হজযাত্রীর করণীয়

জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। এবার যাঁরা হজে যাচ্ছেন, তাঁদের প্রস্তুতি নিতে হবে এখনই। 

এ বিষয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) মো. মতিউল ইসলাম জানালেন, এবার যাঁরা হজে যাচ্ছেন, তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, টিকা দেওয়া, স্বাস্থ্যসনদ সংগ্রহ,
হজের জন্য প্রয়োজনীয় মালপত্র সংগ্রহ করা দরকার। হজ পালনের প্রশিক্ষণও নিতে হবে। হজ প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য তথ্য ঢাকার আশকোনা হজ কার্যালয় থেকে জানা যাবে। হজযাত্রীরা সব সময় মাস্ক পরবেন। করোনার টিকার সনদ একাধিক কপি করে নিজের কাছে রাখবেন। ৪০ দিনের ওষুধ ও  ব্যবস্থাপত্র সঙ্গে রাখবেন। 

আরও পড়ুন

এ ছাড়া প্রয়োজনীয় বইপুস্তক পড়ে বা পরিচিত লোকজনের কাছ থেকেও হজবিষয়ক তথ্য জানতে পারেন। আর হজের প্রয়োজনীয় তথ্য www.hajj.gov.bd ঠিকানার ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। 

হজে যাচ্ছেন, আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করুন, ‘হে আল্লাহ! আমার হজকে সহজ করো, কবুল করো’—দেখবেন, আপনার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। হজের দীর্ঘ সফরে ধৈর্য হারাবেন না। সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মানসিকতা রাখবেন, তাহলে অল্পতেই বিচলিত হবেন না। 

হজে যাওয়ার আগে

পাসপোর্ট, বিমানের টিকিট সংগ্রহ ও তারিখ নিশ্চিত করুন। প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করতে ভুলবেন না। নিয়ম মেনে করোনার টিকা বুস্টার ডোজ, ম্যানিনজাইটিস টিকা বা অন্যান্য ভ্যাকসিন দিয়ে নিন।  হজের নিয়ম জানার জন্য একাধিক বই পড়তে পারেন। চাইলে প্রথম আলো কার্যালয় থেকে হজ গাইড সংগ্রহ করতে পারেন। 

www.prothomalo.com/hajj ঠিকানার ওয়েবসাইট থেকেও নামিয়ে নিতে পারেন। যাঁরা পড়তে পারেন না, তাঁরা  হাজিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে পারেন। হজের কোনো বিষয়ে ভিন্নতা দেখলে ঝগড়া করবেন না। আপনি যে আলেমের ইলম ও তাকওয়ার ওপর আস্থা রাখেন, তাঁর সমাধান অনুযায়ী আমল করবেন, তবে সে মতে আমল করার জন্য অন্য কাউকে বাধ্য করবেন না।

আরও পড়ুন

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এমরানুল হক বলেন, ‘ওমরাহ পালন করতে গিয়ে যেটা দেখেছি হজযাত্রী যদি সচেতন থাকেন, তাহলে সঠিকভাবে করতে পারেন। তাওয়াফের ক্ষেত্রে আমার একটা পরামর্শ হলো এশার নামাজের পরে খাওয়াদাওয়া শেষ করে তাওয়াফ করা ভালো। আল্লাহর সঙ্গে বান্দার যোগাযোগটাও ভালো হয়।’

আরও পড়ুন

প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র 

হজের জন্য প্রয়োজনীয় মালপত্র সংগ্রহ করা দরকার। যেমন: ১. পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, টাকা রাখার জন্য গলায় ঝোলানো ছোট ব্যাগ। ২. পুরুষের জন্য ইহরামের কাপড় কমপক্ষে দুই সেট। প্রতি সেটে শরীরের নিচের অংশে পরার জন্য আড়াই হাত বহরের আড়াই গজ এক টুকরা কাপড় আর গায়ের চাদরের জন্য একই বহরের তিন গজ এক টুকরা কাপড়। ইহরামের কাপড় সাদা এবং সুতি হলে ভালো হয়। নারীদের জন্য সেলাইযুক্ত স্বাভাবিক পোশাকই ইহরামের কাপড় ৩. নরম ফিতাওয়ালা স্যান্ডেল। ৪. ইহরাম পরার কাজে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন হলে কটিবন্ধনী (বেল্ট)। ৫. গামছা, তোয়ালে। ৬. লুঙ্গি, গেঞ্জি, পায়জামা, পাঞ্জাবি (আপনি যে পোশাক পরবেন)। ৭. সাবান, টুথপেস্ট, টুথব্রাশ বা মিসওয়াক। ৮. নখ কাটার যন্ত্র, সুই-সুতা। ৯. থালা, বাটি, গ্লাস। ১০. হজবিষয়ক বই, কোরআন শরিফ, ধর্মীয় পুস্তক। ১১. কাগজ-কলম। ১২. চশমা ব্যবহার করলে অতিরিক্ত একটি চশমা। ১৩. বাংলাদেশি টাকা (দেশে ফেরার পর বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফেরার জন্য)। ১৪. নারীদের জন্য বোরকা, ১৫. যত দিন বিদেশে থাকবেন, সেই অনুযায়ী নিবন্ধিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রসহ ওষুধ নেবেন। ১৬. মুঠোফোন (সৌদি আরবে ব্যবহার করা যায়, এমন সিম কিনে নিতে হবে)। ১৭. মালপত্র নেওয়ার জন্য ব্যাগ অথবা স্যুটকেস (তালা-চাবিসহ)।  বাংলাদেশের পতাকাখচিত ট্রলি ব্যাগ (৬৫ x ৪৫ x ২৫ সেন্টিমিটার) ও হাতব্যাগ নিজ দায়িত্বে সংগ্রহ করতে হবে। ব্যাগের ওপর ইংরেজিতে নিজের নাম-ঠিকানা, ফোন নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর লিখতে হবে। এর বাইরে আরও কিছু প্রয়োজনীয় মনে হলে তা নিয়ম মেনে সঙ্গে নিতে হবে। 

মুক্তচিন্তা প্রকাশনীর একজন হজযাত্রীর রোজনামচা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত পবিত্র মক্কা মদীনার পথে প্রান্তরে বই পড়তে পারেন।

আরও পড়ুন

জিনিসপত্রের বিধিনিষেধ

বিমানে উড্ডয়নকালে হাতব্যাগে ছুরি, কাঁচি, দড়ি নেওয়া যাবে না। বিমান কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা অনুযায়ী বিমানে কোনো হজযাত্রী সর্বোচ্চ ৪০ কেজির বেশি মালামাল বহন করতে পারবেন না। নিবন্ধিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনো ওষুধ নেওয়া যাবে না। চাল, ডাল, শুঁটকি, গুড় ইত্যাদিসহ পচনশীল খাদ্যদ্রব্য, যেমন রান্না করা খাবার, তরিতরকারি, ফলমূল, পান, সুপারি ইত্যাদি সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়া যাবে না।

● পাসপোর্ট আকারের ছবি, পাসপোর্টের ফটোকপি, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকার সনদ। প্রত্যেক হজযাত্রীর ৭ সংখ্যার একটি পরিচিতি নম্বর থাকে। এর প্রথম ৪ সংখ্যা এজেন্সির নম্বর আর শেষ ৩ সংখ্যা হজযাত্রীর নম্বর।  

● সৌদি সরকার হজযাত্রীদের জন্য ই-ভিসা চালু করেছে। এই ভিসা পাসপোর্টের সঙ্গে লাগানো থাকে না। কাগজে প্রিন্ট করে দেবে। ফলে হজযাত্রীদের এটি আলাদাভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। আগে পাসপোর্টের সঙ্গে ভিসা লাগানো থাকত বলে আলাদা করে ভিসা সংরক্ষণের প্রয়োজন হতো না।

প্রথম আলো হজ গাইড পড়তে ক্লিক করুন