দোয়ার ওপর আস্থা হারাবেন না

দোয়ার আদব হলো মহান আল্লাহর সম্পর্কে সুন্দর ধারণাছবি: পেক্সেলস

সৃষ্টিজগতের একমাত্র মালিক আল্লাহ তাআলা। আল্লাহর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক হলো, আল্লাহ আমাদের মালিক এবং আমরা তাঁর দাস। আমরা একমাত্র আমাদের মালিকের কাছেই সব চাওয়া পেশ করি।

আমরা দোয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহর কাছে নিজেদের জন্য কিছু পাওয়ার জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করি। দোয়ার আক্ষরিক অর্থ হলো ডাকা।

অর্থাৎ দোয়া হলো, আল্লাহর একজন বিনম্র দাস সৃষ্টিকর্তার দিকে ফিরে নিজের চাওয়া, সমস্যা সমাধানের পথ ভিক্ষা চাচ্ছে। আল্লাহ তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের সমস্যা সমাধান করে দেবেন কি না, তা একমাত্র আল্লাহ জানেন।

দোয়ার তাৎক্ষণিক জবাব না পেলে কখনো কখনো আমরা হতাশ হয়ে পড়ি। এ অবস্থায় শয়তান আমাদের মনে প্রবঞ্চনা দিতে থাকে যে আল্লাহ নিশ্চয় আমাকে ভালোবাসেন না। আর এ জন্য আমার দোয়াও কবুল করছেন না। আমাদের মনে রাখতে হবে যে সৃষ্টজগতে একমাত্র যার কোনো আশা নেই, সে হলো শয়তান।

হে আমার প্রতিপালক, আপনার কাছে দোয়া করে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি।
কোরআন, সুরা মারয়াম, আয়াত: ৪

পবিত্র কোরআন সব সময় আমাদের আশার বাণী শোনায়, ‘আল্লাহকে বেশি স্মরণ করো, যাতে সফল হও।’ (সুরা আনফাল, আয়াত: ৪৫) আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ভেঙে পড়ো না, নিরাশ হয়ো না, জেনে রেখো নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে (সুরা বাকারা, আয়াত: ২১৪)।

আরও পড়ুন

এই দুনিয়ায় আমাদের পাঠানো হয়েছে পরীক্ষার জন্য। প্রতিনিয়ত আমাদের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। কখনো ভালো সময়, কখনো মন্দ সময় দিয়ে আল্লাহ তাআলা আমাদের পরীক্ষা করবেন। আমাদের নবী–রাসুলগণও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের নবী–রাসুলদের কথা, তাঁদের সমস্যার কথা, তাঁদের দোয়ার কথা বারবার উল্লেখ করেছেন। হজরত জাকারিয়া (আ.) তাঁর দোয়ায় বলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক, আপনার কাছে দোয়া করে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি।’ (সুরা মারিয়াম, আয়াত: ৪)

ইবরাহিম (আ.) বলেন, ‘আশা করি, আমার প্রতিপালকের নিকট দোয়া করে আমি বিফল হব না।’ (সুরা মারিয়াম, আয়াত: ৪৮)

দোয়া কবুলের সময়কাল নিয়ে আমরা ইয়াকুব (আ.) ও মুসা (আ.)-এর দুটি ঘটনা উল্লেখ করতে পারি:

ইয়াকুব (আ.) তাঁর ১২ সন্তানের মধ্যে সব সন্তানের জন্য দোয়া করেছেন, বিশেষ করে ইউসুফ (আ.)-এর জন্য; যাঁকে তাঁর আপন ভাইয়েরা হিংসার বশবর্তী হয়ে কুয়ায় নিক্ষেপ করেছিল। ইয়াকুব (আ.) কান্না করতে করতে তাঁর দৃষ্টিশক্তি প্রায় হারিয়ে ফেলেছিলেন। বছরের পর বছর তিনি তাঁর হারানো পুত্রকে একনজর দেখার জন্য দোয়া করেছেন। (সুরা ইউসুফ, আয়াত: ৮৪-৮৬)

মহান আল্লাহ ইয়াকুব (আ.) এর দোয়া কবুল করেছেন। অনেক বছর পর অবশেষে তিনি তাঁর পুত্রের দেখা পেয়েছেন।

অন্যদিকে ফেরাউনের হত্যা থেকে নিজের পুত্রসন্তানকে বাঁচাতে মুসা (আ.)-এর মা তাঁকে পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন এবং মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ পেয়েছিলেন। (সুরা ত্বহা, আয়াত: ৩৭–৩৯)

তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন, তিনি যেন তাঁর সন্তানকে আবার দেখতে পান। মহান আল্লাহর অনুগ্রহে মুসা (আ.)-এর মা তাঁর সন্তানের দেখা পেয়েছিলেন। শিশুর পরবর্তী খাওয়ার সময় হওয়ার মধ্যেই তিনি সন্তানের দেখা পান।

অন্যদিকে ইউসুফ (আ.)–এর ক্ষেত্রে হয়েছে বিপরীত, তিনি তাঁর পিতার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বহু বছর পর পিতার সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন।

আরও পড়ুন
দোয়া কবুলের পূর্বশর্ত হলো, সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ তাআলার নিকট আমাদের অতীত বর্তমান সব পাপ ও ভুলের জন্য খাঁটি নিয়তে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করা।

তাই দোয়ার জবাব দৃশ্যমানভাবে আমরা কখন পাব, তা একমাত্র আল্লাহ তাআলা জানেন। কখনো তৎক্ষণাৎ তা ঘটতে পারে, কখনো অনেক বছর পর। আবার কখনো তা পরকালের জন্য সঞ্চিত থাকে, যা একজন মুমিনের জন্য মহামূল্যবান পুরস্কার।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা যা কিছু চেয়েছ, তিনি তোমাদের তা দিয়েছেন। আল্লাহর নেয়ামত গুনে শেষ করতে পারবে না।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৩৪)

আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) দোয়া করার জন্য আমাদের উৎসাহিত করেছেন। প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কিছু চায় না, আল্লাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৩৭৩)

দোয়া না করাকে আল্লাহ অহংকার বলেন, ‘তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, আমাকে ডাকো, আমি সাড়া দেব। যারা আমার ইবাদত না করে অহংকার করে, তারা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সুরা গাফির, আয়াত: ৬০)

দোয়া কবুলের পূর্বশর্ত হলো, সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ তাআলার নিকট আমাদের অতীত বর্তমান সব পাপ ও ভুলের জন্য খাঁটি নিয়তে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করা।

দোয়ার আদব হলো মহান আল্লাহর সম্পর্কে সুন্দর ধারণা, মহান আল্লাহর গুণবাচক নামে ডাকা, বিনম্র আকুতির সঙ্গে দোয়া করা, দোয়া কবুলে প্রবল আশাবাদী হওয়া।

বেশি বেশি দোয়া করার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাআলার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমাকে স্মরণ করো, আমি তোমাদের স্মরণ করব।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫২)

সাদিয়া শারমীন : সংবাদকর্মী

আরও পড়ুন