কে কিয়ামতে শাফায়াত করবেন

ইমানদারদের কিয়ামতের দিন আবদ্ধ করে রাখা হবে। এক সময় তাঁরা অস্থির হয়ে গিয়ে বলবেন, ‘আমরা যদি আমাদের রবের কাছে কারও মাধ্যমে শাফায়াত করাতে পারতাম, যিনি আমাদের স্বস্তি দিতে পারতেন।’

এর পর আদম (আ.)-এর কাছে এসে তাঁরা বলবেন, ‘আপনিই তো সেই আদম, স্বয়ং আল্লাহ নিজ হাতে যাঁকে সৃষ্টি করেছেন। আপনাকে বসবাসের সুযোগ দিয়েছেন তাঁর জান্নাতে, ফেরেশতাদের দিয়ে আপনাকে সিজদাহ করিয়েছেন এবং সব জিনিসের নাম শিখিয়ে দিয়েছেন। এখান থেকে আমাদের মুক্তি লাভের জন্য আপনার সেই রবের কাছে শাফায়াত করুন।’

আদম (আ.) বলবেন, ‘তোমাদের এ কাজের জন্য (আমি উপযুক্ত) নই।’

 মহানবী (সা.) বলেন, এরপর তিনি নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ার ভুলের কথাটি উল্লেখ করবেন। তিনি বলবেন, তোমরা বরং নুহ (আ.)-এর কাছে যাও।

আরও পড়ুন

তখন তারা নুহ (আ.)-এর কাছে এলে তিনি তাদের বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য (উপযুক্ত) নই। তিনি না জেনে তাঁর রবের কাছে প্রার্থনার ভুলের কথাটি উল্লেখ করে বলবেন, তোমরা রাহমানের একনিষ্ঠ বন্ধু ইব্রাহিমের কাছে যাও।

নবী (সা.) বলেন, তখন তারা ইব্রাহিম (আ.)-এর কাছে যাবে। ইব্রাহিম (আ.) বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য (উপযুক্ত) নই। তোমরা বরং মুসা (আ.)-এর কাছে যাও, তিনি আল্লাহর এমন এক বান্দা, যাঁকে আল্লাহ তাওরাত দিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং গোপন আলাপনের মাধ্যমে নৈকট্য দিয়েছিলেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সবাই তখন মুসা (আ.)-এর কাছে আসবে। তিনিও বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য (উপযুক্ত) নই। তিনি তাঁর ভুলের কথা উল্লেখ করে বলবেন, তোমরা বরং ঈসা (আ.)-এর কাছে যাও, যিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসুল এবং তাঁর রুহ ও বাণী।

 রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তারা সবাই তখন ঈসা (আ.)-এর কাছে যাবে। ঈসা (আ.) বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য (উপযুক্ত) নই। তিনি বলবেন, তোমরা বরং মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে যাও। তিনি আল্লাহর এমন এক বান্দা, যাঁর আগের ও পরের ভুল তিনি ক্ষমা করে দিয়েছেন।

আরও পড়ুন

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তখন তারা আমার কাছে আসবে। আমি তখন আমার রবের কাছে তাঁর কাছে হাজির হওয়ার অনুমতি চাইব। আমাকে তাঁর কাছে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। তাঁর দর্শন লাভের সঙ্গে সঙ্গে আমি সিজদায় পড়ে যাব। তিনি আমাকে সে অবস্থায় যতক্ষণ চাইবেন, ততক্ষণ রাখবেন। অতঃপর আল্লাহ বলবেন, ‘মুহাম্মদ! মাথা ওঠান; বলুন, আপনার কথা শোনা হবে; শাফায়াত করুন, কবুল করা হবে; চান, আপনাকে দেওয়া হবে।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তখন আমি মাথা উঠিয়ে আমার প্রতিপালকের এমন স্তব–স্তুতি করব, যা তিনি আমাকে শিখিয়ে দেবেন। এর পর আমি সুপারিশ করব। তবে আমাকে সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। আমি বের হয়ে তাদের জান্নাতে ঢোকাব।’

বর্ণনাকারী বলেন, আমি আনাস (রা.)-কে এ কথাও বলতে শুনেছি, (মহানবী সা. বলছেন) আমি বের হয়ে তাদের জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে ঢোকাব। তারপর ফিরে এসে আমার প্রতিপালকের কাছে হাজির হওয়ার অনুমতি চাইব। আমাকে অনুমতি দেওয়া হবে। আমি তাঁকে দেখার পর সিজদায় পড়ে যাব। আল্লাহ যতক্ষণ ইচ্ছা আমাকে সে অবস্থায় রেখে এক সময় বলবেন, মুহাম্মদ, মাথা ওঠান। বলুন, শোনা হবে; শাফায়াত করুন, কবুল করা হবে; চান, দেওয়া হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তারপর আমি আমার মাথা ওঠাব। আমার রবের এমন স্তব ও স্তুতি করব, যা তিনি আমাকে শিখিয়ে দেবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘এরপর আমি শাফায়াত করব। আমার জন্য একটা সীমা নির্দিষ্ট করা হবে। আমি বের হয়ে তাদের জান্নাতে ঢোকাব।’

মহানবী (সা.) বলেন, ‘এভাবে তৃতীয়বারের মতো ফিরে এসে আমার রবের কাছে প্রবেশ করার অনুমতি চাইব। আমাকে অনুমতি দেওয়া হবে। আমি তাঁকে দেখার পর সিজদায় পড়ে যাব। আল্লাহ আমাকে সে অবস্থায় যতক্ষণ ইচ্ছা রাখবেন।’ তিনি বলেন, ‘আমি সেখান থেকে বের হয়ে তাদের জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে ঢোকাব। অবশেষে জাহান্নামে বাকি থাকবে কেবল তারা, কোরআন যাদের আটকে রেখেছে। অর্থাৎ যাদের ওপর জাহান্নামের চিরবাস ওয়াজিব হয়ে পড়েছে।’

কোরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করেন, আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রশংসনীয় স্থানে উন্নীত করবেন।

হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.)-এর বরাতে এ হাদিসের বর্ণনা আছে। তিনি মহানবী (সা.)-এর কাছে উপরের ঘটনাটি শুনেছেন।

সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ৭৯; সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭৪৪০

আরও পড়ুন