অহংকারের পরিণতি মন্দ

কোরআনে সুরা বাকারার একদম শুরুতে আল্লাহ তাআলা একটি বিষয় ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘(মুত্তাকি হলো তারা) যারা গায়েবের প্রতি ইমান আনে, নামাজ কায়েম করে এবং আমি যে জীবনোপকরণ তাদেরকে দিয়েছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে।’

আয়াতের প্রায় শুরুতেই আল্লাহ–তাআলা ‘গায়েব’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। ‘গায়েব’ অর্থ হলো অদৃশ্য, যা চোখ দিয়ে দেখা যায় না। এই আয়াতের মাধ্যমে আমাদের বোঝানো হচ্ছে, ইমানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো কিন্তু গায়েব তথা অদৃশ্য জগতের অংশ। সুতরাং যা দেখব না, তা বিশ্বাস করব না, এই ধারণা একজন মুসলিমের রাখার কোনো সুযোগ নেই।

আমরা অনেক দুর্বল একটি সৃষ্টি। দুনিয়ার অনেক বিষয় আমাদের বোধগম্য নয়। এই আয়াতে যেন আল্লাহ তাআলা সে দিকেই ইঙ্গিত দিলেন, ‘কিছু বিষয় মানুষকে না দেখেই বিশ্বাস করতে হবে, কারণ, সে বিষয়গুলো বোঝার সামর্থ্য মানুষকে দেওয়া হয়নি। আর যারা এটি করতে পারবে, তারাই সত্যিকার মুত্তাকি।’

আরও পড়ুন

এক হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ কিবর বা অহংকার থাকবে, সে কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’

এটা শুনে সাহাবিরা ঘাবড়ে গেলেন। তাঁরা বলতে লাগলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, কেউ যদি ভালো কোনো পোশাক পরে অথবা ভালো কিছু অর্জন নিয়ে গর্ব করে, এটাও কি অহংকার হিসেবে বিবেচিত হবে?’

মহানবী (সা.) বলেন, ‘না, অহংকার হলো—মানুষকে নিজের চেয়ে ছোট করে দেখা এবং বিচারকের সঠিক ফয়সালাকে না মেনে নেওয়া।’

অর্থাৎ অহংকার হলো এমন এক বাজে স্বভাব, যার ফলে মানুষ নিজেকে অন্যদের চেয়ে বড় ভেবে বসেন। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা আল্লাহ তাআলার চেয়েও নিজেকে বড় মনে করেন। এই লোকগুলোকে আল্লাহ তাআলা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। যেমন কোরআনের একটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, ‘তারা আল্লাহকে গুরুত্ব দেয়নি, যতটা গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন ছিল।’ (সুরা জুমার, আয়াত: ৬৭)

ইমাম ইবনুল কাইয়ুম (র.) মহানবীর হাদিস নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, ‘অন্যদের ছোট করে দেখা এবং বিচারকের ফয়সালাকে অমান্য করা, এই দোষ দুটি মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। এর কারণ, এই দুটি বিষয় কেবল আল্লাহর সিফাত বা গুণকে নির্দেশ করে। মানুষ এই কাজগুলো করার সময় নিজেকে আল্লাহর স্থানে বসিয়ে ফেলে। সে নিজেকে বড় মনে করতে থাকে, যতটা সে আসলে বড় নয়।’

আরও পড়ুন

হজরত আবু বকর (রা.)-এর শাসনামলে তিনি পারস্যের সম্রাটকে পত্র পাঠিয়েছিলেন, যেখানে লেখা ছিল: তুমি নিজেকে আল্লাহর সঙ্গে তুলনা করেছো, অথচ তুমি মানুষের মূত্রনালি থেকে বের হয়েছে দুবার। নিজেকে এত বড় মনে করার স্পর্ধা দেখিও না।

মূত্রনালি তো অনেক পরের বিষয়। আল্লাহ তাআলা কোরআনে আমাদের আরও আগে নিয়ে গেছেন—‘মানুষ কী এমন একটা সময় অতিবাহিত করেনি, যখন সে উল্লেখ করার মতো কিছুই ছিল না?’ (সুরা ইনসান, আয়াত: ১)

অর্থাৎ এমন একটা সময় ছিল, যখন আমরা কিছুই ছিলাম না। অতঃপর আল্লাহ তাআলা আমাদের জীবন দান করেছেন এবং এখনো পর্যন্ত বাঁচিয়ে রেখেছেন। তবুও আমরা আল্লাহকে ভুলে যাই।

অনুবাদ: সাজিদ আল মাহমুদ

আরও পড়ুন