ঢাকার হাজি ক্যাম্প থেকে মক্কা যাওয়ার অভিজ্ঞতা

বিমান
প্রতীকী ছবি

পবিত্র হজ ও ওমরাহ করতে যাচ্ছি আমরা। সারা বিশ্বের প্রতিপালকের মেহমান হয়ে মক্কা, মিনা, আরাফাত, মুজদালিফায় হাজির হয়ে বলব, ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ অর্থাৎ ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির’।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হজযাত্রীদের পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছে রাজধানী উত্তরার আশকোনায় অবস্থিত হাজি ক্যাম্প। হজযাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মূল ফটকে বসানো হয়েছে মেটাল ডিটেকটর। মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ ও আনসার সদস্য।

গতকাল হাজি ক্যাম্পে সরেজমিনে দেখা যায়, হজযাত্রীদের উপস্থিতিতে ক্যাম্প সরগরম হয়ে উঠেছে। হজযাত্রীরা ক্যাম্পে এসে প্রথমে রিপোর্ট করছেন। এরপর ক্যাম্পের ডরমিটরিতে গিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন অনেকে। হজযাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মূল ফটকে বসানো হয়েছে মেটাল ডিটেকটর। এ ছাড়া মূল ফটকের পাশেই রয়েছে পুলিশের অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণকক্ষ।

হাজিদের সার্বিক সহযোগিতায় এবং শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছেন বাংলাদেশ রোভার স্কাউটের প্রতিনিধিরা। নিরাপত্তার স্বার্থে হজযাত্রী ছাড়া তাঁদের সঙ্গে আসা আত্মীয়স্বজনদের ক্যাম্পে প্রবেশে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। হজযাত্রীদের অভ্যর্থনা, ক্যাম্পের আবাস্থলে পৌঁছে দেওয়া, স্বাস্থ্যসেবা, কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনে সহায়তা, তথ্যকেন্দ্রে সহায়তা, স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ রোভার স্কাউট।

অন্যবারের মতো এবারও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হজযাত্রীদের বিনা মূল্যে স্বাস্থ্য, খাদ্য, পানীয়সহ নানা ধরনের সেবা দিচ্ছে।  সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক সেখানে অস্থায়ী কার্যালয় খুলে হজযাত্রীদের নানা ধরনের সেবা দিচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ (ওয়াক্ফ) হজ ক্যাম্পে চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র খুলেছে। প্রথম আলো এবারও হজযাত্রীদের বিনা মূল্যে হজ গাইড দিচ্ছে।

হজ ক্যাম্প ও বিমানবন্দরের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বিমানের বোয়িং ৭৭৭ বিজি ৩০৪৩ (বিমানের নাম  পালকি) উড়াল দিল জেদ্দার পথে। যেহেতু মক্কায় যাব, তাই বিমানে ওঠার আগে হজ ক্যাম্পেই ইহরামের কাপড় পরে নিলাম।

বিমানটির প্রতিটি আসনের সামনে একটি করে স্ক্রিন যাতে এয়ার ফোনের মাধ্যমে পবিত্র কোরআন শরিফ শোনা যায়, ম্যাপের মাধ্যমে বিমানের গতিপথ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। পাশের আসনে বসা গাইবান্ধা সদর  থেকে আগত মোজাম্মেল হক ও  তাঁর স্ত্রী লায়লা বেগম।

মোজাম্মেল হক বললেন, ‘চাকরি জীবনের সব সঞ্চয় গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা দিয়ে হজ করতে এসেছি। নীলফামারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে চাকরি করেছি। গত বছর অবসরে যাই। এবার  স্ত্রীসহ হজ করতে এসেছি।’

কম বেশি ৭ ঘণ্টা পর জেদ্দা বিমানবন্দরে গিয়ে নামলাম। বাংলাদেশের সঙ্গে সৌদি আরবের সময়ের ব্যবধান তিন ঘণ্টা। ঘড়ির সময় তিন ঘণ্টা কমিয়ে নিলাম। আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো হজ টার্মিনালে। বিশাল টার্মিনাল, চারদিক খোলা। হজ টার্মিনাল শুধুমাত্র হজযাত্রীদের জন্য ব্যবহৃত হয়। ঐতিহ্যবাহী তাঁবুর নকশায় করা ছাদ। এই হজ টার্মিনালের স্থপতি কিন্তু বাংলাদেশি। যুক্তরাষ্ট্রের  সিয়ার্স টাওয়ারের স্থপতি ফজলুর রহমান খান, যিনি এফ আর খান নামে পরিচিত। আমাদের লাল সবুজ পতাকা অনুসরণ করে হজ টার্মিনালের ‘বাংলাদেশ প্লাজায়’ আমরা পৌঁছালাম।

এরপর বাসে করে যেতে হবে মক্কায়। প্রতি ৪৫ জন করে একেকটি বাসে আসন গ্রহণ করলাম। দুই ঘণ্টা পরে বাস মক্কার নির্দিষ্ট বাসায় নামিয়ে দিল।

কিছুক্ষণ বিশ্রাম করার পর মসজিদুল হারামে ওমরাহ করার জন্য গেলাম।