কিন্তু এর চেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে ‘আধ্যাত্মিক বিস্তার।’ মুসলিম মিশনারি বা ধর্মপ্রচারকরা নিরন্তরভাবে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে গেছেন যা এই ধর্মকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষকে আকৃষ্ট করেছে।
প্রধানত তরবারির জোরে বা বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ইসলামের প্রচার ঘটেছে বলে পাশ্চাত্য জগতে যে ধারণা ও প্রচারণা আছে, আরনল্ড তা নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বরং বিভিন্ন স্থানে ইসলামের আগমনের পূর্বাপর বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে অনেক ক্ষেত্রে যুদ্ধ বা আক্রমণ অনিবারয ছিল। কিন্তু মুসলমানরা বিজয় লাভ করার পর খুব কমক্ষেত্রেই বিজেতাদেরকে বাধ্য করছে ইসলাম গ্রহণে। বরং অনেক স্বেচ্ছায় আর অনেকে ইসলামের মর্মবাণীতে মুগ্ধ হয়ে নতুন ধর্ম নিয়েছে। আর যারা আগের ধর্মে বহাল থেকেছে, তাদের ধর্ম চর্চায় সাধারণত বিজয়ীরা বা নতুন শাসকরা তেমন কোনো বাধা তৈরি করেনি।
সূচনা ও উপসংহারসহ মোট তেরটি অধ্যায়ে বিভক্ত বইটির কাহিনী শুরু হয়েছে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন এবং মক্কা ও মদীনায় ইসলামের গোড়াপত্তন দিয়ে। এরপরের অধ্যায়গুলোতে যথাক্রমে খ্রিস্টান অধ্যুষিত পশ্চিম এশিয়ায়, আফ্রিকা ও স্পেনের ভূখন্ডে ইসলামের বিস্তার; তুর্কিদের অধীনে খ্রিস্টান ইউরোপের ইসলামের প্রচার; পারস্য ও মধ্য এশিয়ায় ইসলামের জয়যাত্রা; মঙ্গোল ও তাতারদে মধ্যে ইসলাম প্রচার; ভারতবর্ষে ইসলামের প্রসার; চীনে ইসলাম; আফ্রিকায় ইসলাম; এবং মালয় দ্বীপপুঞ্জে ইসলামের আগমন নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। ১৮৯৬ সালে বইটি প্রথম প্রকাশের সময় পৃথিবীতে ২০ কোটি মুসলমান ছিল।
আরনল্ড বইয়ের তথ্যসূত্র হিসেবে আরবি, ফারসি, ফরাসি, ইংরেজি, জার্মান ও ডাচসক বিভিন্ন ভাষার দলিলদি ব্যবহার করেছেন। ইসলামের বিস্তার সম্পর্কে নির্মোহভাবে জানতে আগ্রহীদের জন্যতো বটেই, ইসলাম নিয়ে অধ্যায়নকারী ও গবেষণাকারীদের জন্য এটি এক অনন্য বই।
দ্য স্প্রেড অব ইসলাম ইন দ্য ওয়ার্ল্ডআ হিস্টরি অব পিসফুল মুভমেন্ট, টমাস আরনল্ড, গুডরিড বুকস, নয়াদিল্লি, ২০০৮