মহররমে ইবাদতের নামে ছড়ানো ৫টি কুসংস্কার
মহররমকে কেন্দ্র করে সমাজে রয়েছে অসংখ্য ভুল ধারণা ও কুসংস্কার, যার ফিরিস্তি অনেক দীর্ঘ। অধিক প্রচলিত কয়েকটি কুসংস্কার নিয়ে আলোচনা করা হলো।
মহররমের গুরুত্ব বোঝাতে অনেকে নানা কথা বলেন। যেমন এ মাসে ইউসুফ (আ.) জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন, ইয়াকুব (আ.) চোখের জ্যোতি ফিরে পেয়েছেন, ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছেন, ইদরিস (আ.)-কে আসমানে তুলে নেওয়া হয়। অনেকে বলেন, এ দিনেই কেয়ামত সংঘটিত হবে। এসব কথার দৃঢ় কোনো ভিত্তি নেই। (আল-আসারুল মারফুআ, আবদুল হাই লাখনবি: ৬৪-১০০; মা সাবাতা বিস-সুন্নাহ ফি আয়্যামিস সানাহ, আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবি: ২৫৩-২৫৭)।
মহররম এলে অনেকে মাছ, শাক ও মিষ্টি–জাতীয় খাবার খান না। এটা সঠিক নয়। ইসলাম অন্যান্য মাসের মতো এ মাসেও কোনো হালাল খাদ্য হারাম করেনি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বছরের সব সময় হালাল খাদ্য গ্রহণ করেছেন। কোনো কারণে মহররমে তা বর্জন করেননি। আল্লাহ বলেছেন, ‘মুমিনগণ, আল্লাহ যেসব পবিত্র বস্তু তোমাদের জন্য হালাল করেছেন, তোমরা তা হারাম করো না এবং সীমা লঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৮৭)।
অনেকে মনে করেন, এ মাসে বিয়ে করলে তা শুদ্ধ হবে না। কারণ, এতে ইমাম হোসাইন (রা.)-কে অপমান করা হয়। অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর থেকে এ ধরনের কোনো নিষেধাজ্ঞা প্রমাণিত নেই। শায়খ আলবানি (রহ.)-এর মতে, ‘বিয়ের জন্য কোনো নির্দিষ্ট মাস বা সময়ের কথা বলা হয়নি।’ (সহিহুত তারগিব ওয়াত তারহিব, হাদিস: ১৯১৬-এর টীকা)
আশুরার দিনে রোজা পালনের কথা হাদিসে এলেও ওই দিন দিনে বা রাতে কোনো বিশেষ নামাজের বিধানের কথা আসেনি। আশুরার দিন জোহর ও আসরের মধ্যবর্তী সময়ে অথবা রাতে অনেক নামাজ কিংবা নির্দিষ্ট সুরা বহুবার পাঠ করাকে পুণ্যময় ভাবা সঠিক নয়। সরলপ্রাণ মুসলমানদের মন জয় করতে অনেক ওয়ায়েজ কথার অবতারণা করে থাকেন; ইসলামে যার ভিত্তি নেই। (মাওজুআত লি ইবনিল জাওজি: ২/৪৫-৪৬; লাআলি লিশ শায়খ জালালুদ্দিন সুয়ুতি: ২/৫৪; তানজিহ লি ইবনে আররাক: ২/৮৯; আল-ফাওয়াইদ লিশ শাওকানি: ১/৭৩)।
অনেকেই এ–সময় ভিত্তিহীন কেচ্ছাপাঠ বা পুঁথির আসর বসান। যেখানে এ–ধরনের নানা বর্ণনা শোনা যায়, যা ইসলামের মূল বর্ণনার সঙ্গে মেলে না। যেমন: উড়িয়া যায় রে জোড়া কবুতর, ফাতেমা কেন্দে কয়—/আজ বুঝি কারবালার আগুন লেগেছে মোর কলিজায়।।মা ফাতেমার কান্দন শুনে আরশ থেকে আল্লাহ কয়—/যাও গো জিব্রিল বাতাস কর মা ফাতেমার কলিজায়,/পুত্রশোকে কলিজা জ্বলে বাতাসে কী ঠান্ডা হয়!
এগুলো সত্য নয়, কেননা, ফাতেমা (রা.) মৃত্যুবরণ করেন ১১ হিজরিতে, আর হুসাইন (রা.) শহিদ হন ৬১ হিজরিতে। দুজনের মাঝে প্রায় ৫০ বছরের ব্যবধান। তাহলে ফাতেমা (রা.) তাঁর সন্তানের জন্য কান্না করেছেন কী করে সঠিক হতে পারে? (আত-তবাকাতুল কুবরা, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত : ৮/২৩)।
অনেকে মনে করেন, আশুরা মানে কারবালা; এ কারণেই মহররমের ১০ তারিখের এত গুরুত্ব ও মর্যাদা। এটা সঠিক নয়। কেননা, আশুরার মর্যাদা ও ঐতিহ্য ইসলাম–পূর্ব যুগ থেকেই স্বীকৃত।