চিরন্তন সফলতার পথে বাধা ৫টি

আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেছেন, “নিশ্চয় মুমিনরা সফলকাম হয়েছে।” (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ১) আরবিতে ‘ফালাহ’ বা সাফল্য বলতে বোঝায় চূড়ান্ত বিজয়, অভীষ্ট লক্ষ্যে উপনীত হওয়া এবং কাঙ্ক্ষিত বস্তুর প্রাপ্তি। ব্যক্তিগত জীবনে, সামাজিক বাস্তবতায় এবং শত্রুর বিরুদ্ধে সংগ্রামে সাফল্য অর্জনের জন্য কিছু পূর্বশর্ত পূরণ করা যেকোনো সমাজ বা জাতির জন্য অপরিহার্য। আমরা আজ সফলতার পথে প্রধান ৫টি প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরব।

ছবি: পেক্সেলস

সাফল্যের পথে বেশ কিছু বাধা রয়েছে, যা সমাজ ও জাতিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়:

১. আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ

মানুষ যখন নিজেদের মনগড়া মূল্যবোধ সৃষ্টি করে, আল্লাহর কর্তৃত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং আল্লাহর নাজিলকৃত আয়াত ও বিধানসমূহ প্রত্যাখ্যান করে, তখন তারা কখনো সফল হতে পারে না।

এই কাজ যারা করে, তাদের দুনিয়া ও আখেরাতে কোনো সাফল্য নেই, “যারা আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ করে, তারা কখনো সফল হয় না।” (সুরা নাহল, আয়াত: ১১৬)

জুলুমের ফলে সমাজে নানা ধরনের ফ্যাসাদ বা অরাজকতা সৃষ্টি হয়। এর পরিণতিতে খরা, দুর্ভিক্ষ, বন্যা, মহামারি, যুদ্ধ এবং অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত শত্রুর নিপীড়ন নেমে আসে।

২. জুলুম

জুলুমের মধ্যে সবচেয়ে বড় জুলুম হলো শিরক বা আল্লাহর অংশীদার স্থাপন করা। এটি বুদ্ধি, নৈতিকতা ও কর্মের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর। জুলুমের ফলে সমাজে নানা ধরনের ফ্যাসাদ বা অরাজকতা সৃষ্টি হয়। এর পরিণতিতে খরা, দুর্ভিক্ষ, বন্যা, মহামারি, যুদ্ধ এবং অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত শত্রুর নিপীড়ন নেমে আসে।

যেমন কোরআনে বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই জালিমরা সফল হয় না।” (সুরা আনআম, আয়াত: ২১)

অতএব, সাফল্য কেবলমাত্র সত্য ও ন্যায়ের ধারক-বাহকদের জন্যই নির্ধারিত।

আরও পড়ুন

৩. ধর্মে নতুন কিছু উদ্ভাবন

যা ধর্মের কোনো বিধানের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ নয় ধর্মে এমন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করাকে বলে বিদ’আত। এটি ধর্মের মৌলিক কাঠামোকে বিকৃত করে, আল্লাহর ওপর ও তাঁর রাসুলের ওপর মিথ্যা আরোপ করে এবং মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে।

বিদ’আত সামাজিক কাঠামোর জন্য ক্ষতিকর এবং দুনিয়া ও আখেরাতে সাফল্যের পরিপন্থী। (শাহ ওয়ালি উল্লাহ দেহলভি, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ, ১/২৫৬, মাকতাবাতুল গাজালি, লাহোর)

৪. কৃপণতা

কৃপণতার সঙ্গে লোভ বা অত্যাবশ্যকীয় হক আদায়ে বিরত থাকাকে ইসলামে বলে ‘শুহ’। সম্পদের প্রতি অতিরিক্ত লোভ, তা জমা করে রাখা এবং আল্লাহ ও বান্দার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা—এগুলো জাতিগুলোর ধ্বংসের অন্যতম কারণ।

রাসুল (সা.) সতর্ক করে বলেছেন, “তোমরা কৃপণতা থেকে দূরে থাকো। কেননা কৃপণতাই তোমাদের পূর্ববর্তীদের ধ্বংস করেছে। এটি তাদের রক্তপাত ঘটাতে এবং হারামকে হালাল করতে প্ররোচিত করেছে।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৫৭৮)

আল্লাহ তায়ালা কৃপণতার বিপরীতে বদান্যতাকে সাফল্যের কারণ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, “আর যারা নিজেদের প্রবৃত্তির কৃপণতা থেকে রক্ষা পেয়েছে, তারাই সফলকাম।” (সুরা হাশর, আয়াত: ৯)

আরও পড়ুন
নীরবতা নিজেই একটি অপরাধ এবং আল্লাহর প্রতি শিথিলতার প্রমাণ। যখন পুরো সমাজ নীরব থাকে, তখন শাস্তি ব্যাপক আকার ধারণ করে।

৫. অসৎ কাজ দেখে নীরব থাকা

অসৎ কাজ বা অন্যায় দেখে নীরব থাকলে সমাজে বিপর্যয় নেমে আসে। এটি দু’ভাবে ক্ষতির কারণ হয়:

প্রথমত: প্রকাশ্য পাপ এবং তার ওপর নীরবতা বিপদ ও শাস্তির কারণ হয়।

দ্বিতীয়ত: নীরবতা নিজেই একটি অপরাধ এবং আল্লাহর প্রতি শিথিলতার প্রমাণ। যখন পুরো সমাজ নীরব থাকে, তখন শাস্তি ব্যাপক আকার ধারণ করে। আল্লাহ বলেছেন, “আর তোমরা সেই ফিতনাকে ভয় করো যা তোমাদের মধ্যে শুধু জালিমদের ওপরই আপতিত হবে না।” (সুরা আনফাল, আয়াত: ২৫)

নবীজি (সা.) অন্যায় দেখে নীরব থাকার অবস্থাকে একটি নৌকার যাত্রীদের উদাহরণের মাধ্যমে বোঝান। নৌকার নিচের তলার কিছু যাত্রী যদি উপরের তলার লোকজনকে কষ্ট না দেওয়ার অজুহাতে নিজেদের অংশে ছিদ্র করতে চায়, তবে উপরের তলার যাত্রীরা তাদের বাধা না দিলে সবাই ডুবে যাবে; আর যদি বাধা দেয়, তবে সবাই রক্ষা পাবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৪৯৩)

এই উদাহরণ স্পষ্ট করে যে, অসৎ কাজে নীরবতা সমাজের সামগ্রিক ধ্বংস ডেকে আনে। সচেতন সমাজের জন্য এটি একটি গুরুতর বিপদ, কারণ অসচেতন বা অসৎ কিছু লোকের কারণে পুরো সমাজের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নষ্ট হতে পারে।

আরও পড়ুন