ইউরোপের জ্ঞানের বিকাশে ইসলাম

১৬৯৭ সালে প্যারিসে যখন ফরাসি প্রাচ্যবিদ বার্থেলেমে দ্য’হারবলোর বিবলিওতেক ওরিয়েনতেলে বা প্রাচ্যকোষ প্রকাশিত হয়, তখন তাই গোটা ইউরোপে ইসলামি দুনিয়া সম্পর্কে সবচেয়ে বড় ও উচ্চাভিলাষী রেফারেন্স বই হিসেবে স্বীকৃত পায়। কেননা, এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো ইউরোপের পাঠকেরা আরবি, ফারসি ও তুর্কি ভাষার লেখকদের একগুচ্ছ রচনার সঙ্গে পরিচিতি হয়। পাশাপাশি মুসলমানদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ক আট হাজারের বেশি বর্ণানুক্রমিক নিবন্ধ ঠাঁই পায় এই কোষগ্রন্থে। তাই এই কোষগ্রন্থটিকে ইসলাম ও আরব জাহান সম্পর্কে ইউরোপীয়দের ধারণা বদলে দেওয়ার অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বস্তুত দ্য’হারবলো এবং তাঁর মতো আরও কয়েকজন পণ্ডিত—যেমন কোরআনের অনুবাদক জর্জ সেল এবং আরবদের বিজয়–অভিযানের ইতিহাসবেত্তা সাইমন ওকলে—নিরলসভাবে বিভিন্ন ইসলামি বইপত্র ও রচনা সংগ্রহ করে সেগুলো অনুবাদ, রূপান্তর, ব্যাখ্যা ও গ্রন্থনা করেন। এসব কাজে তাঁরা আসলে অষ্টাদশ শতকে মঁতেস্কু, ভলতেয়ার ও গিবনের মতো পণ্ডিতদের অগ্রগামী ছিলেন। মধ্যযুগে ইউরোপের খ্রিষ্টান পাদরি ও পণ্ডিতরা ইসলামকে প্রাচ্যের একটি বিকৃত ধর্মচর্চা হিসেবে প্রমাণ করার জন্য উঠে-পড়ে লিখেছিলেন। সে উদ্দেশেই তাঁরা কিছু ইসলামি রচনার অনুবাদ ও প্রচার করেন। তবে দ্য’হারবলো ও তাঁর সমসাময়িকেরা ইসলামি বিশ্বের সংস্কৃতিকে স্বীকার করে নিয়ে তুলনামূলক নিরপেক্ষভাবে কাজ করেছেন।

আরও পড়ুন

৩০০ বছরের বেশি সময় পরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের উইলিয়ামস কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপক আলেজান্ডার বেভিলাকুয়া এই বিষয়টাকেই নতুনভাবে তুলে এনেছেন তাঁর রচিত দ্য রিপাবলিক অব অ্যারাবিক লেটারস বইটিতে। ফাইনান্সিয়াল টাইমস–এ এ বইটি আলোচনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে যে বেভিলাকুয়া সপ্তদশ শতকে ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টান্ট ধর্মতত্ত্ববিদ, যাজক ও পণ্ডিতরা যে ইসলাম সম্পর্কে নিবিড় অধ্যয়নে নেমেছিলেন, তার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। এর মূল কারণ এই নয় যে তাঁরা নিজেদের ধর্ম সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে পড়েছিলেন, বরং এ জন্য যে তাঁরা জ্ঞানচর্চা ও বিকাশের একটি বিবর্তনকে বুঝতে চেয়েছিলেন।

আরবি, ইংরেজি, ফরাসি, জার্মানি, ইতালীয় ও লাতিন উৎস ব্যবহার করে বেভিলাকুয়া দেখিয়েছেন যে খ্রিষ্টান পণ্ডিতরা নিবিড়ভাবে আরবি রচনা ও লেখনী অধ্যয়ন করেছেন। এর ফলে তাঁরা যে জ্ঞান লাভ করেছেন, সে জন্য তাঁরা মুসলিম বিশেষত উসমানীয় ঐতিহ্যের কাছে ঋণী। এর মধ্য দিয়ে ইউরোপের আলোকায়নের যুও (এইজ অব এনলাইটেনমেন্ট) সমৃদ্ধ হয়েছে।

দ্য রিপাবলিক অব অ্যারাবিক লেটারস: ইসলাম অ্যান্ড ইউরোপিয়ান এনলাইটেনমেন্ট; আলেকজান্ডার বেভিলাকুয়া; হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ম্যাসাচুসেটস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

আরও পড়ুন