রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর আয়-উপার্জন

মানুষ হিসেবে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কি কখনো আমাদের মতো আয়-উপার্জন করার প্রয়োজন পড়েছে? কীভাবে সংসার চলত তাঁর? প্রতি মাসে কত টাকা উপার্জন করতেন তিনি? আদৌ কি তিনি কোনো চাকরি করেছেন? নাকি শুধু ব্যবসা-বাণিজ্য করেই আয়-উপার্জন পর্বের সমাপ্তি ঘটিয়েছেন তিনি?

আল্লাহতায়ালা সব যুগে সব জাতির কাছে পথপ্রদর্শক হিসেবে নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন। পবিত্র কোরআনে এ ব্যাপারে তিনি এরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক জাতির জন্য পথ-প্রদর্শনকারী রয়েছে।’ (সুরা রাদ, আয়াত: ৭) এ ব্যাপারে অন্যত্র আল্লাহতায়ালা আরও এরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক জাতির জন্য একজন রাসুল পাঠানো হয়েছে। রাসুলগণ যখন আসেন, তখন ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে তাদের মাঝে ফয়সালা করা হয়—তাদের প্রতি কোনো জুলুম করা হয় না। (সুরা ইউনুস, আয়াত: ৪৭)

নবী-রাসুলেরা পৃথিবীতে এসে পথভোলা মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন এবং ধর্ম ও নৈতিকতার শিক্ষা দিয়েছেন। মঙ্গল ও কল্যাণকর বিষয়াদি শিখিয়েছেন। এমন নানাবিধ মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের চূড়ান্ত লক্ষ্যে হজরত মুহাম্মাদ (সা.)–এরও আগমন ঘটেছে।

আরও পড়ুন

নবী-রাসুলেরাও মানুষ ছিলেন। রক্তে-মাংসে গড়া মানুষ। তাই মানুষ হিসেবে জীবনমুখী বিভিন্ন প্রয়োজন থাকাটা স্বাভাবিক। পার্থিব জীবনের অন্যতম একটি প্রয়োজন আয়-উপার্জন। আর্থিক সক্ষমতা। দুনিয়ায় থাকতে হলে খেয়ে-পরে বাঁচতে হবে। আর খেয়ে-পরে বাঁচতে আয়-উপার্জন জরুরি। এ জন্য রিজিক অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে আর আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে-যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ (সুরা জুমা, আয়াত: ১০)

নবী-রাসুলেরা মানুষ হলেও তাদের চিরন্তন বৈশিষ্ট্য ছিল। বৈষয়িক ধনসম্পদের প্রতি তাদের কোনো আকর্ষণ ছিল না। ধনসম্পদ সঞ্চয়ের প্রতিও কোনো লোভ-লালসা ছিল না। যতটুকু জীবিকা নির্বাহ না করলেই নয় ততটুকু আয়-উপার্জনের নিমিত্তে বিভিন্ন পেশা গ্রহণ করেছেন তারা। পার্থিব জীবনের এ অমোঘ সত্য মেনে প্রায় প্রত্যেক নবী-রাসুলই কোনো না কোনো কাজ করছেন। সম্মানজনক কোনো না কোনো পেশায় যুক্ত ছিলেন তারা। সব নবী-রাসুল ছাগল-ভেড়া চরাতেন। নিজেদের কষ্টার্জিত সম্পদ থেকে আহার করতেন এবং উপার্জন থেকে গরিব ও দুস্থদের সাহায্য করতেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী-রাসুল হজরত মুহাম্মাদ (সা.)–ও বিভিন্ন পেশা অবলম্বন করে উপার্জন করেছেন। হালালভাবে জীবিকার উপার্জন করার উদ্দেশ্যে কাজ করেছেন তিনি। বিভিন্ন পেশা গ্রহণ করেছেন এবং নিজ হাতে উপার্জন করেছেন।

অনেক ঐতিহাসিক বর্ণনা থেকে জানা যায়, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর চাচাকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে বকরি চরিয়েছেন। শৈশবে তিনি মেষ বা বকরি অথবা ছাগল চরিয়ে উপার্জন করেছেন।

আবু হুরায়রা (রা.)–র বর্ণনায় পাওয়া যায় যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা এমন কোনো নবী পাঠাননি, যিনি ছাগল (মেষ) না চরিয়েছেন। তখন সাহাবিরা জানতে চাইলেন, আপনিও? তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমি কয়েক কীরাতের (মুদ্রার নির্দিষ্ট পরিমাণ) বিনিময়ে মক্কাবাসীদের ছাগল (মেষ) চরাতাম।’ (বুখারি, হাদিস: ২,২৬২)

আরও পড়ুন

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.)–র বর্ণনায় আছে যে তিনি বলেন, ‘আমরা মাররুজ জাহরান নামে একটি স্থানে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম এবং পিলু ফল তুলছিলাম। তিনি (রাসুল) বললেন, কালোটা তুলে নিয়ো। কারণ, এগুলো বেশি সুস্বাদু। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কি ছাগল (মেষ) চরিয়েছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। ছাগল (মেষ) চরায়নি এমন কোনো নবী আছে কি?’ (বুখারি, হাদিস: ৫,৪৫৩; মুসলিম, হাদিস: ২,০৫০)

অর্থাৎ সব নবীই ছাগল (মেষ) চরিয়েছেন।

ইতিহাস থেকে আরও জানা যায়, খাদিজা (রা.)-র বোন হালা তার স্বামীর পশুর পাল চরানোর জন্য দুজন লোক নিয়োগ করেছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) আর অন্য একজন রাখাল। হালা তার পারিশ্রমিকের কিছু অংশ দিয়ে বলেছিলেন, ‘পশু নিয়ে ফিরে আসার পর বাকিটা দেবেন।’ পশু চরানো শেষে ফিরে আসার পর অন্য রাখাল রাসুলুল্লাহকে (সা.) বললেন, ‘চলুন! আমাদের বাকি পারিশ্রমিক নিয়ে আসি।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন বলেছিলেন, ‘একজন নারীর কাছে গিয়ে পারিশ্রমিক আনতে আমার কেমন যেন লাগছে; তুমি গিয়ে তোমার পারিশ্রমিকের সঙ্গে আমারটাও নিয়ে এসো।’ (খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ রাদিয়াল্লাহু আনহা,  ড. ইয়াসির কাদি, অনুবাদ: মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ, প্রচ্ছদ প্রকাশন, পৃষ্ঠা: ২৬।)

 মিরাজ রহমান: লেখক

আরও পড়ুন