বড়দের থেকে উপদেশ নেওয়া

এ ঘটনাটি প্রখ্যাত তাবেয়ি ইবনে কাবিসা (রহ.) বর্ণনা করেছেন। তিনি ও তাঁর কিছু বন্ধু মিলে একবার হজের উদ্দেশে রওনা দিলেন। তাঁরা সবাই ছিলেন যুবক। ঘর থেকে ইহরাম বেঁধেই তাঁরা বের হয়েছিলেন।

কাবিসা (রহ.) বলেন, ‘যাত্রাপথে প্রায়ই আমরা উট নিয়ে আশপাশে ঘুরে বেড়াতে, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গল্প করতাম। প্রতিদিনের মতো সেদিনও আমরা উট নিয়ে বের হয়েছিলাম।’

হঠাৎ আমাদের সামনে একটি হরিণ চলে এল। আমার এক সঙ্গী হরিণকে লক্ষ্য করে একটি পাথর ছুড়ে মারল। পাথরের আঘাতে হরিণটি সঙ্গে সঙ্গে মারা গেল।

এ ঘটনার জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। আমরা সবাই চিন্তিত হয়ে পড়লাম। কারণ, ইহরাম বাঁধা অবস্থায় প্রাণী হত্যা করা হারাম। এখন কী করা যায়, আমরা কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না। এমন সময় আমার কোরআনের একটি আয়াত মনে পড়ে গেল। সুরা মায়েদার ৯৫তম আয়াত।

আরও পড়ুন

আয়াতে বলা হয়েছে, যে ইহরাম অবস্থায় প্রাণী হত্যা করবে, তার ওপর কাফফারা ওয়াজিব হয়ে যাবে। দুজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি এর শাস্তি নির্ধারণ করবে।

আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, মক্কার দিকে যাব। সেখানে নির্ভরযোগ্য কেউ থাকলে তাদের থেকেই সমাধান পাওয়া যাবে।

আমরা মক্কায় গিয়ে দেখলাম মসজিদে আমিরুল মুমিনিন হজরত ওমর (রা.) বসা। তাঁর সঙ্গে আরেকজন লোক ছিলেন, যাঁর চেহারা থেকে যেন আলোকচ্ছটা বের হচ্ছিল। তিনি ছিলেন হজরত আবদুর রহমান বিন আওফ (রা.), যাঁকে আমরা আবু হুরায়রা নামে চিনি। তাঁদের দেখে আমরা খুশি হয়ে গেলাম। এ বিষয়ে তাঁদের চেয়ে উত্তর বিচারক আর হতে পারে না।

আমরা তাঁদের এ ঘটনা সম্পর্কে খুলে বললাম। হজরত ওমর (রা.) আমার বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি কি ইচ্ছা করে পাথর নিক্ষেপ করেছ নাকি অনিচ্ছায়?’

আমার বন্ধু বলল, ‘আমি ইচ্ছা করেই মেরেছি, কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি যে হরিণটি মারা যাবে।’

আরও পড়ুন

হজরত ওমর (রা.) কিছুটা রাগের স্বরে বললেন, ‘তোমার উচিত ছিল আরও সতর্ক হওয়া। তুমি এখানে হজ করতে এসেছ, প্রাণী হত্যা করতে নয়।’

এরপর ওমর (রা.) বললেন, ‘তোমার শাস্তি হলো এই পাপের কাফফারাস্বরূপ একটি ভেড়া অথবা দুম্বা কোরবানি করে তা বিলিয়ে দিতে হবে।’ আমরা তাঁদের ফয়সালা নিয়ে খুশি মনে ফিরে এলাম।

ফেরার পথে আমার মনে হলো, হজরত ওমর (রা.) হয়তো দয়া করে আমাদের শাস্তি কম নির্ধারণ করেছেন। আমি আমার বন্ধুকে বললাম, ‘আমার মনে হয় আমিরুল মুমিনিন তোমার জন্য কম শাস্তি নির্ধারণ করেছেন, তোমার উচিত দুম্বার জায়গায় একটি উট কোরবানি করা।’

আমার বন্ধু বলল, ‘তুমি কি তাই মনে করো?’ আমি সম্মতি দিলাম।

এরপর সে মক্কায় আসার পথে যে উটটি এনেছিল, তা কোরবানি করে দিল।

খবর হজরত ওমর (রা.)-এর কানে গেল। তিনি আমাদের খুঁজে বের করলেন। তিনি আমার বন্ধুকে ধমক দিয়ে বললেন, ‘তুমি দুটি অন্যায় করেছ। প্রথমত, তুমি ইহরাম অবস্থায় প্রাণী হত্যা করেছ। এখন আবার বিচারকের রায়ও মানোনি। এর কারণ কী?’

আরও পড়ুন

এই বলে তিনি তাঁর লাঠি দিয়ে আমার বন্ধুর পেটে একটি খোঁচা দিলেন। আমার বন্ধু আমার কথা বলে দিল, ‘হে আমিরুল মুমিনিন, আমি ইচ্ছা করে করিনি, আমার এই বন্ধু বলেছিল, এমনটা করতে।’

এবার হজরত ওমর (রা.) আমার দিকে ফিরলেন। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। তিনি আমাকে বললেন, ‘তোমার এমনটা বলার কারণ কী?’

আমি বললাম, ‘হে আমিরুল মুমিনিন, আপনাকে বলার মতো কোনো উত্তর আমার কাছে নেই।’ অর্থাৎ আমার এমনিতে মনে হয়েছিল শাস্তিটা যথার্থ না, তাই বলেছিলাম।

হজরত ওমর (রা.) বললেন, ‘তোমাকে দেখে তো ভদ্র মনে হচ্ছে এবং কথাও বেশ গুছিয়ে বলো।’

এরপর তিনি আমাকে মূল্যবান কিছু উপদেশ দিলেন, ‘মনে রেখো, যুবক। তোমাদের মধ্যে অনেক ভালো গুণ থাকতে পারে। অনেক সময় দু-একটা খারাপ গুণ সেই ভালো গুণগুলোকে নষ্ট করে দেয়। সুতরাং এ ধরনের ভুল থেকে দূরে থেকো।’

অনুবাদ: সাজিদ আল মাহমুদ

আরও পড়ুন