ফিতরা কেন দিতে হয়

ক. রোজাদারের রোজায় যেসব দুর্বলতা ও ভুল হয়, তা থেকে পবিত্র হওয়া। খ. দরিদ্রদের প্রতি সদ্ব্যবহার। গ. ঈদুল ফিতরের দিনে দরিদ্রদের ভিক্ষা করা থেকে বিরত রাখা। ঘ. তারাবি ও রোজার মতো নেয়ামতে ধন্য করায় আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা। ঙ. উদারতা ও সহমর্মিতার চর্চা করা।

ফিতরের নিসাব জাকাতের নিসাবের সমপরিমাণ। নিসাব মানে হলো কারো কাছে সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা অথবা তার সমমূল্যের নগদ অর্থ কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অতিরিক্ত সম্পদ ঈদুল ফিতরের দিন সময় বিদ্যমান থাকলে তার ওপর ফিতর ওয়াজিব হবে। যাঁর ওপর ফিতর আদায় করা ওয়াজিব, তিনি নিজের পক্ষ থেকে যেমন আদায় করবেন, তেমনি নিজের অধীনদের পক্ষ থেকেও আদায় করবেন। তবে এতে জাকাতের মতো বর্ষ অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়।

আরও পড়ুন

ফিতরার উপকরণ ও পরিমাণ

রাসুল (সা.)-এর যুগে মোট চারটি পণ্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা হতো। খেজুর, কিশমিশ, যব ও পনির। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘আমরা এক সা পরিমাণ খাদ্য অথবা এক সা পরিমাণ যব অথবা এক সা পরিমাণ খেজুর অথবা এক সা পরিমাণ পনির অথবা এক সা পরিমাণ কিশমিশ দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম।’ (বুখারি, হাদিস: ১,৫০৬)

খাদ্যবস্তুর পরিবর্তে সেগুলোর কোনো একটিকে মাপকাঠি ধরে তার মূল্য আদায় করা হয়।

বর্তমান বাজারদর হিসাবে যেহেতু গমের দামই সবচেয়ে কম, তাই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রতিবছর আধা ‘সা’ গমকে মাপকাঠি ধরে ওই সময়ের বাজারদর হিসাবে তার মূল্য ফিতরার সর্বনিম্ন পরিমাণ ঘোষণা করা হয়।

উত্তম হলো, নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী বেশি মূল্যের খাদ্যবস্তুকে মাপকাঠি ধরে ফিতরা আদায় করা। কেননা সদকার মূল লক্ষ্যই হলো গরিবদের প্রয়োজন পূরণ ও তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ। এ ছাড়া আদায়কারীর সামর্থ্যকেও বিবেচনায় রাখা উচিত, যদিও শরিয়তে সর্বনিম্ন মূল্যে ফিতরা আদায় করার দরজা খোলা রাখা হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে যব, কিশমিশ, খেজুর ও পনিরের হিসাবে ফিতরার আলাদা মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কেউ চাইলে আটার হিসাবে ফিতরা না দিয়ে উল্লিখিত জিনিসগুলোর হিসাবেও ফিতরা দিতে পারবেন।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগেই সদকাতুল ফিতর আদায় করা উত্তম। তবে রমজান মাসেও তা আদায় করা যায়।

আরও পড়ুন

আরবি ‘সদকাতুল ফিতর’ অর্থ ‘ঈদুল ফিতরের সদকা’। ঈদুল ফিতরের দিন আদায় করা হয় বলে একে সদকাতুল ফিতর বলা হয়। একে জাকাতুল ফিতর বা ফিতরাও বলা হয়। সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা দেওয়া ওয়াজিব। রাসুল (সা.) ছোট-বড় নারী-পুরুষ সব মুসলমানের জন্য তা আবশ্যক করেছেন।

পবিত্র রমজানের পুরো এক মাস রোজা এবং তৎসংশ্লিষ্ট ইবাদত ও বিধিনিষেধ পালনের পর শাওয়াল মাসের পয়লা তারিখে ঈদ উৎসব পালিত হয়। এ পালনের মধ্যে রয়েছে জামাতে ঈদের নামাজ আদায়, গরিব-দুঃখীদের মধ্যে ফিতরা বিতরণ এবং ভালো খাওয়াদাওয়ার আয়োজন। তবে ঈদুল ফিতর উৎসবের একটি তাৎপর্যময় অঙ্গ হলো ফিতরা বিতরণ। রোজার সময় সংযম সাধনায় কোনো ত্রুটিবিচ্যুতি ঘটে থাকলে তা সংশোধন এবং সমাজের সর্বস্তরের লোক যাতে উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পারে, সে জন্য গরিব-দুঃখীদের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট হারে সদকায়ে ফিতরা বিতরণ করতে হয়।

প্রত্যেক সমর্থ্য মুসলমানের জন্য ফিতরা দেওয়া ওয়াজিব। মাথাপিছু কত টাকা ফিতরা দিতে হবে, তা আগেই রাষ্ট্র কিংবা সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে দেয়। নিয়ম হলো, ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগেই এই ফিতরা পরিশোধ করতে হবে। তারপর ঈদগাহ কিংবা তার অভাবে বড় মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করতে হয়।

এ বছর ফিতরার হার জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২ হাজার ৯৭০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন