সুরা লাহাব: বাংলা উচ্চারণ ও শিক্ষা

কোরআনের ১১১তম সুরা হলো সুরা লাহাব, আরেক নাম সুরা আল-মাসাদ। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয় এবং এর আয়াত সংখ্যা ৫। এখানে ইসলামবিরোধী এক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব—আবু লাহাব এবং তার স্ত্রীর ভয়াবহ পরিণতির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

আয়াতসমূহ (বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ)

১. তাব্বাত ইয়াদা আবি লাহাবিঁওয়া তাব্ব।

অর্থ: ধ্বংস হোক আবু লাহাবের হাত; এবং সে নিজেও ধ্বংসপ্রাপ্ত।

২. মা আগনা আনহু মালুহু ওয়া মা কাসাব।

অর্থ: তার ধন-সম্পদ ও যা কিছু সে অর্জন করেছে, তা তাকে কোনো উপকারে আসবে না।

৩. সাইয়াসলা নারান্ যা–তা লাহাব।

অর্থ: শিগগিরই সে প্রবেশ করবে জ্বলন্ত আগুনে।

৪. ওয়ামরাতুহু; হাম্মালাতাল-হাতাব।

অর্থ: আর তার স্ত্রী—যে কাঁটা বহন করত।

৫. ফী জীদিহা হাবলুম-মিম-মাসাদ।

অর্থ: তার গলায় থাকবে খেজুর তন্তুর দড়ি।

আরও পড়ুন

সুরার প্রেক্ষাপট

আবু লাহাব ছিলেন নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর চাচা। রক্তের সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন ইসলামের প্রবল বিরোধী। যখন নবীজি (সা.) প্রথমবার প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার করেন এবং কুরাইশদের সতর্ক করেন, তখন আবু লাহাব বিদ্রূপ করে বলেছিলেন: “তোমার সর্বনাশ হোক! এজন্যই কি আমাদের একত্র করেছিলে?” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৯৭১)

এই ঘটনার পর আল্লাহ তায়ালা সুরা লাহাব নাজিল করেন।

ব্যাখ্যা ও তাফসির

ধ্বংসের ঘোষণা: আবু লাহাবের হাত ধ্বংস হোক—এটি তার শক্তি, ক্ষমতা ও ষড়যন্ত্র সব ব্যর্থ হওয়ার প্রতীক। আল্লাহ শুরুতেই চূড়ান্ত পরিণতি জানিয়ে দিয়েছেন। (তাফসির ইবন কাসীর, ৪/৫৭৩, দারুস সালাম, রিয়াদ, ২০০০)

ধন-সম্পদের অকার্যকারিতা: আবু লাহাব মক্কার অন্যতম ধনী ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু আয়াত স্পষ্ট করে দিয়েছে—তার সম্পদ বা মর্যাদা আখিরাতের শাস্তি থেকে মুক্তি দিতে পারবে না। (তাফসির কুরতুবী, ২০/২২৭, দার আল-কুতুব আল-মিসরিয়্যা, কায়রো, ১৯৬৪)

দোজখের আগুন: “জ্বলন্ত আগুন” শব্দ ব্যবহার করে বোঝানো হয়েছে—এটি সাধারণ শাস্তি নয়, বরং ভয়ংকর আজাব।

স্ত্রীর ভূমিকাও নিন্দিত: তার স্ত্রী উম্মে জামিল নবীজি (সা.)-এর প্রতি শত্রুতায় সক্রিয় ছিলেন। তিনি নবীজির পথে কাঁটা ছড়াতেন এবং দাওয়াতকে ব্যঙ্গ করতেন। এজন্য তাকে বলা হয়েছে ‘হাম্মালাতাল-হাতাব’—কাঁটা বহনকারী নারী। (তাফসির ইবন কাসীর, ৪/৫৭৪, দারুস সালাম, রিয়াদ, ২০০০)

আরও পড়ুন

শিক্ষণীয় দিক

আল্লাহর বিরোধী হওয়া মানেই ধ্বংস: কোরআন শিক্ষা দেয়, আল্লাহর বার্তাবাহকের বিরোধিতা করলে মানুষ যত শক্তিশালী হোক না কেন, শেষ পরিণতি হবে ধ্বংস।

ধন-সম্পদের অহংকার বৃথা: আবু লাহাবের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিও বাঁচতে পারেনি। অর্থ, বংশ, মর্যাদা কোনো কাজে আসে না যদি ঈমান না থাকে।

পরিবারও দায়ী হতে পারে: আবু লাহাবের স্ত্রীও শাস্তির অংশীদার হয়েছেন, কারণ তিনি স্বামীর অন্যায়ের সহযোগী ছিলেন। এতে বোঝা যায়, অন্যায়ের কাজে সঙ্গ দেওয়া নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।

মুমিনদের জন্য সতর্কবার্তা: মুসলমানদের উচিত কেবল দুনিয়ার সম্পদে নির্ভর না করে আখিরাতের সফলতার দিকে মনোযোগী হওয়া।

সুরা লাহাব শুধু একটি ঐতিহাসিক ঘটনার দলিল নয়; বরং এটি ইসলামবিদ্বেষ, অহংকার এবং সত্যের বিরোধিতার পরিণতির এক চিরন্তন সতর্কবাণী। এতে প্রমাণিত হয়েছে—দুনিয়ার ধন-সম্পদ, মর্যাদা বা ক্ষমতা কোনো কাজে আসবে না, যদি মানুষ আল্লাহর আনুগত্য না করে।

আজকের মুসলমানদের জন্য এ সূরা হচ্ছে শক্ত বার্তা—অন্যায়ের পাশে না দাঁড়িয়ে, সত্যের পথে দৃঢ় থাকা এবং আখিরাতের মুক্তির জন্য প্রস্তুত হওয়া।

আরও পড়ুন