হজে যাওয়ার আগে যেসব প্রস্তুতি লাগবে

মসজিদুল হারাম (কাবা শরিফ), মক্কা
ছবি : ফেরদৌস ফয়সাল

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন সৌদি আরবে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। এবার বাংলাদেশ থেকে হজ পালনের সুযোগ পাবেন ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ ব্যক্তি। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন যেতে পারবেন হজে।

এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীর খরচ ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীর ন্যূনতম খরচ ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা।

নিবন্ধন কবে থেকে

যাঁরা প্রাক্‌–নিবন্ধন করেছেন, এ বছর হজ পালনের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন, শুধু তাঁরাই নিবন্ধন করতে পারবেন।

২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীর প্যাকেজে ঘোষিত সব টাকা পরিশোধ করতে হবে। ৬ ফেব্রুয়ারি বেসরকারি হজযাত্রীদের নিবন্ধন শুরু হবে। হজ প্যাকেজের পুরো অর্থ শুধু সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা সরাসরি এজেন্সিতে জমা দিয়ে হজযাত্রীদের টাকা পরিশোধের রসিদ সংরক্ষণ করতে হবে।

কোনোভাবেই মধ্যস্বত্বভোগীদের সঙ্গে লেনদেন করা যাবে না। প্যাকেজের পুরো টাকা ১৫ মার্চের মধ্যে জমা দিতে হবে। হজযাত্রী নারী ও শিশু থাকলে মাহরামসহ একসঙ্গে টাকা জমা দিতে হবে।

আবাসন ও কোরবানি

কোরবানির খরচ প্রত্যেক হজযাত্রীকে (এক হাজার রিয়াল) আলাদা নিতে হবে। ঘোষিত প্যাকেজে হজযাত্রীদের হারাম শরিফের বাইরের চত্বরের সীমানার সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় কিলোমিটার দূরত্বে আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

এবার ৬৫ বা এর বেশি বয়সী ব্যক্তিরা হজে যেতে পারবেন। হজযাত্রীদের পাসপোর্টের মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকতে হবে।

আরও পড়ুন

এখন করণীয়

প্যাকেজের সুবিধা-অসুবিধা ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে। পাসপোর্ট করা না থাকলে এখনই জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে মিল রেখে পাসপোর্ট করতে হবে।

পরামর্শ

ভাষার ভিন্নতা, নতুন দেশ, নতুন পরিস্থিতির কারণে কিছু হজযাত্রী সমস্যায় পড়ে থাকেন। কয়েকবার হজ পালন করেছেন, এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, কিছুটা ধারণা থাকলে, সচেতন হলে অনেক সমস্যা দূর করা যায়। পাঠকের সুবিধার্থে তাঁদের কিছু পরামর্শ—

১. সব ধরনের খরচ সম্পর্কে ধারণা রাখা: টাকা কম-বেশির ভিত্তিতে নয়, প্যাকেজের সুবিধাদি দেখে, শুনে, বুঝে চুক্তি করবেন। উড়োজাহজাভাড়া, বাসাভাড়া, হজের সময় মিনায় তাঁবুতে বা আজিজিয়ায় থাকা কিংবা না-থাকা ইত্যাদি আগে থেকে জেনে নিতে হবে।

২. হজ প্যাকেজ: হজ প্যাকেজ কত দিন, সৌদি আরবে অবস্থানের মেয়াদ কত দিন, কোথায় কত দিন অবস্থান এবং তা কীভাবে, বিস্তারিত জানতে হবে। গত কয়েক বছর কত নম্বর মোয়াল্লেমের অধীন ওই এজেন্সি হজ পালন করছে, তা জানতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশের জন্য ১ থেকে ১১৫টি মোয়াল্লেম রয়েছে। মোয়াল্লেম ক্লাস্টারের দাম অনুযায়ী জামারা (শয়তানকে পাথর মারার স্থান) থেকে মিনার তাঁবুর দূরত্ব নির্ভর করে। মোয়াল্লেম অতিরিক্ত সেবা খরচ দিয়ে কী কী সেবা পাবেন, তা লিখিত নিন। এটা নিয়ে মিনায় বির্তক হয়।

আরও পড়ুন

৩. মক্কা-মদিনায় বাসার অবস্থান: মক্কায় বাসার ধরন ও তা কাবা শরিফ থেকে কত দূরে, বাসায় লিফট আছে কি না, বাসার প্রতি কক্ষে কতজন এবং বাথরুম কতজনের সঙ্গে শেয়ার করতে হবে, জেনে নেবেন। একই কথা মদিনার বাসার জন্য প্রযোজ্য।

৪. খাবার: সৌদি আরবে পৌঁছে তিন বেলা খাবার দেওয়া হবে কি না বা বিকল্প ব্যবস্থা কী, তা জানতে হবে।

৫. কোরবানি: প্রতারণা এড়াতে ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক বা আইডিবির কুপন কিনে দেওয়া ভালো। এর বাইরে নিজে অথবা এজেন্সির লোক ছাগল কিনে কোরবানি দেবেন অথবা কোরবানি সম্পর্কে হাজি কীভাবে নিশ্চিত হবেন, তা-ও আগে থেকে জেনে নিতে হবে।

৬. মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা: হজের সফরে প্রচুর হাঁটাচলা করতে হয়। চাইলে যখন-তখন যানবাহন পাওয়া যায় না। এটাও মাথায় রাখা। ওমরায় তাওয়াফ, সাঈ, মিনা, জামারায় পাথর মারা, মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে হজের তাওয়াফ, সাঈ করতে প্রচুর হাঁটাচলা করতে হয়। এসবের জন্য মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা জরুরি।

৭. ফিতরা: ফিতরা বা স্থানান্তর (অর্থাৎ মক্কায় বাসা কাবা শরিফের কাছে-দূরে একাধিকবার বদল করাকে ফিতরা বলে) আছে কি না। হজের আগে না পরে ফিতরা হবে, তা জানতে হবে।

৮. হজের দিনগুলো: মিনা, আরাফায় খাবার, যাতায়াত, মক্কায় তাওয়াফ, সাঈ করতে যাওয়ার বিষয়ে কী ব্যবস্থা এবং মোয়াল্লেম কী কী সুবিধা দেবেন, তা-ও বিস্তারিত জেনে নেবেন। আপনার সঙ্গী অসুস্থ বা দুর্বল হলে বিকল্প ব্যবস্থাও জেনে নিতে হবে।

৯. হজের নিয়মকানুন জানা: প্রয়োজনীয় বই-পুস্তক, হজ গাইড সংগ্রহ করে পড়ুন।ওয়েবসাইটে হজের খবর সারা বছর পাওয়া যায়। ১৪ বছর ধরে প্রথম আলো হজযাত্রীদের সহায়ক হজ গাইড প্রকাশ করে বিনা মূল্যে বিতরণ করছে। এটি প্রথম আলোর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করতে পারেন।

১০. ঘোষিত হজ প্যাকেজের চেয়ে কম টাকায় হজে গেলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কোনোভাবেই মধ্যস্বত্বভোগী, দালাল বা তথাকথিত মোয়াল্লেমের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবেন না। কোন কোন এজেন্সির বিরুদ্ধে সৌদি হজ মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ রয়েছে, তা যাচাই করুন।

  • সৌদি আরবের টিভি চ্যানেলে ২৪ ঘণ্টা মসজিদে নববি ও কাবা শরিফে তাওয়াফ সম্প্রচার করে, সম্ভব হলে ওই সব চ্যানেল দেখলে আগে থেকে ওমরাহ, তাওয়াফ, মসজিদের ঐতিহাসিক স্থানগুলো সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যাবে।

  • ছাপানো অথবা ইন্টারনেটে মক্কা, মদিনা, মিনা, আরাফাতের মানচিত্র পাওয়া যায়। সম্ভব হলে মানচিত্র দেখুন, তাহলে ওখানকার রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি সম্পর্কে একটা ধারণা পাবেন।

  • সম্ভব হলে নিজের পাসপোর্ট নিজে করান। কাউকে দিয়ে করালেও আপনার নাম-ঠিকানা পাসপোর্টে ঠিক আছে কি না, যাচাই করে নিন।

  • হজসংক্রান্ত নিয়মকানুন জানুন। প্রয়োজনে যাঁরা হজে গেছেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করুন।