স্বয়ং রাসুল (সা.) তাঁর জানাজা পড়িয়েছিলেন

সাদ ইবনে মুয়াজ (রা.)-এর জন্ম মদিনায়। তাঁর গোত্রের নাম ছিল আউস। তিনি ইসলাম গ্রহণ করার পর তাঁর প্রভাবে তাঁর গোত্রের প্রত্যেক সদস্যই ইসলাম গ্রহণ করে। গোত্রের সদস্যদের কাছে তিনি এতটাই প্রিয় ছিলেন। মক্কা থেকে হিজরত করে আসা মুসলমানদের সেবায় তিনি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন। মুহাজিরদের আতিথেয়তা ও নিরাপত্তা রক্ষায় ছিলেন খুবই আন্তরিক।

রাসুল (সা.)-এর মদিনায় হিজরতের পর বদর যুদ্ধ ছিল মুসলমানদের জন্য বড় একটা ঘটনা। বদর যুদ্ধের প্রস্তুতির সময় রাসুল (সা.)-এর সাহাবি সাদ ইবনে মুয়াজ (রা.) ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমরা আপনার সঙ্গেই আছি। যদি আপনি আমাদের সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন, আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ব। যারা মুসা (আ.)-কে বলেছিল, আপনি আর আপনার রব গিয়ে শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করুন, আমরা এখানে বসে থাকি—আমরা তাদের মতো হব না।’

নৈতিক চরিত্রের বিচারে সাদ ইবনে মুয়াজ (রা.)-এর আসন ছিল অতি উচ্চ। তিনি বলতেন, আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ। কিন্তু তিনটি বিষয়ে আমি সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছি: ১. রাসুল (সা.)-এর মুখ থেকে যে কথা আমি শুনি, তার সবই যে আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে, এ কথা আমি বিশ্বাস করি। ২. নামাজের সময় অন্য কোনো চিন্তা আমার মনে জেগে ওঠে না। ৩. মৃত ব্যক্তির জানাজার কাছে থাকলে মুনকির-নাকির ছাড়া আর কোনো ভাবনা আমার মনে আসে না।

আরও পড়ুন

সাদ (রা.)-এর সঙ্গে রাসুল (সা.) বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ করতেন। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তাঁকে বিচারক নিয়োগ করতেন। একবার তাঁর একটি বিচারের রায় শুনে রাসুল (সা.) বলেছিলেন, সাত আসমানের ওপর থেকে আল্লাহ যে ফয়সালা দিয়েছেন, তুমিও ঠিক একই ফয়সালা দিয়েছ।

খন্দকের যুদ্ধে সাদ (রা.) আহত হন। রাসুল (সা.) নিজ হাতে তাঁর ক্ষতে সেক দিয়ে দিয়েছিলেন। একদিন সাদের ক্ষতটি ফেটে তীব্র বেগে রক্ত ঝরতে থাকে। রাসুল (সা.) দৌড়ে এসে সাদের মাথাটি নিজের কোলে তুলে নেন।

ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, ইয়া মুহাম্মাদ, মৃত ব্যক্তিটি কে, যার জন্য আসমানের সব দরজা খুলে গেছে এবং আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছে?

রাসুল (সা.) দেখতে পেলেন, সাদ ইবনে মুয়াজ ইন্তেকাল করেছেন।

সাদ ইবনে মুয়াজ (রা.) ইন্তেকাল করেন পঞ্চম হিজরিতে। রাসুল (সা.) নিজে তাঁর জানাজা পড়ান। মদিনার জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

সাদের মৃত্যুর পর রাসুল (সা.)-কে এক রাজার উপহার দেওয়া একটি কাপড় দেখে সাহাবিরা অভিভূত হয়ে পড়েছিলেন। রাসুল (সা.) তখন বলেছিলেন, জান্নাতে সাদ ইবনে মুয়াজের রুমালগুলো এর চেয়ে সুন্দর হবে।

আরও পড়ুন