হজের সময় ঋতু শুরু হলে
হজ ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ, মুসলিম জীবনের ইবাদতের ভিত্তি। কিন্তু হজের মধ্যেই যদি কারও ঋতুস্রাব শুরু হয়? এটি যেকোনো নারীর একটি সাধারণ অভিজ্ঞতা। হজের সময় ঋতুস্রাব শুরু হলেও কীভাবে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকা সম্ভব, তা নিয়ে আমরা আলোচনা করব।
নারীত্ব এবং হজ
হজের সময় ঋতুস্রাব হতে পারে, এমন একটি সম্ভাবনা হজের পরিকল্পনা করার সময়ই নারীদের ভেবে রাখা দরকার। অনেকে হজ বা ওমরার জন্য ঋতুস্রাব দমনের জন্য ওরাল কন্ট্রাসেপটিভ পিল (ওসিপি) গ্রহণ করেন। এটা নিয়ে নানা মতভেদ আছে। সাধারণ রীতি হলো, কোনো কিছু নিষিদ্ধ না হলে তা জায়েজ। এ ধরনের পিল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলে তা নিষিদ্ধ। নইলে এটি গ্রহণ করা যায়। তবে এ ধরনের পিল এড়িয়ে চলার পরামর্শই সচরাচর দেওয়া হয়।
তবে ঋতু চলাকালেও তাওয়াফ এবং নামাজ ছাড়া হজের বাকি আচার পালন করা যায়। এ সময়ে আপনি সাঈ, উকুফ, মুজদালিফা, মিনা ও আরাফায় অবস্থান, জামরাতে পাথর নিক্ষেপ এবং জিকির করতে পারবেন।
ওমরার সময় আয়েশা (রা.) ঋতুর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন। আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘আমরা হজের নিয়তে যাত্রা করি। সারিফে পৌঁছে আমার ঋতু শুরু হয়। আমি কাঁদছিলাম। রাসুল (সা.) এসে বললেন, “কী হয়েছে? তোমার ঋতু শুরু হয়েছে?”
হজের সময় ঋতু মোকাবিলা
ঋতু চলাকালে মনে হতে পারে আল্লাহ আপনাকে ইবাদত থেকে বঞ্চিত করছেন। মসজিদুল হারামে নামাজ বা কাবার তাওয়াফ করতে না পারা আপনার হতাশার কারণ হতে পারে। কিন্তু জেনে রাখুন, এ সময়ে বিরত থাকাও আল্লাহর হুকুমের প্রতি আনুগত্যের প্রকাশ।
ওমরার সময় আয়েশা (রা.) ঋতুর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন। আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘আমরা হজের নিয়তে যাত্রা করি। সারিফে পৌঁছে আমার ঋতু শুরু হয়। আমি কাঁদছিলাম। রাসুল (সা.) এসে বললেন, “কী হয়েছে? তোমার ঋতু শুরু হয়েছে?” আমি বললাম, “হ্যাঁ।” তিনি বললেন, “এটি আল্লাহ আদমের কন্যাদের জন্য নির্ধারিত করেছেন। অন্য হাজিরা যা করে, তুমি তা করো, শুধু কাবার তাওয়াফ বাদে”।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৯৪)
আমরা হয়তো বুঝি না কেন এমন হয়, বিশেষ করে এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। কিন্তু আল্লাহ বলেন, ‘হয়তো তোমরা যা অপছন্দ করো, তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর; আর যা পছন্দ করো, তা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২১৬)
এই আয়াত প্রমাণ করে, ঋতুস্রাব কোনো শাস্তি নয়। আল্লাহর রহমত আমাদের কল্পনার বাইরে। তবে ঋতুকালেও ইবাদতের অনেক রূপ আছে, যেমন আল্লাহর রহমতের বিভিন্ন রূপ।
হজের সময় ঋতু শুরু হলে মনে করবেন না আপনি ইবাদত থেকে বঞ্চিত। জিকির, দরুদ ও ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শনের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে পারেন।
ঋতুকালে হজকে স্মরণীয় করার উপায়
আল্লাহ সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী। আমাদের জীবনের সবকিছু, এমনকি ঋতুও তাঁর পরিকল্পনার অংশ। এখানে কীভাবে এই সময়কে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য স্মরণীয় করবেন:
১. মক্কার ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন: মসজিদুল হারামে প্রবেশ করতে না পারলেও মক্কার ঐতিহাসিক স্থানগুলো দেখতে পারেন, যেমন জান্নাতুল মুয়াল্লা কবরস্থান, আবু কুবাইস পাহাড়, বদরের যুদ্ধক্ষেত্র, আয়েশা মসজিদ, সাওর গুহা ও হেরা গুহা। এই স্থানগুলো নবী (সা.)-এর সময়ের ইতিহাস বহন করে। এই সুযোগে নবী (সা.)-এর জীবন সম্পর্কে আরও জানুন।
২. দরুদ পড়া: হাদিসে অনেক ধরনের দরুদ বর্ণিত আছে, সেগুলো পড়তে পারেন।
৩. জিকির করা: হজের সময়, বিশেষ করে কাবার এত কাছে থাকা অবস্থায় জিকির করা অসাধারণ অনুভূতি দেয়। আল্লাহ বলেন, ‘যে পুরুষ ও নারী আল্লাহকে প্রচুর স্মরণ করে, তাদের জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও মহান পুরস্কার প্রস্তুত রেখেছেন।’ (সুরা আহযাব, আয়াত: ৩৫)
শেষ কথা
হজের সময় ঋতু শুরু হলে মনে করবেন না আপনি ইবাদত থেকে বঞ্চিত। জিকির, দরুদ ও ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শনের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে পারেন। আল্লাহর রহমত আমাদের বোধগম্যতার বাইরে। তিনি আমাদের অজানা জিনিস জানেন। তাই তাঁর ওপর ভরসা রাখুন। আল্লাহ আমাদের ইবাদত কবুল করবেন, ইনশা আল্লাহ।
সূত্র: মুসলিম গার্ল ডটকম