হজ ও মুমিনের প্রেমের ভূমি মদিনা মুনাওয়ারা

মসজিদে নববির সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ স্থান নবীজি (সা.)–এর রওজা মোবারকছবি: সংগৃহীত

মদিনা মুনাওয়ারা মুসলমানদের প্রাণের ভূমি। মদিনা হলো নবীজি (সা.)–এর শহর, শান্তির নগর।

রাসুলে করিম (সা.) বলেন, ‘যে আমার রওজা জিয়ারত করল, তার জন্য আমার সাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল।’ (দারুকুতনি: ২৬৯৫; বায়হাকি: ৩৮৬২) তিনি আরও বলেন, ‘যে হজ করল, কিন্তু আমার রওজা জিয়ারত করল না; সে আমার প্রতি জুলুম করল।’ (দারুকুতনি, পৃষ্ঠা: ২৭২)

মদিনার আগের নাম ছিল ইয়াসরিব। রাসুলে করিম (সা.)-এর হিজরতের পর এই শহরের নাম হয় মদিনাতুন্নবী বা নবীর শহর।

মসজিদে নববি: নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার মসজিদে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেছে এবং কোনো নামাজ কাজা করেনি, সে নিফাক (মুনাফিকি) আর দোজখের আজাব থেকে মুক্ত।’ (তাবরানি, খণ্ড: ৫, পৃষ্ঠা: ৩২৫, হাদিস: ৫৪৪৪ ও তিরমিজি: ২০০)

‘মসজিদে নববিতে এক রাকাত নামাজের সওয়াব ৫০ হাজার রাকাত নামাজের সমান।’ (ইবনে মাজাহ: ৭৫২)

রওজা শরিফ: মসজিদে নববির সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ স্থান নবীজি (সা.)–এর রওজা মোবারক। হজরত আয়েশা (রা.)–এর হুজরার মধ্যে তাঁর পবিত্র মাজার শরিফ অবস্থিত। এরই পাশে হজরত আবু বকর (রা.) এবং তাঁর পাশে হজরত ওমর (রা.)–এর মাজার। এর পাশে আরেকটি কবরের জায়গা খালি আছে; এখানে হজরত ঈসা (আ.)–এর কবর হবে।

রিয়াজুল জান্নাহ: রওজা শরিফ (যা পূর্বে নবীজি (সা.)–এর ঘর ছিল) এবং এর থেকে পশ্চিম দিকে রাসুলে করিম (সা.)–এর মিম্বার পর্যন্ত স্বল্প পরিসর স্থানটুকুকে রিয়াদুল জান্নাত বা বেহেশতের বাগিচা বলা হয়।

এই স্থানে স্বতন্ত্র (ধূসর সাদাটে) রঙের কার্পেট থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার ঘর ও আমার মিম্বারের মধ্যবর্তী স্থানে বেহেশতের একটি বাগিচা বিদ্যমান।’ (বুখারি: ১১৯৬, মুসলিম: ১৩৯১)

এখানে ছয়টি ওস্তেয়ানা বা স্তম্ভ রয়েছে। প্রতিটি ওস্তেয়ানার একটি করে ইতিহাস রয়েছে।

জান্নাতুল বাকি: মসজিদে নববির পূর্ব দিকে অবস্থিত এই কবরস্থানে অসংখ্য সাহাবা, আউলিয়া, বুজুর্গ ও ধার্মিক মুসলমানের কবর রয়েছে।

ওহুদের ময়দান: পবিত্র মদিনা শহরের ঠিক উত্তর–পূর্ব দিকে ঐতিহাসিক ওহুদ পাহাড় অবস্থিত। মসজিদে নববি থেকে এর দূরত্ব মাত্র পাঁচ কিলোমিটার।

এই রণ প্রান্তরে হজরত হামজা (রা.)–সহ ৭০ জন সাহাবি শহীদ হয়েছিলেন। এই ওহুদ প্রান্তরে বিধর্মীরা নির্মমভাবে রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর দন্ত মোবারক শহীদ করে। এখানে একটি মসজিদ আছে।

মসজিদে কিবলাতাইন: হিজরতের প্রায় দেড় বছর পর এই মসজিদ থেকে তৎকালীন কিবলা বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে জোহরের নামাজ পড়ার সময় নবীজি (সা.)–এর কাছে ওহি নাজিল হয় যে ‘তুমি এখনই এই অবস্থায় কাবার দিকে কিবলা করে নামাজ সমাধা করো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৪৪)

মসজিদে কুবা: এটি ইসলামের প্রথম মসজিদ। এটি রাসুলে করিম (সা.)–এর নিজ হাতে তৈরি। মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববি ও মসজিদুল আকসার পরই মসজিদে কুবার সম্মান। এখানে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়লে এক ওমরাহর সওয়াব হয়।

খন্দক প্রান্তর: খন্দক প্রান্তরের পাশে অতি অল্প পরিসর স্থানের মধ্যে পাশাপাশি ছয়টি মসজিদ আছে। এগুলো হচ্ছে মসজিদে ফাতাহ, মসজিদে সালমান ফারসি (রা.), মসজিদে আবু বকর সিদ্দিক (রা.), মসজিদে ওমর (রা.), মসজিদে আলী (রা.), মসজিদে ফাতিমা (রা.)।

বদর প্রান্তর: এখানে ইসলামের বিজয়সূচক প্রথম যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ১৪ জন সাহাবি এতে শাহাদাতবরণ করেন। এখানে শহীদদের কবর রয়েছে।

মসজিদে ছাকিয়া: বদরের যুদ্ধের সময় রাসুলে করিম (সা.) এই মসজিদে নামাজ পড়েছিলেন এবং মদিনাবাসীর জন্য দোয়া করেছিলেন।

  • মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

  • যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

  • [email protected]