সুরা আল ইমরানের বিষয়বস্তু

সুরা আল-ইমরান পবিত্র কোরআনের তৃতীয় সুরা। মহানবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে এই সুরা পড়বে, সপ্ত জমিন থেকে সপ্ত আসমান পর্যন্ত তার সওয়াব হবে ।

সুরা আলে ইমরানে ইমরান পরিবারের কথা বলা হয়েছে। পরিবারটি আল্লাহর ওপর অবিচলতা, পরিশুদ্ধতা এবং ধর্মের সেবার এক উজ্জ্বল নিদর্শন। এ সুরার কেন্দ্রীয় বিষয় আল্লাহর ধর্মের ওপর অবিচলতা।

সুরাটির ১ থেকে ৬ আয়াতে রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কিতাব নাজিলের ঘোষণা। ৭-৯ আয়াতে কোরআনের আয়াতের প্রকারভেদ। কোরআন থেকে কারা উপদেশ লাভ করবে এবং কারা করবে না। ১০-১২ আয়াতে বলা হয়েছে অস্বীকারকারীদের পরিণতি। ১৩-১৮ আয়াতে আল্লাহর পথে সংগ্রামকারী, মুত্তাকি ও জ্ঞানীদের গুণাবলি।

আরও পড়ুন

১৯-২০ আয়াতে সব নবীর দীনই যে ছিল ইসলাম, সে কথা। ২১-২৫ আয়াতে বলা হয়েছে ইহুদিদের সীমালঙ্ঘন ও ভ্রান্ত ধারণা। ২৬-৩২ আয়াতে আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্ব। মুমিনদের চলার পথের কথাও বলা হয়েছে। ৩৩-৬৩ আয়াতে হজরত ঈসা (আ.)–এর মা মারিয়মের জন্ম ও লালন–পালনের ইতিবৃত্ত। হজরত ঈসা (আ.)–এর জন্ম, আহ্বান, মুজিযা এবং বনী ইসরায়েলিদের হঠকারিতা। ৬৪-৮০ আয়াতে ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের প্রতি নসিহত এবং তাদের বিচ্যুতির কথা।

৮১-৮৪ আয়াতে বলা হয়েছে নবীদের থেকে আল্লাহর অঙ্গীকার গ্রহণের কথা। ৮৫-৯১ আয়াতে বলা হয়েছে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো মতবাদ আল্লাহ্ গ্রহণ করবেন না। ৯২ আয়াতে কোন ধরনের দান থেকে পুণ্য লাভ করা যাবে। ৯৩-১০১ আয়াতে ইহুদিদের অনুসরণ না করতে মুমিনদের প্রতি উপদেশ। ১০২-১১৫ আয়াতে মুসলিম উম্মাহর দায়িত্ব ও কর্তব্য। ১১৬-১২০ আয়াতে কাফিরদের সঙ্গে মুমিনদের আচরণ। ১২১-১২৯ আয়াতে বদরের যুদ্ধে মুমিনদের আল্লাহ্‌র সাহায্য করার কথা। ১৩০-১৩২ আয়াতে মুমিনদের সুদ গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা।

আরও পড়ুন

১৩৩-১৩৮ আয়াতে মুমিনদের অর্জনীয় মহত্তম গুণাবলি। ১৩৯-১৮৯ আয়াতে ওহোদ যুদ্ধের পর্যালোচনা। ১৯০-২০০ আয়াতে বিশ্বপ্রকৃতি নিয়ে ভাবার আহ্বান, মুমিনদের বৈশিষ্ট্য ও সাফল্যের পথের কথা। (সূত্র: আল কুরআন, মাওলানা আবদুস শহীদ নাসিম, বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা সোসাইটি)

এ সুরায় তিনটি শিক্ষণীয় ঘটনার উল্লেখ আছে। প্রতিটি ঘটনাই অভূতপূর্ব। ঘটনাগুলো আল্লাহর মহত্ত্বের ইঙ্গিত দেয়।

প্রথম ঘটনা:

হজরত মারিয়াম (আ.)–এর মা হওয়া। হজরত মারিয়াম (আ.)–এর বাবা হজরত ইমরান (আ.) আল্লাহর পূণ্যবান বান্দা ছিলেন। অনেকদিন তাদের কোনো সন্তান হচ্ছিল না। একদিন তিনি দেখলেন, একটি পাখি তার বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছে। এ দৃশ্যটি তার মনকে নাড়া দিল। তাঁর মনে সন্তান লাভের আশা জেগে উঠল। তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন যে আল্লাহ তাঁকে কোনো সন্তান দিলে তিনি তাকে বায়তুল আকসায় খেদমতে ওয়াক্ফ করে দেবেন। আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেন। তাঁদের এক কন্যাসন্তান জন্ম নিল।

আরও পড়ুন

দ্বিতীয় ঘটনা:

হজরত জাকারিয়া (আ.)–র সন্তান লাভ নিষ্পাপ মেয়ের জবাব শুনে হজরত জাকারিয়া (আ.) সন্তানের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। অথচ তাঁর এবং স্ত্রীর বয়স হয়েছিল। তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করে বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমাকে তুমি তোমার কাছ থেকে সৎ বংশধর দান করো। নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা শোনো। (আয়াত: ৩৮) আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করে তাঁকে চারটি বিশেষ গুণবিশিষ্ট এক সন্তানের সুসংবাদ দিলেন। ১. তিনি ইসা (আ.)–কে সত্যায়ন করবেন এবং তার ওপর ইমান আনবেন। ২. তাকওয়া ও ইবাদতের ক্ষেত্রে তিনি সর্বোচ্চ হবেন। ৪. তিনি নবী ও পূণ্যবানদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

আরও পড়ুন

তৃতীয় ঘটনা:

হজরত ইসা (আ.)–এর জন্ম হজরত ইসা (আ.)–এর জন্ম হচ্ছে তৃতীয় শিক্ষণীয় বিষয়। পিতা ছাড়াই অলৌকিকভাবে তাঁর জন্ম হয়েছিল। ফেরেশতারা মারিয়াম (আ.)–কে সন্তান জন্মের সংবাদ দিলে তিনি বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে কোনো পুরুষ স্পর্শ করেনি, কীভাবে আমার সন্তান হবে?’ তিনি বললেন, ‘এভাবেই। আল্লাহ্ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কিছু স্থির করেন তখন বলেন, ‘হও’ আর তখনই তা হয়ে যায়। (আয়াত: ৪৭) ইসা (আ.)–কে আল্লাহ বহু মুজিজা দান করেছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর তারা ষড়যন্ত্র করল, আর আল্লাহ্ও পরিকল্পনা করলেন। আর আল্লাহই তো শ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাকারী।’ (সুরা আল ইমরান, আয়াত ৫৪, কোরানশরিফ: সরল বঙ্গানুবাদ, অনুবাদ: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন)

আরও পড়ুন