বেহালা শিল্পীকে আল্লাহর দেওয়া পুরস্কার

খলিফা হজরত উমর (রা.)–এর সময়ে আরবে একজন বেহালাবাদক ছিলেন। তাঁর সুন্দর বেহালা যে কারও হৃদয় ছুঁয়ে যেত। এটাই ছিল তাঁর জীবিকা। বেহালাবাদক হিসেবে তিনি সুনামও অর্জন করেছিলেন। এভাবেই তাঁর জীবনের প্রায় ৭০ বছর কেটে গেল।

জীবনের শেষ দিকে এসে বেহালাবাদক উপলব্ধি করলেন, তিনি একেবারে নিঃস্ব ও দীনহীন। সামান্য একটি রুটির টাকাও আয় করতে পারতেন না। বাঁচার আর কোনো উপায় না দেখে তিনি ভিক্ষা করতে শুরু করলেন।

একদিন আল্লাহর কাছে বলতে লাগলেন, ‘হে আল্লাহ, আমি দীর্ঘ ৭০ বছর হায়াত পেয়েছি। আমার এ বয়সে অনেক গুনাহ ও নাফরমানি করেছি। এর বিনিময়ে আপনি এক মুহূর্তের জন্যও আমার প্রতি আপনার অনুগ্রহ উঠিয়ে নেননি। আজ আমি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আপনার মেহমান হয়ে আছি। এখন থেকে মানুষের দরজায় দরজায় বেহালা না বাজিয়ে শুধু আপনার জন্যই বাজাব। আপনি চাইলে আমার জন্য যেকোনো কম দামি জিনিসকেই মূল্যবান করে দিতে পারেন।’ এ কথা বলে তিনি একটি কবরস্থানের পাশ গিয়ে বেহালা বাজাতে শুরু করলেন।

আরও পড়ুন

অনেকক্ষণ ধরে বেহালা বাজাতে বাজাতে লোকটি মাথার পাশে বেহালাটি রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন। ঘুমের মধ্য দেখতে পেলেন যে বড় এক মাঠে তিনি পাখির মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তিনি মনে মনে ভাবতে লাগলেন, মহান আল্লাহ যদি আমাকে এখানে আজীবনের জন্য রেখে দিতেন, তাহলে কতই–না সুন্দর হতো। সুন্দর এ জগতের বাগানে ডানা ছাড়া উড়তে পারতাম, পা ছাড়া চলাফেরা এবং কোনো কিছু না চিবিয়েই খেতে পারতাম। এখানে পার্থিব চিন্তামুক্ত থেকে মহান আল্লাহর ইবাদত করতে পারতাম। চোখ বুজে এ জগতের সব সুন্দর দৃশ্য অবলোকন করতে পারতাম।

হজরত উমর (রা.) ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে দেখতে পেলেন, কে যেন তাঁকে নির্দেশ দিচ্ছে, হে উমর, ওই কবরস্থানের কাছে গিয়ে দেখো একজন বেহালাবাদক মাথার নিচে বেহালা রেখে ঘুমিয়ে আছে। তুমি তার কাছে গিয়ে তাকে কিছু স্বর্ণমুদ্রা দান করে আসো।

অসময়ে এ স্বপ্ন দেখে হজরত উমর (রা.) ৭০০ স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে কবরস্থানে ঘুমন্ত লোকটির কাছে গেলেন। লোকটিকে না জাগিয়ে তার জাগার অপেক্ষায় পাশে বসে রইলেন। লোকটি জেগে উঠেই পাশে হজরত উমর (রা.)–কে দেখে ভয় পেয়ে গেলেন। মনে মনে ভাবলেন, এত দিন গুনাহ করার ফলে খলিফা তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য তার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে আছেন।

আরও পড়ুন

খলিফা হজরত উমর (রা.) তাকে নির্ভয় দিয়ে বললেন, আপনি আজ সারা দিন বেহালা বাজানোর কারণে এই ৭০০ স্বর্ণমুদ্রা অর্জন করেছেন। এগুলো আপনি গ্রহণ করুন। এগুলো শেষ হলে আমার কাছ থেকে আরও মুদ্রা নিয়ে আসবেন।

বেহালাবাদক খুশি হয়ে আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করতে লাগলেন। সব গুনাহ থেকে তওবা করে আল্লাহর একজন অনুগত বান্দা হিসেবে জীবন যাপন করতে লাগলেন।

ড. মোহাম্মদ আবুল বাশার: লেখক

আরও পড়ুন