জান্নাতে কার পায়ের শব্দ শুনেছিলেন রাসুল (সা.)

মেরাজের রাতে রাসুল (সা.) জান্নাত পরিদর্শনের সময় হজরত বেলাল ইবনে রাবাহ (রা.)–র পায়ের আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে রাসুল (সা.) হজরত বেলাল (রা.)–কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে বেলাল, ইসলাম গ্রহণের পর তুমি কী এমন কাজ করেছিলে, যে কারণে তুমি জান্নাতে পৌঁছে গেলে? গতরাতে আমি জান্নাতে প্রবেশ করে তোমার পায়ের শব্দ শুনতে পেলাম!’

হজরত বেলাল (রা.) বললেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমি এমন কিছুই করিনি। তবে আমি কোনো গুনাহ করলেই দুই রাকাত নামাজ আদায় করি। আর অজু চলে গেলে তখনই আবার অজু করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করি।’

আরও পড়ুন

কৃষ্ণাঙ্গ সাহাবি হজরত বেলাল (রা.)–র জন্ম মক্কায়। তবে তিনি ছিলেন আবিসিনিয়ার (বর্তমান ইথিওপিয়া) বংশোদ্ভূত। মক্কার প্রভাবশালী কুরাইশ নেতা উমাইয়া ইবনে খালফের ক্রীতদাস ছিলেন তিনি। কুরাইশদের চোখে ক্রীতদাস হিসেবে বেলালের (রা.) ইসলাম গ্রহণ ছিল চরম ধৃষ্টতা। তাঁদের শত বছরের বিশ্বাস, চিন্তা ও আভিজাত্যের প্রতি প্রচণ্ড আঘাত হানে।

হজরত বেলাল (রা.)–এর মনিব উমাইয়া তাঁর ইসলাম গ্রহণের কথা জানতে পেরে তাঁকে ইসলাম ত্যাগের জন্য জবরদস্তি করতে থাকেন। তাতে বিফল হওয়ায় উমাইয়ার নির্দেশে বেলাল (রা.)–এর ওপর শুরু হয় নিষ্ঠুর নির্যাতন। কখনো মরুভূমির উত্তপ্ত বালুতে, কখনো তপ্ত অঙ্গারের ওপর তাঁকে শুইয়ে রাখা হতো, নৃশংসভাবে গলায় উত্তপ্ত রশি বেঁধে ছাগলের মতো তাঁকে মক্কার অলিতে-গলিতে হেঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হতো। কখনো বুকের ওপর ভারি পাথর রেখে দেওয়া হতো। রুদ্ধ হয়ে আসত তাঁর নিশ্বাস।

আরও পড়ুন

এত নির্যাতনের মধ্যেও হজরত বেলাল (রা.) শুধু আহাদ, আহাদ (আল্লাহ এক, আল্লাহ এক) বলে চিৎকার করতেন। একদিন বাতহা উপত্যকায় বেলাল (রা.)–এর অত্যাচার চলছিল। আবু বকর (রা.) যাচ্ছিলেন সে পথ ধরে। ঘটনা দেখে তিনি ভীষণ মর্মাহত হলেন। মোটা অঙ্কের অর্থ উমাইয়াকে দিয়ে বেলাল (রা.)-কে তিনি তাঁর কাছ থেকে কিনে নিলেন। বেলাল (রা.) মুক্তি পেলেন দাসের জীবন থেকে।

আরও পড়ুন

বদর, উহুদ, খন্দক যুদ্ধসহ সব সামরিক অভিযানেই হজরত বেলাল (রা.)  অংশ নিয়েছিলেন। বদর যুদ্ধের ময়দানে কুরাইশদের পক্ষে ছিলেন হজরত বেলাল (রা.)–এর একসময়ের মনিব অত্যাচারী অবিশ্বাসী উমাইয়া ইবনে খালফ। সে যুদ্ধে বেলাল (রা.)–এর তরবারির আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়। এভাবে এক সময়কার ক্রীতদাস বেলাল (রা.)–এর হাতে প্রাণ হারান তাঁর পুরোনো নির্যাতনকারী মনিব।

আরও পড়ুন