জীবন-মৃত্যু সৃষ্টির কারণ

আজ খতমে তারাবিতে পবিত্র কোরআনের সুরা মুলক, সুরা কলম, সুরা হাক্কাহ, সুরা মাআরিজ, সুরা নুহ, সুরা জিন, সুরা মুজ্জাম্মিল, সুরা মুদ্দাসসির, সুরা কিয়ামাহ, সুরা দাহর ও সুরা মুরসালাত তিলাওয়াত করা হবে। ২৯তম পারা পড়া হবে। এই অংশে আল্লাহর ক্ষমতা, তাঁর অস্তিত্বের প্রমাণ, কিয়ামত, জান্নাত, জাহান্নাম, নবীজি (সা.)-এর গুণাগুণ, অবিশ্বাসীদের ভুল চিন্তা, অকৃতজ্ঞতার পরিণাম, বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের পরিণতি, আগের জাতির কাহিনি, কিয়ামতের দিন আমলনামা প্রদান, মানুষের স্বভাব, নুহ (আ.)-এর গল্প, জিনদের আলোচনা, নবীজীবনী, তাহাজ্জুদের নামাজ, আল্লাহর অনুগ্রহ, নবীজি (সা.)-এর দাওয়াত, উত্তম উপদেশ গ্রহণ, মৃত্যু, জান্নাতের নেয়ামত ও পুনরুত্থান ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা রয়েছে।

 সুরা মুলকের ফজিলত

মক্কায় অবতীর্ণ সুরা মুলকের আয়াত সংখ্যা ৩০। রাসুল (সা.) প্রতি রাতে এ সুরা তিলাওয়াত করতেন।

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোরআনের মধ্যে ত্রিশ আয়াতবিশিষ্ট একটি সুরা আছে, যেটি কারও পক্ষে সুপারিশ করলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। এ সুরাটি হলো—তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলক।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১,৪০০)

রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে প্রতি রাতে সুরা মুলক পাঠ করবে, আল্লাহ এ সুরাকে তার কবরের আজাবের প্রতিরোধক বানাবেন।’ (সহিহুল জামে, হাদিস: ৩৬৪৩)

আল্লাহ মানুষের জীবন ও দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষার জন্য। দুনিয়ার এ পরীক্ষার হলে যে সঠিক পথে জীবন যাপন করে আল্লাহর পরীক্ষায় পাস করবে, সে থাকবে জান্নাতে। ভুল পথে চললে কিংবা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে থাকতে হবে জাহান্নামে। আল্লাহ বলেন, ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য যে—কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম। তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।’ (সুরা মুলক, আয়াত: ২)

আরও পড়ুন

যাদের অনুসরণ করা যাবে না

৫২ আয়াতবিশিষ্ট সুরা কলম মক্কায় অবতীর্ণ। সুরার শুরুতে আল্লাহ কলমের কসম করেছেন, তাই এর নাম সুরা কলম রাখা হয়েছে।

এ সুরার ১০ থেকে ১৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা রাসুল (সা.)-কে ৯ ধরনের মানুষের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। যেমন যে অযথা কসম করে, নিচু স্বভাবের লোক, পেছনে দুর্নাম করে, পরচর্চাকারী, ভালো কাজে বাধা দেয়, সীমা লঙ্ঘনকারী, পাপী, পিতৃপরিচয়হীন কঠোর স্বভাবের মানুষ ও কোরআন অস্বীকারকারী।

 এক বাগানওয়ালার গল্প

 ইয়েমেনের সানা থেকে ৬ মাইল দূরে একটি বিশাল বাগান ছিল। এ কাহিনি আরবদের মুখে মুখে ফিরত। বাগানের মালিক এর থেকে উৎপন্ন ফলমূল গরিব-অসহায়দের দিত। তার মৃত্যুর পর সন্তানেরা গরিবদের বঞ্চিত করল। সম্পূর্ণ ফসল নিজেদের ঘরে তুলত। খুব ভোরে তারা ফসল তুলত, যেন গরিবরা তাদের নাগাল না পায়।

আল্লাহর এ কাজ পছন্দ হয়নি। আল্লাহ বাগানে বিপর্যয় দিলেন। বাগান ধ্বংস হয়ে গেল একদিন। তারা ভোরে ফসল তুলতে গিয়ে কৃষ্ণবর্ণ এক বাগান পেল। তারা ভুল বুঝতে পারল। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইল। আল্লাহ ক্ষমা করে দিলেন।

সুরা কলমের ১৭ থেকে ৩৩ নম্বর আয়াতে এ গল্পের বর্ণনা রয়েছে।

আরও পড়ুন

সুরা হাক্কার বিষয়বস্তু

মক্কায় অবতীর্ণ সুরা হাক্কার আয়াতের সংখ্যা ৫২। হাক্কা কিয়ামতের একটি নাম। অর্থ বাস্তবায়নাধীন। কিয়ামত একদিন বাস্তবায়ন হবেই, তাই এর নাম হাক্কা। সুরায় কিয়ামতের ভয়াবহতা, পূর্ববর্তী জাতির পরিণতি, কিয়ামতপূর্ব অবস্থা, নেককারদের ডান হাতে ও হতভাগাদের বাঁ হাতে আমলনামা প্রদান, জাহান্নামে কাফেরদের টেনেহিঁচড়ে নেওয়া ইত্যাদির বয়ান আছে।

আল্লাহর কাছে ভালো যারা

 ৪৪ আয়াতবিশিষ্ট সুরা মাআরিজ মক্কায় নাজিল হয়েছে। মাআরিজ অর্থ উঁচু, সিঁড়ি। আল্লাহ নবীকে উঁচু মর্যাদা দিয়েছেন; এই সুরায় এমন আলোচনা থাকায় এ নাম রাখা হয়েছে। এ সুরার ২২ থেকে ৩১ নম্বর আয়াতে আল্লাহর পছন্দনীয় স্বতন্ত্র মানুষের বেশ কিছু গুণের কথা এসেছে। গুণগুলো হলো  ১. যারা নামাজ আদায় করে, ২. নামাজের প্রতি যত্নবান, ৩. যারা আত্মীয় ও অসহায়দের হক বুঝিয়ে দেয়, ৪. যারা প্রতিফল দিবসকে বিশ্বাস করে, ৫. আল্লাহর ভয়ে কম্পিত যারা, ৬. যারা বিশেষ অঙ্গকে সংযত রাখে।

আরও পড়ুন

যা আছে সুরা নুহে

২৮ আয়াতবিশিষ্ট সুরা নুহ মক্কায় নাজিল হয়েছে। নুহ (আ.)-এর দাওয়াত, তাঁর জাতির অবাধ্যতা, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার ফজিলত ও উপকারিতা, আল্লাহর নেয়ামত, মূর্তির প্রতি কাফেরদের প্রীতি, তাদের ধ্বংস এবং মুমিনদের জন্য ক্ষমার বর্ণনা রয়েছে এ সুরায়।

 বিশ্বাসী জিনদের কাহিনি সুরা জিনে

২৮ আয়াতবিশিষ্ট সুরা জিন মক্কায় অবতীর্ণ। সুরার ১ থেকে ১৫ নম্বর আয়াতে নবীজির কণ্ঠে জিনদের কোরআন শোনার বয়ান আছে, তাই এর নাম সুরা জিন রাখা হয়েছে। রাসুল (সা.) তখন কয়েকজন সাহাবিকে নিয়ে উকাজের বাজারে যাচ্ছিলেন। পথে নাখলা নামক স্থানে ফজর নামাজের সময় হয়। তিনি নামাজে কোরআন তিলাওয়াত করছিলেন। সে সময় একদল জিন ওই স্থান অতিক্রম করছিল। কোরআন তিলাওয়াতের আওয়াজ শুনে তারা থেমে যায়। মধুর বাণী শুনতে থাকে। তারা ইসলাম গ্রহণ করে। জাতির কাছে ফিরে গিয়ে ঘটনা শোনাল। তাদের ইসলামের দাওয়াত দিল।

 তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব

মক্কায় অবতীর্ণ সুরা মুজ্জাম্মিলের আয়াতসংখ্যা ২০। এ সুরার শুরুতে আল্লাহ-তাআলা রাসুল (সা.)-কে রাত জেগে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার আদেশ দেন। কারণ আল্লাহ তখন তাঁকে নবুয়তের জন্য প্রস্তুত করতে চাচ্ছেন। আত্মসংযমের জন্য বেশি কার্যকর ও কোরআন তিলাওয়াতের সেরা সময় তাহাজ্জুদ। মধ্যরাতের পর শয্যাত্যাগ করাকে তাহাজ্জুদ বলা হয়। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় হলো রাত ২টার পর থেকে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগপর্যন্ত।

 সুরা মুদ্দাসসির, কিয়ামাহ, দাহর ও মুরসালাতে দ্বীনের দাওয়াত, কাফেরদের পরিণাম, কিয়ামতের দিন জান্নাতি ও জাহান্নামিদের অবস্থা, নসিহত, মৃত্যু-পরবর্তী জীবন, শাস্তি, মৃত্যুর সময় মানুষের অবস্থা ও কিয়ামতের পর পুনরুত্থান, মানুষ সৃষ্টির কাহিনি, মুমিনদের গুণ, জান্নাত, আল্লাহর নেয়ামত, আল্লাহর পথে আহ্বানকারীর গুণাবলি, কিয়ামত, মৃত্যু-পরবর্তী জীবন, আল্লাহর বিভিন্ন সৃষ্টি ইত্যাদির আলোচনা রয়েছে।

 আবু আশফাক মুহাম্মাদ: লেখক ও আলেম

আরও পড়ুন