কেন দরুদ পাঠ করব
মহানবীর (সা.) প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হলো তাঁর প্রতি দরুদ পড়া। দরুদ হলো একটি সম্ভাষণ। আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর জন্য আল্লাহর কাছে অনুগ্রহ ও শান্তি প্রার্থনাই হলো দরুদ। দরুদ শব্দটি ফারসি। আরবি ‘সালাত’ শব্দটি যখন রাসুল (সা.)-এর প্রতি অনুগ্রহ কামনার জন্য ব্যবহৃত হয়, ফারসিতে তখন তাকে দরুদ বলে। দরুদ পড়া সহজ এবং সওয়াবও অনেক। কোরআনে আছে, আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর জন্য দোয়া করেন। হে বিশ্বাসীগণ, তোমরাও নবীর জন্য দোয়া করো এবং পূর্ণ শান্তি কামনা করো। (সুরা আহজাব, আয়াত: ৫৬)
সাহাবিরা একবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘আল্লাহর রাসুল, আমরা কীভাবে আপনার ওপর দরুদ পাঠ করবো?’ তিনি তখন সাহাবিদের ‘দরুদে ইবরাহীম’ শেখান; যা এখন আমরা নামাজের শেষ বৈঠকে পাঠ করি। বুখারি, হাদিস: ৩,৩৬৯)
নবীজির (সা.) ওপর দরুদ পাঠ স্বাভাবিক যেকোনো সময় করা যায়। কোথাও বসে বসে বা হাঁটতে হাঁটতেও দরুদ পাঠ করা যায়। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর এক বার দরুদ পড়ে, আল্লাহ তার ওপর দশ বার রহম করেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৭৯৮)
আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়, তাঁর উপর একবার দরুদ পড়লে আল্লাহ দশটি পাপ মাফ করেন, আল্লাহ দশ ধাপ মর্যাদা উন্নীত করেন। (নাসাঈ, হাদিস: ১,২৯৭)
পৃথিবীতে রাসুল (সা.)-এর সান্নিধ্য পাওয়ার সুযোগ তো আর নেই, পরকালে তার সান্নিধ্য লাভের অন্যতম উপায় হলো অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করা। তিনি বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আমার কাছের ব্যক্তি সে হবে, যে আমার ওপর বেশি দরুদ পড়েছে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৪৮৪)
নবীজির (সা.) নাম শুনলে দরুদ পড়তে হয়। বলতে হয় ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’। এর অর্থ: আল্লাহ তাঁকে অনুগ্রহ করুন এবং শান্তি দিন। দরুদ না পড়লে কী হবে? তিনি বলেন, ’তার নাক ভূলুণ্ঠিত হোক, যে আমার নাম শুনেও দরুদ পাঠ করেনি!’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩,৫৪৫)
দরুদ পাঠ একটি স্বতন্ত্র ইবাদতও বটে। সময় করে যেমন কোরআন তিলাওয়াত করা হয় , নফল নামাজ পড়া হয়, বইপত্র পড়ে জ্ঞানার্জন করা হয়; দিনের কিছু অংশ দরুদ পাঠে নিয়োজিত থাকা উচিত। সকালে হাঁটার সময়, মসজিদে নামাজে যেতে যেতে, টেবিলে বসে খাবারের অপেক্ষার সময়, ঘুমানোর আগে বিছানায়, রান্না করার ফাঁকে, ক্লাসের অবসরে, ভিড় বাসে জ্যামে থেমে আছে যখন, তখনো দরুদ পাঠ করা যায়।
ছোট ও সংক্ষিপ্ত নানান রকমের দরুদ আছে। একটি হলো দরুদে ইবরাহীম, যা আমরা প্রতি বেলার নামাজে পড়ি। পড়তে খুব বেশি সময়ও লাগে না। কিন্তু বিনিময় অনেক বেশি। সাহাবি উবাই ইবনে কাব (রা.) একদিন জিজ্ঞেস করেন, ‘আল্লাহর রাসুল, আমি তো অনেক বেশি দরুদ পড়ি। আপনার ওপর দরুদ পড়ায় আমার কতটুকু সময় বরাদ্দ রাখব?’
রাসুল (সা.) বললেন, ‘তোমার যতক্ষণ ইচ্ছা।’
‘এক-চতুর্থাংশ?’
‘
তোমার যতক্ষণ ইচ্ছা; তবে এর চেয়ে বেশি হলে ভালো হয়।’
‘অর্ধেক সময়?’
‘তোমার যতক্ষণ ইচ্ছা; তবে এর চেয়ে বেশি হলে ভালো হয়।’
‘দুই-তৃতীয়াংশ সময়?’
‘তোমার যতক্ষণ ইচ্ছা; তবে এর চেয়ে বেশি হলে ভালো হয়।’
‘তাহলে আমার পুরো সময় দরুদ পাঠে কাটিয়ে দেব!’
এবার তিনি বললেন, ‘তোমার চিন্তা ও কষ্ট তাতে যথেষ্ট হবে, তবে এমন করলে তোমার পাপগুলো ক্ষমা করা হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৪৫৭)