কুরাইশ বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে

কুরাইশ ঐতিহ্যগতভাবে একটি বণিক বংশ। অভিজাত কবিলা। আরবের প্রসিদ্ধ সম্প্রদায়। নেতৃত্বগুণে বলীয়ান অভিজাত গোষ্ঠী। মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর বংশধারায় মিলিত এ বংশ। মানবতার মুক্তির দূত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এরও আগমন ঘটেছে এ বংশে। হজরত আদমকে (আ.) কুরাইশ বংশের প্রথম পুরুষ হিসেবে গণ্য করা হয়, হজরত ইবরাহিমকে (আ.) এ বংশের বিশতম অধস্তন পুরুষ বলে গণ্য করা হয়। এ বংশের সদস্য হিসেবে হজরত নুহ (আ.)-এর নামও বিভিন্ন বর্ণনায় উল্লেখ রয়েছে। হজরত আদম (আ.)-এর দশম অধস্তন পুরুষ তিনি। (সীরাতে ইবনে হিশাম, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা: ৪২)

আরও পড়ুন

হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর দুই ছেলের মধ্যে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর বংশে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) জন্মগ্রহণ করেন। বিশ্বখ্যাত মুসলিম গ্রন্থকার সুহাইল এবং ইতিহাসবিদ ইবনে জাবির তাবারিও এ বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। তারা উভয়েই বলেছেন, ‘আদনান ইবনে উদদ ইবনে হামিশা থেকেই হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর পার্থক্য ৪০ পুরুষের। হজরত ইসমাইল (আ.)-এর জন্মের পর হজরত ইব্রাহিম (আ.) বিবি-সন্তানকে মহান প্রভুর নির্দেশে কাবা শরিফের নিকটস্থ এক জায়গায় রেখে এসেছিলেন। তখন সেখানে কোনো মানুষ বসবাস করত না। পানিশূন্য মরুভূমি ছিল সেখানটা। পরবর্তীকালে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পায়ের আঘাতে আল্লাহ তায়ালা কুদরতিভাবে পানির বন্দোবস্ত করে দেন—যা পরবর্তীকালে জমজম নামে পরিচিতি লাভ করে। এরপর থেকে আস্তে আস্তে সেখানে জনবসতি গড়ে ওঠে এবং কুরাইশ বংশের পুনরায় আবাদ শুরু হয়। মক্কায় কুরাইশ বংশের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার বসবাস ছিল। কুরাইশ বংশের ১৫টি গোষ্ঠীর মধ্যে ৯টি গোষ্ঠী মক্কা মোকাররমায় কাবা শরিফকেন্দ্রিক মূর্তি পূজা নিয়ে ব্যবসা করত।’ (সীরাতে ইবনে হিশাম, ১৯৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা: ৩৯-৪৫)

আরও পড়ুন

মূলত হজরত ইসমাইল (আ.)–এর পুত্র আদনানের থেকে কুরাইশ বংশধারার উৎপত্তি ঘটেছে। তার থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.) পর্যন্ত বংশলতিকাটি এমন—‘মুহাম্মদ (সা.) ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল মুত্তালিব ইবনে হাশিম ইবনে আবদে মানাফ ইবনে কুসাই ইবনে কিলাব ইবনে মুররাহ ইবনে কাব ইবনে লুআই ইবনে গালিব ইবনে ফিহর ইবনে মালিক ইবনে নজর ইবনে কিনানা ইবনে খুজাইমা ইবনে মুদরিকা ইবনে ইলিয়াস ইবনে মুজার ইবনে নিজার ইবনে মাআদ ইবনে আদনান।’ (খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ (রা.), শাইখ আবদুল হামিদ মাহমুদ তাহমাজ ও শাইখ ইবরাহিম মুহাম্মাদ হাসান আল জামাল, অনুবাদ: মাহমুদ সিদ্দিকী, দ্বীন পাবলিকেশনস, পৃষ্ঠা: ৫১-৫২-৫৬)

অনেকের মতে, নজর ইবনে কিনানার বংশধররাই মূলত কুরাইশ। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, আবুল ফিদা হাফিজ ইবনে কাসীর আদ-দামেশকী (রহ.), ইসলামিক ফাউন্ডেশন, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা: ৩৮৫)

হিজাজের অধিবাসীদের মধ্যে কুরাইশ বংশই সবচেয়ে অভিজাত। ‘কুরাইশ’ উপাধিতে ভূষিত ‘ফিহর ইবনে মালিক’ নামে এক ব্যক্তি থেকে এ বংশধারা পুনর্বিস্তৃত হয়েছে। (আরব জাতির ইতিহাস, সৈয়দ আমীর আলী, অনুবাদ: মফীজুল্লাহ কবীর, বাংলা একাডেমি, ১৯৬৮, পৃষ্ঠা: ৪)

আরও পড়ুন

হজরত ইসমাঈল (আ.)-এর বংশধর আদনানের পুত্র মাআদের সঙ্গে মিলিত হয়েছে ফিহর ইবনে মালিকের বংশধারা। তাঁকে কুরাইশ বংশের প্রতিষ্ঠাতা পুরুষ হিসেবে অধিকাংশ ইতিহাসবিদ স্বীকৃতি প্রদান করেছে। তাঁর উপনাম ছিল গালিব, উপাধি ছিল কুরাইশ। পেশায় তিনি ছিলেন সরদার। তবে বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায়, ব্যবসা-বাণিজ্যেও তার উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ ছিল। (আনসাবুল আশরাফ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা: ৪৬)

 মিরাজ রহমান: লেখক

আরও পড়ুন