হজের পাঁচ দিনে কী কী হয়

মসজিদুল হারাম, মক্কা

হজ ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি এবং সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য ফরজ। হজ পালনের জন্য নির্দিষ্ট বিধিবিধান মেনে জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১২ বা ১৩ তারিখ পর্যন্ত পাঁচ দিনের কার্যক্রম পালন করতে হয়। নিচে হজের পাঁচ দিনের কার্যক্রম বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো:

প্রথম দিন (৮ জিলহজ): ইহরাম ও মিনায় অবস্থান

ইহরাম বাঁধা: হজের প্রথম দিন হজযাত্রীরা মক্কার হারাম শরিফ, বাসা বা হোটেল থেকে হজের নিয়ত করে ইহরাম বাঁধেন। ইহরামের জন্য পুরুষেরা দুই টুকরো সেলাইবিহীন সাদা কাপড় পরেন এবং নারীরা সাধারণ পোশাক পরে নিয়ত করেন।

মিনায় যাত্রা: ইহরামের পর হজযাত্রীরা মিনার উদ্দেশে রওনা হন

মিনায় কার্যক্রম: মিনায় ৮ জিলহজের জোহর থেকে ৯ জিলহজের ফজর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব। এ সময় মিনায় অবস্থান করা সুন্নত। হজযাত্রীরা এখানে তাকবির, তাসবিহ, দোয়া এবং কোরআন তিলাওয়াতে সময় কাটান।

আরও পড়ুন

দ্বিতীয় দিন (৯ জিলহজ): আরাফাতে অবস্থান

আরাফাতে যাত্রা: সকালে মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে রওনা হতে হয়। এ সময় তাকবির পাঠ করা হয়, ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’

আরাফাতে অবস্থান: আরাফাতে অবস্থান হজের প্রধান রোকন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আরাফাতে অবস্থান করাই হজ।’ হজযাত্রীরা নিজ নিজ তাঁবুতে জোহর ও আসর নামাজ নির্দিষ্ট সময়ে আলাদাভাবে আদায় করেন। এ সময় তওবা-ইস্তিগফার, তাকবির, তাসবিহ, তাহলিল, মোনাজাত এবং কান্নাকাটি করা হয়। সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতে অবস্থান করা ওয়াজিব।

মুজদালিফায় যাত্রা: সন্ধ্যায় মাগরিব নামাজ না পড়ে হজযাত্রীরা মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা হন। মুজদালিফায় পৌঁছে মাগরিব ও এশার নামাজ এক আজান ও দুই ইকামতে ধারাবাহিকভাবে আদায় করা হয়।

আরও পড়ুন

তৃতীয় দিন (১০ জিলহজ): মুজদালিফায় অবস্থান, পাথর নিক্ষেপ ও কোরবানি

মুজদালিফায় অবস্থান: হজযাত্রীরা মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করেন। সুবহে সাদিক পর্যন্ত থাকা সুন্নত এবং সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত এক মুহূর্ত অবস্থান করা ওয়াজিব। ফজর নামাজের পর সূর্যোদয়ের কিছু আগে মিনার উদ্দেশে রওনা হওয়া উত্তম।

পাথর সংগ্রহ: মুজদালিফায় রাতে মিনায় শয়তানকে মারার জন্য ৭০টি ছোট পাথর সংগ্রহ করতে হয়।

শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ: ১০ জিলহজ সকালে মুজদালিফা থেকে মিনায় এসে বড় জামরাতে (জামরাতুল আকাবা) সাতটি পাথর নিক্ষেপ করা হয়।

কোরবানি: বড় জামরাতে পাথর নিক্ষেপের পর মিনায় কোরবানি করা ওয়াজিব। কোরবানির পশু হালাল ও ত্রুটিমুক্ত হতে হবে।

মাথা মুণ্ডন: কোরবানির পর মাথা মুণ্ডন বা চুল ছাঁটার মাধ্যমে ইহরাম ত্যাগ করা হয়। এরপর স্বাভাবিক পোশাক পরা যায়।

তাওয়াফে জিয়ারত: সম্ভব হলে এদিন মক্কায় ফিরে তাওয়াফে জিয়ারত (হজের ফরজ তাওয়াফ) সম্পন্ন করা হয়।

আরও পড়ুন

চতুর্থ দিন (১১ জিলহজ): মিনায় অবস্থান ও পাথর নিক্ষেপ

মিনায় অবস্থান: হজযাত্রীরা মিনায় অবস্থান করেন এবং তিনটি জামরাতে (ছোট, মধ্যম, বড়) ধারাবাহিকভাবে ৭টি করে মোট ২১টি পাথর নিক্ষেপ করেন। এটি দুপুরের পর থেকে সূর্যাস্তের মধ্যে সম্পন্ন করা হয়।

তাওয়াফে জিয়ারত: যদি ১০ জিলহজ তাওয়াফে জিয়ারত না করে থাকেন, তবে এদিন বা পরের দিনের মধ্যে তা সম্পন্ন করতে হবে।

পঞ্চম দিন (১২ জিলহজ): মিনায় অবস্থান, পাথর নিক্ষেপ ও প্রস্থান

মিনায় অবস্থান ও পাথর নিক্ষেপ: ১১ জিলহজের মতো এদিনও তিন জামরাতে ৭টি করে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করা হয়।

মক্কায় প্রত্যাবর্তন: সূর্যাস্তের আগে মিনা থেকে মক্কায় ফিরে যাওয়া যায়। তবে কেউ ইচ্ছা করলে ১৩ জিলহজ পর্যন্ত মিনায় থেকে তৃতীয় দিনের মতো পাথর নিক্ষেপ করতে পারেন।

তাওয়াফে জিয়ারত: এটি এখনো সম্পন্ন না হলে ১২ জিলহজের মধ্যে করতে হবে।

তাওয়াফে বিদা: হজের কার্যক্রম শেষে মক্কা ত্যাগের আগে তাওয়াফে বিদা (বিদায়ী তাওয়াফ) করা ওয়াজিব।

হজের পাঁচ দিন মুসলমানদের জন্য আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, ত্যাগ এবং ঐক্যের প্রকাশ। আরাফাতে অবস্থান, তাওয়াফে জিয়ারত এবং কোরবানি হজের প্রধান রোকন। এই কার্যক্রম হজরত ইব্রাহিম (আ.), হজরত ইসমাইল (আ.), এবং হজরত হাজেরা (আ.)-এর ত্যাগের স্মৃতি জাগিয়ে তোলে এবং মুসলিম উম্মাহর ভ্রাতৃত্ববোধকে শক্তিশালী করে।

আরও পড়ুন