খিলাফতের পূর্বাপর নিয়ে আলোকপাত

ইসলামের ইতিহাসে খিলাফত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ইসলামের প্রসার ও বিস্তারের সাথে খিলাফত ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। আরবি শব্দ খিলাফতের আভিধানিক মানে হলো প্রতিনিধিত্ব। তবে সম্প্রসারিত অর্থে ইসলামি রাষ্ট্র বা ইসলামি শাসন কাঠামোর প্রাতিষ্ঠানিক রূপ। খিলাফত থেকে এসেছে খলিফা শব্দটি, যার মানে খিলাফতের সর্বোচ্চ পদাধিকারী, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি, শাসক ও নেতা।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ইন্তেকালের পর তাঁর চারজন অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সাহাবা ইসলামের সবচেয়ে ন্যায়পরায়ণ ও সঠিক নির্দেশনাপ্রাপ্ত খলিফা বা খুলাফায়ে রাশেদিন হিসেবে অভিহিত হয়েছেন। এরপরের এক হাজার ৩০০ বছরে মুসলমানরা উমাইয়া, আব্বাসীয়, ফাতেমী ও উসমানীয় খিলাফতের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। যদিও প্রকৃত বিচারে এর সবই ছিল বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র।

আরও পড়ুন

বিশ্বের ইতিহাসে মুসলমানদের এই খিলাফতের অবস্থান, অবদান ও ভূমিকা নিয়ে প্রাচ্যবিদ ও ইতিহাসবেত্তা টমাস ওয়াকার আরনল্ডের লেখা দ্য খিলাফত বইটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে স্বীকৃত। আরনল্ড মূলত লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে ইসলামের ইতিহাস ও খেলাফত নিয়ে যে সব বক্তৃতা করেছিলেন, সেগুলোর লিখিত একটি সংকলন এ বই, যা ১৯২৪ সালে বিলেতের অক্সফোর্ড থেকে প্রকাশিত হয়্।

বইটিতে লেখক প্রথমে রোম সাম্রাজ্যের সঙ্গে খিলাফতের একটি তুলনামূলক আলোচনা করেছেন। সেখানে তিনি দেখাতে চেয়েছেন যে খ্রিষ্টধর্মের প্রেরণায় রোম সাম্রাজ্যের সম্রাট যেভাবে সারাবিশ্বের ওপর কর্তৃত্ব করার দাবিদার হয়েছিলেন, অনেকটা একইভাবে ইসলামের খলিফাও সব বিশ্বাসীর সর্বোচ্চ নেতা। তবে মৌলিকভাবে দুটি ধারণার মধ্যে পার্থক্যও অনেক। আরনল্ডের মতে, রোম সাম্রাজ্যের ধারণাটি বহুলাংশে পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছিল ইসলামি খিলাফতের বিষয়টির বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে আরবদের ইসলাম প্রচার ও বিভিন্ন রাজ্য জয়ের ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে।

বইটিতে খিলাফতের উৎস ও কুরআনে এর ‍অনুমোদন, আব্বাসীয় ও উসমানীয় খিলাফতের উত্থান-পতন এবং ‍মিশরে খিলাফত নিয়ে আলোচনা রয়েছে। প্রাসঙ্গিকভাবে ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য, খিলাফত নিয়ে শিয়া ও খারেজিদের মতবাদ, খলিফার কথিত আধ্যাত্মিক ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয়েও সংক্ষেপে আলোকপাত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

বইটি ১৯২৪ সালে প্রথম প্রকাশিত হওয়ার সময় তুরস্কের ইস্তাম্বুল–ভিত্তিক উসমানীয় খিলাফতের পতন ঘটে গেছে। তবে এ নিয়ে বইয়ে তেমন কিছু উল্লেখ ছিল না। আরনল্ড ১৯৩০ সালে মারা যাওয়ার দুই যুগ পরে ১৯৬৫ সালে উসমানীয় খিলাফতের পতন ও ফল নিয়ে বাড়তি একটি অধ্যায় যুক্ত করে বইটি নতুনভাবে ছাপা হয়। সিলভিয়া জি হাইম এই অধ্যায়টি রচনা করেন। সেখানে ১৯২২ সালে কামাল আতাতুর্ক কর্তৃক উসমানীয় খলিফা বা সুলতান ষষ্ঠ মোহাম্মদকে ক্ষমতাচ্যুত করে সুলতানের পদ বিলুপ্ত ও তুরস্ককে প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করার এবং ১৯২৪ সালে খলিফার পদ বিলুপ্তির বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

 দ্য খিলাফত, টমাস ডব্লিউ আরনল্ড, ১৯২৪, অক্সফোর্ড, লন্ডন।