মজলুম হতে চেয়েছিল শিশুটি

ছবি: এএফপি

জন্মের পর শিশুর একমাত্র ভাষা হয় হাসি ও কান্না। মায়ের ভাষা শিখতে শিখতে এক থেকে দেড় বছর লেগে যায়। কিন্তু হাদিসে তিনজন এমন বিস্ময়কর শিশুর কথা বলা হয়েছে, যাঁরা কথা বলেছিলেন মুখ ফোটার আগেই।

প্রথমজন হজরত ঈসা (আ.), যাঁর কথা বলা ছিল তাঁর নবুওয়তের প্রমাণ। দ্বিতীয়জন জুরাইজ নামক একজন আবেদের ‘পাপমুক্ত’ হওয়ার সাক্ষ্যদানকারী শিশু। আর তৃতীয়জন বনি ইসরাইলের ‘জালেম হতে না চাওয়া’ এক শিশু।

এই ঘটনা স্বয়ং আল্লাহর রাসুল (সা.) সাহাবিদের মজলিশে শুনিয়েছেন। পরে ইমাম বুখারি (রহ.) একে গ্রন্থবদ্ধ করেন।

এই ঘটনা স্বয়ং আল্লাহর রাসুল (সা.) সাহাবিদের মজলিশে শুনিয়েছেন। পরে ইমাম বুখারি (রহ.) একে গ্রন্থবদ্ধ করেন।

এক দুপুরে পথের ধারে ইসরাইল বংশীয় এক মা তাঁর সন্তানকে দুধ পান করাচ্ছিলেন। এমন সময় সুদর্শন এক লোক ঘোড়ায় করে তাঁদের সামনে দিয়ে যান। নারীটি বিস্ময়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকেন।

লোকটির পোশাক-আশাক আর ঠাটবাট তাঁর খুবই পছন্দ হয়। তাঁর মনে আশা জাগে—আমার ছেলেও বড় হয়ে এমন শান-শওকত নিয়ে চলবে, তাকে দেখে সবাই তাকিয়ে থাকবে। তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ, আমার ছেলেকে এই লোকের মতো বানিয়ো।’

আরও পড়ুন

শিশুটি তখন মায়ের দুধ ছেড়ে বলে উঠল, ‘হে আল্লাহ, আমাকে এই লোকের মতো বানিয়ো না।’

এই বলে সে আবার দুধ পান করতে লাগল। সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এ ঘটনা বর্ণনার সময় রাসুল (সা.) নিজের আঙুল চুষে দেখান।

কিছুক্ষণ বাদে তাঁদের সামনে দিয়ে একজন দাসী অতিক্রম করেন। তাঁকে দেখে ওই নারীর গা ঘিনঘিন করে উঠল, মনে হলো—কী মুখপোড়া! তিনি দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ, আমার ছেলেকে এর মতো বানিয়ো না।’

শিশুটি আবার মায়ের দুধ ছেড়ে বলল, ‘হে আল্লাহ, আমাকে তার মতো বানিয়ো।’

তার মা এই কথা সহ্য করতে না পেরে বললেন, ‘কেন?’

শিশুটি বলল, ‘ঘোড়ায় করে যে লোক যাচ্ছিল, সে একজন অত্যাচারী–জালেম। আর পরে যে দাসী হেঁটে গেল, এই মেয়েকে মানুষ চুরি ও ব্যাভিচার করার অভিযোগ করে, অথচ তিনি এসব কিছুই করেননি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩,৪৩৬)

এর মানে সেই দাসী মজলুম, তিনি যে অপরাধ করেননি, তার জন্য দোষ বয়ে বেড়ান। অথচ শিশুটি শান-শওকত নিয়ে ঘুরে-বেড়ানো জালেম লোকটির বদলে একজন দাসীর অপমানজনক জীবন বেছে নিতে দোয়া করেছিল।

জুলুম কেয়ামতের দিন অন্ধকার হয়ে দেখা দেবে।
সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৫৭৮
আরও পড়ুন

এই গল্প আমাদের শেখায়:

জীবনে কখনো কখনো এমন কিছু দৃশ্য দেখা যায়, যেখানে সব হিসাব উল্টে যায়। বাইরে থেকে যে সম্মানিত, ভেতরে সে হয়তো অন্যায় আর জুলুমে ডুবে আছে। আর যে বাইরে থেকে অপমানিত, সে হতে পারে আল্লাহর কাছে সম্মানিত।

শিশুটি আমাদের সামনে এই সত্যই খুলে ধরেছে। সে এই জন্য মজলুম হতে চেয়েছিল, কারণ, মজলুমের দুঃখ একদিন না একদিন শেষ হয়, কিন্তু জালেমের ইহকাল-পরকাল দুটিই বরবাদ, কোনোকালেই দুঃখ শেষ হয় না। এক হাদিসে আছে, ‘জুলুম কেয়ামতের দিন অন্ধকার হয়ে দেখা দেবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৫৭৮)

তাই যে জালেম, তাঁর বাহ্যিক শান-শওকত কোনো কাজে আসবে না। আর যে মজলুম, তাঁর অপমানও শেষ পর্যন্ত সম্মানেই রূপ নেবে। হিসাব সেদিন হবে পরিষ্কার।

লেখক: অনুবাদক ও সম্পাদক

[email protected]

আরও পড়ুন