সুরা কাওসারে তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে

সুরা কাওসার  (প্রাচুর্য) পবিত্র কোরআনের ১০৮তম সুরা। মক্কায় অবতীর্ণ। ১ রুকু, ৩ আয়াত। অপুত্রক মুহাম্মদ (সা.)-কে নাম নিশানাহীন হতভাগ্য বলে তাঁর শত্রুরা তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রূপ করলে আল্লাহ বলেন যে তাঁকে প্রচুর কল্যাণ দান করা হয়েছে এবং তিনি তাঁর জন্য তাঁর প্রভুর উদ্দেশে নামাজ পড়ুন। প্রকৃতপক্ষে তাঁর শত্রুরাই নাম নিশানাহীন হতভাগ্য।

মুহাম্মদ (সা.) এর শিশুপুত্র মারা যাওয়ার পর কাফেররা তাঁর ওই কষ্টকর সময়ে আনন্দ করেছিল এবং বলাবলি করছিল, মুহাম্মদ (সা.) এবার নির্বংশ হয়ে গেল। সাধারণত পুত্রের মাধ্যমে বংশধারার সম্মান, ঐতিহ্য চলমান থাকে। মুহাম্মদ (সা.) এর ছেলেসন্তান মারা যাওয়ার পর তারা বলে বেড়াচ্ছিল যে, মুহাম্মদ (সা.) এর নাম, বংশ, পারিবারিক ঐতিহ্য আর টিকে থাকবে না তাঁর মৃত্যুর পর। এই পরিস্থিতিতে আল্লাহ এই সুরা নাজিল করেন।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

সুরার সারসংক্ষেপ:

সুরা কাওসারের প্রথম  আয়াতে ‘আমি তো তোমাকে কাউসার (ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ) দান করেছি।’ আল্লাহ  হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে কাওসার দান করেছেন।

পুত্র সন্তান মারা যাওয়ায় তিনি যে দু:খ পেয়েছিলেন, সান্ত্বনা স্বরূপ আল্লাহ তাঁকে পুরস্কার দানের মাধ্যমে খুশি করে দেন। কাওসার শব্দের অর্থ প্রাচুর্য।  এটি দুনিয়া ও আখিরাতে বিশেষভাবে হাউসে কাওসার বোঝায়, যা আল্লাহ তাঁকে জান্নাতে দান করবেন। আল্লাহ তার অনুগ্রহ ও উপহার দেওয়ার কথা বলার পর দ্বিতীয় আয়াতে বলেছেন ‘সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশে নামাজ পড়ো ও কোরবানি দাও।’

নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। নামাজ হলো শুকরিয়া আদায় ও প্রতিদানের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম। এই নামাজ পড়তে হবে শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য।  লোক দেখানোর জন্য নয়। এর সঙ্গে কোরবানি করার কথাও তিনি বলেছেন।

তৃতীয় ও শেষ আয়াতে বলা হয়েছে ‘যে তোমার দুশমন সে-ই তো নির্বংশ।’ আল্লাহ নবী মুহাম্মদ (সা.) এর শত্রুদের কথা বলেছেন। মূলত তারাই সব ধরনের ভালো থেকে বঞ্চিত;  দুনিয়ায় ও আখিরাতেও।

আরও পড়ুন

সুরা কাওসারে তিনটি বিষয়ে আলোচনা রাসুল (সা.) ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ হচ্ছে, তিনি তাঁকে কাওসার প্রদান করেছেন। কাওসার জান্নাতের একটি নহর। কেয়ামতের দিন রাসুল (সা) উম্মতকে তা থেকে পান করাবেন। কাওসারের  অর্থ অনেক।  কল্যাণ, নবুওয়াত, কোরআন, হেকমত, ইলম, সাফায়ত, মাকামে মাহমুদ, মুজিজাকেও কাওসার বলা হয়। রাসুল (সা.)  কে  নির্দেশ দেওয়া হয় যে, কাওসারের  মতো নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার জন্য নামাজের প্রতি যত্নবান হতে হবে। আল্লাহর জন্য কোরবানি করতে হবে। রাসুল (সা.) কে এ সুসংবাদ শোনানো হয় যে, শত্রুরা অপদস্থ হবে। তাদের নাম-নিশানা মিটে যাবে। আর এমনটাই হয়েছিল। (সুরা কাওসার, আয়াত ১–৩, কোরানশরিফ: সরল বঙ্গানুবাদ, অনুবাদ: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন)