াম্মুম করা একটি শরয়ি অনুমোদিত পদ্ধতি, যা অসুবিধার সময় মুসলমানদের ইবাদত থেকে বঞ্চিত হতে দেয় না। এটি ইসলামের বাস্তবতা ও সহজতার এক অনন্য নিদর্শন। আল্লাহ বলেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজতা চান, কষ্ট চান না।” (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)

আরও পড়ুন